চট্টগ্রাম কাস্টমসে সাতবার নিলামে তুলেও বিক্রি না হওয়া সেই পুরনো ২ জাপানি মাইক্রোবাসসহ ৭২ লট পণ্য নিলামে তোলা হচ্ছে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি। নিলাম শাখার কর্মকর্তারা জানান, নিলাম প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আজ (গতকাল) থেকে নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করে আগামী ৩০ জানুযারি পর্যন্ত ক্যাটালগ ও দরপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন বিডাররা (নিলামে অংশগ্রহণকারী)।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, জাপানের তৈরি ১৯৯৮ সালের টয়োটা ব্র্যান্ডের নেভি কালারের মাইক্রোবাসের দাম ধরা হয়েছে ২৩ লাখ ৭৮ হাজার ৭৬২ টাকা। ইতোমধ্যে গাড়িটি সাতবার নিলামে তোলা হয়। এছাড়া জাপানের তৈরি ২০০৩ সালের নিশান ব্র্যান্ডের সাদা রঙের মাইক্রোবাসের দাম ধরা হয়েছে ২১ লাখ ৩৩ হাজার ৮৫৬ টাকা। এর আগে নিশান মাইক্রোটিও সাতবার নিলামে তোলা হয়।
কাস্টমসের সরবরাহকৃত ক্যাটালগে গাড়িটি বন্দরের অকশন শেডে কিছুটা ভাঙা অবস্থায় রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। গাড়ি ছাড়াও নিলামে তোলা হচ্ছে ৪ লাখ ৬০ হাজার ৮০০ কেজি (প্রায় ৪৬১ টন) চীনা রসুন, ২৮ টন মহিষের মাংস। এছাড়া রয়েছে ময়দা, সফট ড্রিংকস, গ্রোসারি পণ্য, কপার গিয়ার, ফসফরিক এসিড, বাটন, পিভিসি কম্পাউন্ড, ইসিজি ইনকিউবেটর, ফায়ার ডোর, স্যান্ডেল, গার্মেন্টস ফেব্রিক্স, কম্বলের কাপড়, ছাপা কারখানার কালি, সয়েল স্টাবিলাইজার, সেফটি গিয়ার ফ্রেম, ফুড স্টাফ, গ্রিমিং মেশিন, ওয়্যার রোপ, আসবাবপত্র, সালফিউরিক এসিড, টেক্সটাইল কেমিক্যাল, পেপার ট্যাগ, ল্যাবরেটরি সাপ্লাইস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ড্রাগন ফ্রুট, সেলফ অ্যাডহেসিভ টেপ, সিরামিক ওয়াল, চশমা, অ্যাপ্রন, পলিব্যাগ, জুতা, তেঁতুল বিচি, ডুপ্লেক্স পেপার, তৈরি পোশাক, ওয়াটার ফিল্টার, শার্ট ফেব্রিক্স ও এয়ারকন্ডিশনার মেশিন।
নিলাম শাখার কর্মকর্তারা জানান, বিডাররা অফিস চলাকালীন চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম শাখা ও নিলাম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স কে এম কর্পোরেশনের মাঝিরঘাটের অফিস থেকে ক্যাটালগ ও দরপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন। এছাড়া ঢাকার কাকরাইলে অবস্থিত শুল্ক আবগারি ও ভ্যাট কমিশনারেটের যুগ্ম–কমিশনার (সদর) কার্যালয় থেকেও মূল্য পরিশোধ করে ক্যাটালগ ও দরপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন। নিলামের দরপত্র আগামী ৩০ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি বেলা ২টার মধ্যে জমা দেওয়া যাবে চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তার (প্রশাসন) কার্যালয়ে, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ও ঢাকার কাকরাইলে অবস্থিত শুল্ক আবগারি ও ভ্যাট কমিশনারেটের যুগ্ম কমিশনারের (সদর) কার্যালয়ে। ১ ফেব্রুয়ারি বেলা আড়াইটায় বিডারদের উপস্থিতিতে দরপত্রের বাক্স খোলা হবে। নিলাম সম্পন্ন হওয়ার পর সর্বোচ্চ দরদাতাদের অনূকুলে পণ্য বিক্রির অনুমোদন দেবেন নিলাম কমিটির সদস্যরা।
নিলামে অংশগ্রহণ করতে প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে দরপত্রের সাথে হালনাগাদ করা ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন সনদ, টিআইএন সার্টিফিকেটের কপি দাখিল করতে হবে। ব্যক্তির ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি ও হালনাগাদ টিআইএন সার্টিফিকেটের কপি দাখিল করতে হবে। এছাড়া ক্যাটালগে উল্লেখিত শর্ত পূরণ করে নিলামে অংশ নেওয়া যাবে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ–কমিশনার আলী রেজা হায়দার আজাদীকে বলেন, নিলাম আমাদের রুটিন কার্যক্রমের একটি অংশ। এবারের নিলামে ২টি জাপানি গাড়িসহ ৭২ লট বিভিন্ন ধরনের পণ্য তোলা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, আমদানিকৃত পণ্য জাহাজ থেকে বন্দর ইয়ার্ডে নামার ৩০ দিনের মধ্যে সরবরাহ নিতে হয়। এই সময়ের মধ্যে কোনো আমদানিকারক পণ্য সরবরাহ না নিলে তাকে নোটিশ দেয় কাস্টমস। নোটিশ দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহ না নিলে তা নিলামে তুলতে পারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এছাড়া মিথ্যা ঘোষণায় জব্দ পণ্যও নিলামে তোলা যায়। মোট ৪৫ দিনের মধ্যে নিলামে তোলার এই নিয়ম দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর করতে পারেনি বন্দর ও কাস্টমস। এতে করে বন্দরের ইয়ার্ডে এসব কন্টেনার পড়ে থাকে। আমদানি পণ্য যথাসময়ে খালাস না নেওয়ায় বন্দরে প্রায়ই কন্টেনার জট লাগে। দিনের পর দিন কন্টেনার পড়ে থাকলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো চার্জ পায় না।










