সাদাকাতুল ফিতর রোজার ত্রুটি-বিচ্যুতির কাফফারা

আ ব ম খোরশিদ আলম খান | সোমবার , ২৪ মার্চ, ২০২৫ at ৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ

রোজার দিনগুলোতে নিশ্চয় নানা ভুলত্রুটি হয়ে থাকে। রোজা শেষে ১ শাবান দিনের বেলায় খাবার গ্রহণকে ফিতর বলা হয়। এই ফিতর যেমন রোজাদারের মনে আনন্দের বন্যা বয়ে দেয়, তেমনি রমজানুল মোবারকের দিনগুলোতে যে ত্রুটিবিচ্যুতি হয়েছে সাদাকাতুল ফিতর আদায়ের মাধ্যমে ত্রুটিপূর্ণ রোজাগুলো আল্লাহ পাকের দরবারে কবুল ও গ্রহণযোগ্য হয়। এজন্য প্রাণ খুলে সন্তুষ্ট চিত্তে গরিবদুঃখী ও এতিমকে নির্ধারিত পরিমাণে সাদকা করাকে ‘সাদাকাতুল ফিতর’ বলে।

সিয়াম সাধনা ভোগের নয়, ত্যাগের শিক্ষা দেয়। আর রোজার উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অর্জন করা। নিজেকে সার্বিকভাবে নিয়ন্ত্রণে রেখে সিয়ামের মতো ইবাদত দ্বারা সুশোভিত করা, পরার্থমুখী জীবন গড়া এবং মানুষের সেবার মাধ্যমে মহান আল্লাহর বন্ধুত্বে নিজেকে জড়িয়ে ফেলা। আর সাদাকাতুল ফিতর আদায় দ্বারা আল্লাহ পাকের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং গরিব দুস্থ মানুষের প্রতি দায়িত্ব ও অনুভূতি জাগ্রত হয়। এটাই রোজার গোপনীয় উদ্দেশ্য।

দান সদকাহ ফিতরা জাকাত ইত্যাদি ইসলামের মানবিক নির্দেশনা। এ মাসে সওয়াবের আশায় রোজাদার মানুষকে ইফতার করায়, ধৈর্যের অনুশীলন করে, সহানুভূতি ও সহমর্মিতার চর্চা করে। রোজার মাসে একটি নফল ইবাদত ফরজের সমান সওয়াব এবং একটি ফরজের বদলে ৭০টি ফরজের সওয়াব রোজাদারকে উজ্জীবিত ও উদ্দীপ্ত করে। এজন্য দান সদকাহ, জাকাত ফিতরা এই নেক আমলগুলোকে নাজাতের মাধ্যম মনে করে তাতে সে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। দৈহিক ও মানসিকভাবে পরকালের উন্নততর জীবন লাভের আশায় সে রোজা থাকা অবস্থায় কষ্টকে অম্লান বদনে মেনে নেয়।

ঈদুল ফিতর অফুরন্ত আনন্দখুশির বড় উপলক্ষ। ঈদের আনন্দে গরিব মানুষেরা যাতে সমভাবে অংশ নিতে পারে এজন্য সাদাকাতুল ফিতরের গরিববান্ধব বিধান দিয়েছে ইসলাম। হাদীস শরিফে প্রিয় নবী (.) সাদাকাতুল ফিতর বিষয়ে বলেছেন, ‘হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (.) সাদাকাতুল ফিতরকে ধার্য করেছেন দুটি কারণে। একটি হলো রোজাদারের রোজাকে দোষত্রুটি ও অশ্লীলতা থেকে মুক্ত করা। আর দ্বিতীয়টি হলো গরিব মিসকিনদের আহারের ব্যবস্থা করা। যে ব্যক্তি ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করল তার এই সাদাকাতুল ফিতরটি একটি মকবুল দানে পরিণত হলো। আর যে ব্যক্তি ঈদের নামাজের পরে ফিতর আদায় করল, তার এই সাদাকাতুল ফিতরটি সাধারণ পর্যায়ের দান বলে গণ্য হবে। (সুনানে আবি দাউদ, খণ্ড ২, হাদিস নং ১৬১১)। আলোচ্য হাদিস দ্বারা বোঝা গেল, রোজাকে যেমন দোষত্রুটি মুক্ত করা ওয়াজিব তেমনি ঈদুল ফিতরের আনন্দে গরিবদুঃখীদের শরিক করার জন্য তাদের পাশে দাঁড়ানো ওয়াজিব। একদিকে নিজে লাভবান হওয়া, অন্যদিকে গরিব মিসকিনকে সাহায্য করা সাদাকাতুল ফিতরের বড় উদ্দেশ্য।

ঈদের নামাজ আদায়ের আগেই ফিতরা দেওয়া উত্তম। সুযোগ না হলে নামাজের পরও দেওয়া যায়। তবে এটি অপছন্দনীয়। কারণ গরিব লোকেরা দেরিতে ফিতরা পেলে ঈদের আনন্দে শামিল হতে পারবে না।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন তথা সরকারের তরফ থেকে এবার জনপ্রতি সর্বনিম্ন ফিতরা ঘোষণা করা হয়েছে ১১০ টাকা। সর্বোচ্চ ২৮০৫ টাকা। অন্যদিকে আঞ্জুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের শরিয়াহ বোর্ড এবারের ফিতরা জনপ্রতি ১১৫ টাকা ধার্য করেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধট্রেনে ঈদযাত্রা শুরু হচ্ছে আজ থেকে
পরবর্তী নিবন্ধস্বপ্নের ফেরি সন্দ্বীপ যাবে আজ