সাথী ফসলে কৃষকের সাফল্য, লাভ তিনগুণ

মুহাম্মদ এরশাদ, চন্দনাইশ | বৃহস্পতিবার , ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৭:৩৫ পূর্বাহ্ণ

চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার কৃষকরা এখন জমিতে এক ফসলের চাষ করেন না। একই জমিতে একসাথে সাথী ফসল হিসেবে চাষ করছেন ৩ থেকে ৪ রকমের সবজি। এক সারিতে মুলা, টমেটো ও ধনেপাতা। আবার অন্য এক সারিতে বাঁধাকপি, কাঁচা মরিচ ও বরবটি। এভাবেই কৃষকরা এখন সাথী ফসল হিসেবে চাষাবাদ শুরু করেছেন জমিতে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক এই চাষাবাদে সফলও হচ্ছেন তারা। লাভও হচ্ছে প্রায় দুই থেকে তিনগুণ। প্রায় সকল কৃষকই এখন সাথী ফসল হিসেবে একই জমিতে মুলা, টমেটো, ধনেপাতা, মিষ্টি লাউ, ঢেড়শ, বেগুন, মুলা, আলু, ফেলন, কাঁচা মরিচ, বরবটি, ফুলকপি ও বাঁধাকপিসহ বিভিন্ন সবজির চাষ করছেন।

কৃষক সাখাওয়াত হোসেন জানান, একই জমিতে সাথী ফসল হিসেবে বিভিন্ন রকমের সবজি চাষে কোন ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় না। এক ফসলের জন্য যে পরিমাণ কীটনাশক ও সার প্রয়োগ করতে হয়; তিন ফসলের জন্যও একই রকম সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হচ্ছে। এতে সময় ও অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি লাভ হচ্ছে প্রায় দুই থেকে তিনগুণ। চন্দনাইশের শঙ্খসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকায় সাথী ফসল চাষ করে নবদিগন্তের দ্বার উম্মোচন করেছেন শত শত কৃষক। স্বাধীনতা পর থেকে এ অঞ্চলের কৃষকরা জমিতে এক ফসলেই সীমাবদ্ধ ছিলেন। আধুনিকতার এ যুগে কৃষকরা সে পুরোনো ধ্যানধারণা পাল্টে একই জমিতে একই সাথে চাষাবাদ করছেন ৩ থেকে ৪ প্রকারের সবজি।

এখানকার কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, সাথী ফসলে তারা ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে নিয়েছেন। তারা জানান, সাথী ফসলের সুবিধা হলো একটাতে লোকসান হলে অপরটাতে তারা সে লোকসান পুঁষিয়ে নিতে পারেন।

সবজি ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাতি পাওয়া শঙ্খচরে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকদের ব্যস্ততা। চারিদিকে সবুজ আর সবুজ। কৃষকদের চাষাবাদ করা সাথী ফসলের ক্ষেত চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। একই জমিতে একসাথে বেড়ে উঠছে মুলা, টমেটো ও ধনেপাতা। আবার ফুলকপির সাথেও বেড়ে উঠছে কাঁচা মরিচ ও মিষ্টি লাউ। বেগুনের সাথে বেড়ে উঠছে ধনেপাতা ও বরবটি। সাতকানিয়ার উত্তর কালিয়াইশ গ্রামের কৃষক মো. হাসান জানান, তিনিও একই জমিতে তিন ধরনের সবজি চাষ করেছেন। এরমধ্যে ধনেপাতা তুলে বিক্রি করেছেন কয়েকবার। ধনেপাতা বিক্রির পরপর মুলা বিক্রি শুরু হবে। তৃতীয় ধাপে টমেটো ধরা শুরু করবে। ইতিমধ্যে তিনি একই ক্ষেতে ঝিঙা এবং মিষ্টি লাউ ক্ষেত চাষও শুরু করেছেন। এভাবে বেশ কয়েক বছর ধরে চাষাবাদ করে আসছেন। এতে তার বীজ ছাড়া বাড়তি খরচের প্রয়োজন হয় না। একই জমিতে একই সার প্রয়োগে ৩ থেকে ৪ রকমের ফসল উৎপাদন হচ্ছে।

হাশিমপুরি ইউনিয়নের কৃষক বদিউল আলম জানান, আলু ক্ষেতের জন্য জমি প্রস্তুত করে আলুর পাশাপাশি একই জমিতে কাঁচা মরিচ ও ফেলনের বীজ রোপন করেছেন। আলু তোলার পরপর ফেলন ও কাঁচা মরিচ গাছে ফলন আসবে।

চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আজাদ হোসাইন জানান, চলতি রবি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন রকমের সবজির আবাদ করেছেন কৃষকরা। প্রায় সকল কৃষকই এখন এক ফসলি চাষাবাদ থেকে সরে এসে সাথী ফসল হিসেবে ৩ থেকে ৪ রকমের সবজি চাষাবাদে ঝুঁকে পড়েছেন। এতে তারা সফলও হচ্ছেন। সাথী ফসল চাষাবাদে কৃষকরা যাতে কোন ধরনের অসুবিধায় না পড়েন, তার জন্য মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ সার ও কীটনাশক প্রয়োগের নিয়মকানুনসহ নিয়মিত নানা পরামর্শ প্রদান করে যাচ্ছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিশ্বে হালাল পণ্যের বিশাল বাজার আছে সম্ভাবনা, চাই উদ্যোগ
পরবর্তী নিবন্ধপ্রবাসীর কাছে চাঁদা না পেয়ে কেটে নিল আড়াইশ গাছ