সাতকানিয়ায় শয়নকক্ষে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের রক্তাক্ত লাশ

সাতকানিয়া প্রতিনিধি | সোমবার , ১ মার্চ, ২০২১ at ১২:৩৯ অপরাহ্ণ

সাতকানিয়ায় নিজ বসতঘরের শয়ন কক্ষ থেকে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তার নাম আবদুল হক মিঞা (৮৫)। আজ সোমবার (১ মার্চ) সকালে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
তিনি সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও কেঁওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।
খবর পেয়ে সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকারিয়া রহমান জিকু, সাতকানিয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল বশিরুল ইসলাম ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এ ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত আবদুল হক মিঞার বাড়ির কর্মচারী জমির উদ্দিনকে থানায় ডেকে নিয়েছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, কেঁওচিয়া ইউনিয়নের জনার কেঁওচিয়া চেয়ারম্যান পাড়ার উকিল বাড়ির মৃত কাছিম আলী উকিলের ছেলে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হক মিঞা রবিবার রাতে খাবার খেয়ে অন্যান্য দিনের মতো নিজের শয়ন কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন। আজ সকাল নয়টার পরও তিনি ঘুম থেকে না উঠায় সকালে আসা বাড়ির গৃহপরিচারিকা তাকে ডাকতে গেলে শয়ন কক্ষে বিছানার উপর তার রক্তাক্ত লাশ দেখতে পায়।
পরে খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।
নিহত চেয়ারম্যানের বাড়ির গৃহপরিচারিকা বুলু আকতার বলেন, “আমি সকালে এসে অন্যান্য দিনের মতো ঘরের পেছনের দরজা খোলা অবস্থায় পাই। শুরুতে ঘরের হাড়ি-পাতিল ধুয়ে আনার পর নাস্তা তৈরি ও ভাত রান্না করি। অন্যান্য দিন আমি আসার আগেই চেয়ারম্যান সাহেব ঘুম থেকে উঠে যেতেন। আজ সকাল নয়টার পরও তিনি ঘুম থেকে জেগে না ওঠায় আমি তার শয়ন কক্ষে যাই। বিদ্যুৎ না থাকায় ঐ কক্ষে কিছু দেখা যাচ্ছিল না। ফলে টর্চলাইট নিয়ে ডাকতে গিয়ে দেখি চেয়ারম্যান সাহেব বিছানার উপর রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। এসময় তার মুখ ও বুকের উপর বালিশ ছিল। আর খাটের পাশে কাপড় দিয়ে চোখ-মুখ এবং পা বাঁধা অবস্থায় বাড়ির কর্মচারী জমিরকে দেখতে পাই। পরে বিষয়টি আমি সবাইকে জানাই।”
নিহতের কক্ষে চোখ-মুখ ও পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার হওয়া বাড়ির কর্মচারী জমির উদ্দিন বলেন, “রবিবার রাতে ভাত খেয়ে চেয়ারম্যান নিজের কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন। আমি পাশের কক্ষে ঘুমাই। গভীর রাতে মুখোশধারী ৪-৫ জনের দল এসে আমাকে ধরে চেয়ারম্যান সাহেবের কক্ষে নিয়ে গিয়ে মারধর শুরু করে। তখন চেয়ারম্যান সাহেব আমাকে মারধর করতে নিষেধ করেন। তখন তারা আমার চোখ-মুখ এবং পা বেঁধে ফেলে রেখে চেয়ারম্যানকে মারধর শুরু করে। চোখ বাঁধা থাকায় চেয়ারম্যানকে কী দিয়ে এবং কীভাবে হত্যা করেছে আমি বুঝতে পারিনি।”
দরজা-জানালা না ভেঙ্গে বাইরের লোক কীভাবে ঘরে প্রবেশ করলো জানতে চাইলে জমির কোনো ধরনের সদুত্তর দিতে পারেননি।
হাত খোলা থাকার পরও চোখ-মুখ এবং পায়ে থাকা কাপেড়ের বাঁধন খুলল না কেন জানতে চাইলে জমির বলেন, “আমি ভয়ের মধ্যে ছিলাম।”
নিহত আবদুল হক মিঞার ছেলে মো. মাঈনউদ্দিন মনু বলেন, “ঘরে আমার বাবা এবং কর্মচারী জমির ছিল। রবিবার রাতে আমার বাবা অন্যান্য দিনের মতো খাবার সেরে নিজের কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন। আজ সকালে এলাকার লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারলাম কে বা কারা আমার বাবাকে হত্যা করেছে। এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আমি চাই প্রশাসন সঠিক তদন্তের মাধ্যমে আমার বাবার হত্যাকারীকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনুক।”
সাতকানিয়া থানার ওসি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, “খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছি। নিহতের বাম কানের উপরে মাথায়, বাম চোখ এবং বাম হাতে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এগুলো ছুরিকাঘাত হতে পারে। তবে ছুরিকাঘাতে মারা গেছেন নাকি অন্য কোনোভাবে হত্যা করা হয়েছে তা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার আগে বলা মুশকিল। নিহতের মুখে এবং বুকে বালিশ ছিল বলে জানিয়েছে বাড়ির গৃহপরিচারিকা। এজন্য আমরা বালিশ উদ্ধার করেছি।”
ওসি আরো বলেন, “ঘরের দরজা-জানালা সব ঠিক-ঠাক আছে। ফলে বাইরের কোনো লোক এসে হত্যা করেছে বলে মনে হচ্ছে না। ঘরে যারা ছিল তারাই ঘটনার সাথে জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। আপাতত আমরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঐ বাড়ির কর্মচারী জমির উদ্দিনকে থানায় ডেকে এনেছি।”
সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও কেঁওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হক মিঞা নিহত হওয়ার ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদ এমপি, সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও রূপালী ব্যাংকের সাবেক পরিচালক সাংবাদিক আবু সুফিয়ান, সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেব সিআইপি, সাধারন সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরী, সাতকানিয়া পৌরসভার মেয়র ও চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোহাম্মদ জোবায়ের, সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ শাহজাহান, উত্তর সাতকানিয়া যুবলীগের সাধারন সম্পাদক ওচমান আলী, কেঁওচিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাস্টার মোহাম্মদ ইউনুচ ও সাধারণ সম্পাদক রিপন কান্তি দাশ সুজন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম কলেজ প্রাক্তন রোভার স্কাউট সংসদের পুনর্মিলনী ৫ মার্চ
পরবর্তী নিবন্ধস্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ে বাম ছাত্রজোটের মিছিল