সাত স্থানে ওয়াসার পাইপ ফেটে বড় গর্ত

পোর্ট কানেকটিং রোডের দুর্ভোগ সহসা দূর হচ্ছে না

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২১ এপ্রিল, ২০২১ at ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

পোর্ট কানেকটিং রোডকে ঘিরে নগরবাসীর দুর্ভোগ-দুর্দশা সহজে দূর হচ্ছে না। ২০১৭ সালে শুরু হওয়া সড়কটির উন্নয়ন কাজ এখনো সম্পূর্ণ শেষ হয়নি। যে অংশে শেষ হয়েছে সেখানে নতুন করে ওয়াসার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গত কয়েকদিনে সড়কটির বিভিন্ন স্পটে ফেটে গেছে ওয়াসার ১২ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ লাইন। পাইপের অবস্থান সড়কের উপর স্তর থেকে আট ফুট গভীরে। সড়কের বড়পোল থেকে নয়াবাজার পর্যন্ত অংশে অন্তত সাতটি স্থানে ফেটে যাওয়া স্থানে বড় ধরনের গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। ওয়াসার প্রকৌশলীরা বলছেন, পানি সাপ্লাইয়ে প্রেসার বৃদ্ধি করায় পুরনো পাইপ ফেটে গেছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত ১০ থেকে ১২ দিন আগে সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি বের হতে দেখা যায়। রাস্তা ফুঁড়ে বের হওয়া পানির গতি তখন কম ছিল। তবে গত দুদিন ধরে গতি বেড়ে গেছে। ফলে সেখানে বড় আকৃতির গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। বিরতিহীনভাবে পানি বের হতে থাকায় চলাচলে সমস্যায় পড়ছেন পথচারীরা। অবশ্য ফেটে যাওয়া স্থানের চারপাশে মাটি দিয়ে ঘেরাও করে রাখা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চসিকের এক প্রকৌশলী আজাদীকে বলেন, ফেটে যাওয়া পাইপ লাইন ওয়াসা মেরামত করে দেবে। কিন্তু এতে তো সড়কের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে গেছে। নতুন করে ফেটে যাওয়া অংশে মেরামত করতে গেলেও ফিনিশিংটা ভালোভাবে হবে না।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম আজাদীকে বলেন, সাত জায়গায় পাইপ ফেটে গেছে। আনন্দিপুর, বসুন্ধরা আবাসিক, ধোপাপাড়া, নয়াবাজার, গোল্ডেন আবাসিক এলাকাসহ ওই দিকের আশেপাশে পানি সরবরাহ করতে গেলে আমাদের প্রেসার বাড়াতে হয়। প্রেসার বাড়ানোর ফলে পাইপ ফেটে গেছে। ইতোমধ্যে পাঁচটি জায়গায় আমরা রিপেয়ার করেছি। বাকি দুইটাও করে ফেলব।
এ প্রকৌশলী বলেন, পাইপগুলো আমাদের মেইন লাইন থেকে দেড় ফুট উপরে। ফলে মেইন লাইনে প্রেসার না বাড়ালে পানি যায় না। আবার প্রেসার বাড়ালে ফেটে যায়।
পাইপ লাইন কবে ফেটে গেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিন-চারটা ফেটে গেছে কয়েকদিন আগে। সেগুলো মেরামত করে আসছি। বাকিগুলো আজ ভোরে (গতকাল) ফেটেছে। তিনি বলেন, সেখানে আমরা নতুন পাইপ বসিয়েছি। কিন্তু সেগুলো কমিশনিং হয়নি। হবে ২০২২ সালে। আমরা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টও চালু করব ২০২২ সালে। ওদিকে পানির সমস্যা থাকায় কোভিডের মধ্যেও রাত-দিন কাজ করে পানি দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু পুরনো পাইপে লিকেজ দেখা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, রোজা হওয়ায় মেরামতের জন্য পানি সরবরাহ বন্ধ করিনি। রাতে কাজ করতে সমস্যা হয়। সেখানে লরি দাঁড়িয়ে থাকে। তারপরও ব্যারিকেড দিয়ে করে যাচ্ছি।
চট্টগ্রাম সিটি কর্র্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমেদ আজাদীকে বলেন, যেখানে পাইপ ফেটে গেছে তা ওয়াসা ঠিক করে দেবে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক আমরা ঠিক করতে পারব।
সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, পোর্ট কানেকটিং রোডের উন্নয়ন কাজের জন্য চারটি প্যাকেজে নিয়োগ দেওয়া হয় ঠিকাদার। এর মধ্যে দুই নম্বর প্যাকেজে বড়পোল থেকে তাশফিয়া আনন্দিপুর গেট পর্যন্ত এক দশমিক ৬৭৫ কিলোমিটার সড়কের জন্য ৫০ কোটি ৫৮ লাখ ৬৩ হাজার ৩৩৯ টাকায় মেসার্স রানা বিল্ডার্সকে ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর কার্যাদেশ দেওয়া হয়। একই দিন তিন নম্বর প্যাকেজে নিমতলা বিমান চত্বর থেকে বড়পোল ব্রিজ পর্যন্ত এক দশমিক ৬৮২ কিলোমিটার সড়কের জন্য ৫০ কোটি ৮২ লাখ ৭০ হাজার ৩৩৮ টাকায় মেসার্স রানা বিল্ডার্স-সালেহ আহমদকে (জেভি) কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। মেসার্স রানা বিল্ডার্স ৬৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং মেসার্স রানা বিল্ডার্স-সালেহ আহমদ (জেভি) ৭০ শতাংশ কাজ শেষ করেছে। ২০২০ সালের ১ অক্টোবর থেকে কাজ বন্ধ রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটি। কাজ সম্পন্ন করতে তাদের বারবার তাগাদা দেয় চসিক। সর্বশেষ গত মার্চ মাসে তাদের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়।
এদিকে অক্সিজেন-হাটহাজারী সড়কে ওয়াসার পাইপ লাইন ফেটে গেছে। সড়কটির জেলা পরিষদ আবাসিক এলাকার সামনে গত রাতে পাইপ লাইন ফেটে পুরো এলাকা পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধব্যক্তিগত গুদামে বিপুল সরকারি চাল
পরবর্তী নিবন্ধঅতি সংক্রমিত এলাকায় ছিল না বাড়তি সতর্কতা