কনকনে শীত, কাদামাখা জমি আর ঠান্ডা পানির পরোয়া না করে আগাম বোরো চাষে মাঠে নেমে পড়েছেন সাতকানিয়ার কৃষকরা। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানিযুক্ত জমিতে কাজ করে বোরো রোপণে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা। বিশেষ করে যেসব জমি আমন মৌসুমে জলবদ্ধতার কারণে অনাবাদি পড়ে থাকে, সেসব জমিতেই মূলত আগাম বোরো রোপণ শুরু করেছেন কৃষকরা। কৃষি বিভাগ বলছে, চলতি মৌসুমে আমন কিছুটা আগাম ঘরে ওঠায় কৃষকরাও বোরো চাষের প্রস্তুতি আগেভাগেই সম্পন্ন করেছেন। যদিও এখনো অনেক কৃষক বীজতলা তৈরির কাজে ব্যস্ত রয়েছেন।
সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৭ হাজার ৩৪৩ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে ৩৬৫ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে ৪ হাজার ৫৮০ জন কৃষককে ২ কেজি করে হাইব্রিড জাতের ধানের বীজ বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ৩০০ জন কৃষককে ৫ কেজি করে উফশী জাতের ধানের বীজ ও ২০ কেজি করে সার প্রদান করা হয়েছে। কিছু এলাকায় এখনো বীজতলা তৈরির কাজ চলমান থাকলেও অনেক এলাকায় কৃষকরা ইতোমধ্যে আগাম বোরো রোপণ শুরু করে দিয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে উপজেলার বাজালিয়া ইউনিয়নের মাহালিয়া, কাটাখালীর কূল ও পুরানগড়ের চক্কাকোদলা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা বোরো চাষে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। বোরো আবাদকে কেন্দ্র করে কাটাখালী খালের মাহালিয়া থেকে চক্কাকোদলা পর্যন্ত এলাকায় খালের দুই পাড়ে অন্তত ৩০টি সেচ পাম্প চালু রয়েছে। এসব সেচ পাম্পের মাধ্যমে জমিতে সেচ দেওয়া হচ্ছে। বিল এলাকায় কেউ ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ দিচ্ছেন, কেউ আইল বাঁধছেন, কেউ মই টেনে জমি সমান করছেন, আবার কেউ জমির শুকনো ও পুরোনো আগাছা পরিষ্কার করছেন। কেউ কেউ বীজতলা থেকে চারা উত্তোলন করছেন, আবার কেউ প্রস্তুত জমিতে সার প্রয়োগ করছেন। বাজালিয়া ও পুরানগড় ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আগাম বোরো রোপণ শুরু হয়েছে।
পূর্ব বাজালিয়া দক্ষিণ পাড়ার কৃষক আইয়ুব আলী বলেন, “প্রতি কানি ৬ হাজার টাকা করে খাজনা দিয়ে মোট ৬ কানি জমি নিয়েছি। ইতোমধ্যে সব জমিতে চারা রোপণ শেষ করেছি। মাহালিয়া বিলের বেশির ভাগ জমি বর্ষা মৌসুমে জলবদ্ধতার কারণে অনাবাদি থাকে। তাই আমরা আগেভাগে বোরোর বীজতলা তৈরি করি এবং অন্যান্য এলাকার তুলনায় অনেক আগে রোপণ শেষ করি। আগাম রোপণ করলে আগাম কাটাও সম্ভব হয়। আরেকটি সুবিধা হলো, শ্রমিকের মূল্য তুলনামূলক কম থাকে। সব জায়গায় একসঙ্গে বোরো রোপণ শুরু হলে শ্রমিকের সংকট ও মজুরি বেড়ে যায়।
সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, বাজালিয়া, পুরানগড়, কেঁওচিয়া, ঢেমশা, সাতকানিয়া পৌরসভা ও সোনাকানিয়ার কিছু এলাকায় কৃষকরা আগাম বোরো রোপণ শুরু করেছেন। বিগত বর্ষা মৌসুমে সাতকানিয়ায় বন্যা না হওয়ায় আমনের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। ফলে অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা আগাম আমন কাটা সম্ভব হয়েছে এবং জমি দ্রুত খালি হয়েছে। এই সুযোগে কৃষকরা আগাম বোরোর বীজতলা তৈরি করে নিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, চলতি মৌসুমে ৩৬৫ হেক্টর জমিতে বোরো বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে প্রায় ৩২৫ হেক্টর জমিতে ইতোমধ্যে বীজতলা তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। কিছু এলাকায় এখনো কাজ চলমান রয়েছে। আগাম তৈরি করা বীজতলার চারাগুলো এখন রোপণের উপযোগী হয়ে গেছে। অনেক কৃষক ইতোমধ্যে রোপণ শুরু করেছেন। পুরোপুরি বোরো রোপণ শুরু হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। তবে জানুয়ারির মধ্যেই অধিকাংশ জমিতে বোরো রোপণ শেষ হবে। আলু ও সরিষা উত্তোলনের পর যেসব জমিতে বোরো চারা রোপণ করা হয়, সেগুলো ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে রোপণ করা হবে।












