নগরীতে এমএলএম ব্যবসার আদলে অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে গ্রাহকদের জমাকৃত ৩৫ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও এমডির বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে দায়ের হওয়া মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম গত সাত বছর ধরে ঝুলে রয়েছে। বহুল আলোচিত এই মামলাটির বিচার কার্যক্রম স্থগিত থাকায় অন্তত ১২ হাজার গ্রাহকের জমাকৃত টাকা আদায় নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
২০১১ সালে নগরীর কোতোয়ালী থানায় দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎকালীন সহকারী পরিচালক মাহবুবুল আলম বাদী হয়ে মা পলিকম লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সাদিয়া রহমান ও একই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে থাকা তার স্বামী আব্দুল আজিমের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং ্আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। এই দম্পতি রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা হাজী পাড়ার বাসিন্দা। এব্যাপারে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহামুদুল হক গতকাল আজাদীকে বলেন, ২০১৩ সালে দুদক এই মামলাটি তদন্তপূর্বক আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। কিন্তু একইবছর আসামিপক্ষের করা আবেদনে আপীল বিভাগের স্থগিতাদেশের কারণে বর্তমানে মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানান, আসামিরা লিভ টু আপিলের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় মামলার কার্যক্রম স্থগিত রেখেছেন। এতে করে বিচারিক কার্যক্রম এগিয়ে নেয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে বলে জানান দুদুকের রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী। দুদকের চার্জশিটে বলা হয়, ২০১০ সালের ২৬ আগস্ট কোতোয়ালীর মোমিন রোডের একটি ভবনে মা পলিকম লিমিটেড মাল্টিলেভেল ব্যবসার আদলে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসা কার্যক্রম শুরু করে। এসময় প্রতিষ্ঠানটি ‘ই-বুলেটিন’ ও ‘ই-জাইন’ নামে ব্যবসায় কথিত বিনিয়োগে ২৭ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৭৮ হাজার টাকা মুনাফা পাওয়ার লোভ দেখিয়ে সদস্যপদ সংগ্রহ করেন। অতি অল্প সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির সদস্য হয় ১১ হাজার ৯৯৯ জন ।
দুদক বলেছে, ২০১০ সালে ২৮ আগস্ট থেকে শুরু করে ২০১১ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এসব সদস্য আসামিদের বিভিন্ন হিসাবে ৩৪ কোটি ৭৮ লাখ ৬৮ হাজার ৫০৮ টাকা জমা করে। এরমধ্যে ১৫ কোটি ৫২ লাখ ৫৭ হাজার ৪৩২ টাকা আসামিরা নিজেদের নামে এফডিআর, সঞ্চয়ীসহ বিভিন্ন হিসাবে টাকা সরিয়ে ফেলেন। এরমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির এমডি আব্দুল আজিমের নামে ৮ কোটি টাকা ও তার স্ত্রী সাদিয়া রহমানের নামে ১ কোটি টাকার এফডিআর করা হয়। বাকী টাকা ব্যক্তিগত ও বিভিন্ন খাতে খরচ করা হয়।
এরমধ্যে মা হাইব্রিড কৃষি খামার ও মা ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরিজম নামে ভিন্ন দুটি প্রতিষ্ঠানের হিসাবে কয়েক কোটি টাকা লেনদেন করা হয়।
ইসলামী ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, ব্রাক ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় ১৪ টি হিসাবে এসব টাকা লেনদেন করা হয়। এছাড়া এসময় বিদেশ থেকে চট্টগ্রামে একটি ব্যাংকের মধ্যে ৫০ হাজার ডলার লেনদেন হয়েছিল বলে দুদকের তদন্তে উঠে আসে।
স্পিক এশিয়া অনলাইন (বিডি) নামে সিঙ্গাপুরভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট হিসেবে মা পলিকম লিমিটেড সাধারণ মানুষের সাথে এই ধরনের প্রতারণা করে আসছিল বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।