সাতকানিয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে দুই দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে গুলিবিদ্ধসহ ২০ জন আহত হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার(২৭ জানুয়ারি) দুপুরে উপজেলার খাগরিয়া ইউনিয়নের গণি পাড়া ও ভোর বাজার এলাকায় আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আখতার হোসেন ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মুহাম্মদ জসীম উদ্দিন এবং তাদের নেতা-কর্মীদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর পুরো এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে।
সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শিবলী নোমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এলাকাবাসী জানান, খাগরিয়া ইউনিয়নের নতুন চর খাগরিয়া এলাকায় স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মুহাম্মদ জসীম উদ্দিনের নির্বাচনী কার্যালয় করা না করাকে কেন্দ্র করে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আখতার হোসেনের কর্মী-সমর্থকদের সাথে কথা কাটাকাটি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এদিকে, আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী জসীম উদ্দিন লোকজন সাথে নিয়ে মিছিল সহকারে খাগরিয়ার গণি পাড়া এলাকায় যান। তাদের মিছিলটি আওয়ামী লীগের প্রার্থী আখতার হোসেনের বাড়ির কাছাকাছি গিয়ে আওয়ামী লীগ ও নৌকা বিরোধী নানা স্লোগান দিতে থাকে।
এক পর্যায়ে মিছিল থেকে আখতার হোসেনের বাড়ি লক্ষ্য করে ইটের টুকরো ছুঁড়ে মারা হয়। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
ঘটনার এক পর্যায়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী জসীম উদ্দিন কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে গণি পাড়া থেকে ভোর বাজারের দিকে চলে আসেন। ভোর বাজার এলাকায় এসে নৌকার প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে ভাঙচুর চালান তারা।
তখন উভয় পক্ষের মধ্যে পুনরায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। দুই পক্ষের মধ্যে অন্তত অর্ধশতাধিক রাউন্ড গুলি বিনিময় হয়।
এসময় গুলিবিদ্ধসহ উভয় পক্ষের ২০ জন আহত হয়েছে। আহতরা হলো মো. শাহ আলম (৫৫), আহমদ হোসেন (৫০), মো. মারুফ (৯), আবু বক্কর (৩২) মো. মহিবুল্লাহ (২৯), ইসলাম খাতুন (৬০), রফিক আহমদ (৫২), ফারুখ আহমদ (৬১), মুন্সি মিয়া (৫৫), নুরুল আলম (৩০), আবছার উদ্দিন (৪৫), মো. সায়েদ (২৫), আবু সুফিয়ান (২১), মনির আহমদ (৬২), মো. মহসিন (৩০), জাসেদুল ইসলাম (২৮), মো. হাসান (৩০), রাশেদুল ইসলাম (৩৫), নুর হোসেন (৪৯) ও রাশেদুল ইসলাম (৩০)।
আহতদেরকে দোহাজারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। আহতদের মধ্যে শাহ আলম, আহমদ হোসেন, মারুফ, বক্কর, মহিবুল্লাহ, ইসলাম খাতুন, রফিক আহমদ, নুরুল আলম, ফারুখ আহমদ, জাসেদুল, মুন্সি মিয়া ও আবছারকে দোহাজারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ(চমেক) হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
দোহাজারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. মো. ইসহাক বলেন, “খাগরিয়ার ঘটনায় আহত হয়ে ১০-১২ জন রোগী হাসপাতালে এসেছিল। তাদের মধ্যে কয়েকজন ছাড়া সবাই গুলিবিদ্ধ। তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লেগেছে। গুলিবিদ্ধ সবাইকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করেছি।”
ঘটনার বিষয়ে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মুহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, “নতুন চর খাগরিয়া এলাকায় নির্বাচনী কার্যালয় করতে বাধা দেয়ার ঘটনায় ওই দিন রাতেই আমি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। আজ আমি কর্মী-সমর্থকদের সাথে নিয়ে মাইজ পাড়ায় গণসংযোগ শেষ করে গণি পাড়ায় যাই। আমরা মিছিল সহকারে চলে যাচ্ছিলাম। তখন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আখতার হোসেনের লোকজন আমাদের ওপর হামলা এবং গুলি ছোড়ে। পরে সেখান থেকে লোকজনকে নিয়ে ভোর বাজারের দিকে চলে আসি। ভোর বাজার এলাকায় তারা পুনরায় আমাদের ওপর হামলা চালায় এবং আমাদের অফিস ভাঙচুর করে। তাদের দুই দফা হামলায় আমাদের ১২-১৪ জন নেতা-কর্মী গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়।”
আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আখতার হোসেন বলেন, “স্বতন্ত্র প্রার্থী জসীম চিহ্নিত কিছু চোর, ডাকাত ও সন্ত্রাসীকে সাথে নিয়ে আমার বাড়ির সামনে গিয়ে গালিগালাজ করে এবং প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা আমার বাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ও গুলি ছোড়ে। পরে স্থানীয় লোকজনের প্রতিরোধের মুখে তারা ভোর বাজারের দিকে চলে যায়। সেখানে গিয়ে আমার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায় এবং আমার কর্মী-সমর্থকদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে আমার বেশ কয়েকজন কর্মী-সমর্থক গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী জসীম বিনা কারণে এলাকার শান্ত পরিবেশকে বিনষ্ট করছে।”
সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শিবলী নোমান বলেন, “দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের কয়েকজন কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। আসলে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে কি না, ঘটে থাকলে কারা গুলি করেছে সেই বিষয়গুলো আমরা তদন্ত করে দেখছি।”