সাতকানিয়ার জন্মান্ধ হাফেজ শাকিলের সাফল্য

সাতকানিয়া প্রতিনিধি | সোমবার , ১৪ আগস্ট, ২০২৩ at ৬:৫৯ পূর্বাহ্ণ

চোখে আলো নেই। জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হাফেজ আবু জাফর মোহাম্মদ শাকিল। জন্মের পর পৃথিবীর আলো দেখার সৌভাগ্য না হলেও বুকে ধারণ করেছেন পবিত্র কোরআন। কোরআনের আলোয় জীবনকে আলোকিত করেছেন জন্মান্ধ শাকিল। তার সুললিত কণ্ঠে কোরআনের আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন পুরো দেশে। জাতীয় হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অধিকার করে জিতে নিয়েছেন পুরস্কার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে গ্রহণ করেছেন সার্টিফিকেট, ক্রেস্ট ও নগদ টাকা। জন্মান্ধ হাফেজ আবু জাফর মোহাম্মদ শাকিল সাতকানিয়ার ছদাহা ইউনিয়নের মাওলানা ছগীর শাহ (.) পাড়ার প্রবাসী আবুল কাশেমের পুত্র। শাকিলের সাফল্যে সাতকানিয়ায় আনন্দের বন্যা বইছে।

আবুল কাশেমের ৪ ছেলে, ১ মেয়ের মধ্যে শাকিল দ্বিতীয়। শাকিল জন্মান্ধ। জন্মের পর বাবামায়ের মুখ দেখার সৌভাগ্য হয়নি। অথচ সেই শাকিলই বাবামা, এমনকি পুরো এলাকার মুখ উজ্জ্বল করেছেন। গতকাল বাংলাদেশ দ্বীনি সেবা ফাউন্ডেশন আয়োজিত জাতীয় হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন শাকিল। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে এই সম্মাননা স্মারক ও নগদ ২ লাখ টাকার পুরষ্কার গ্রহণ করেন শাকিল।

জানা গেছে, ২০০৮ সালের ২৯ জুলাই ছদাহায় জন্মগ্রহণ করেন শাকিল। জন্মের পর থেকেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। যখন একটু একটু করে কথা বলা শুরু করেন, তখন আশেপাশের মানুষ যা বলতেন তা রপ্ত করতেন। রাতে সেগুলো নিজে নিজে বলতেন। শাকিলের মা রোকসানা আক্তার ডলি নিয়মিত কোরআন শরীফ পাঠ করেন। মায়ের মুখ থেকে শুনে শুনে ছোটবেলায় কোরআনের বেশ কয়েকটি সুরা মুখস্ত করেন শাকিল। মাবাবার ইচ্ছে ছিল, ছেলেকে কোরআনে হাফেজ করাবেন। শাকিল যখন কথা বলতে শিখেন, তখন তার বাবামা ঘরে একজন হাফেজ রাখেন। ওই হাফেজের নাম মো. ইব্রাহিম। তিনি প্রতিদিন সকালে একদুই পাতা করে কোরআন শরীফ পড়তেন। শাকিল নিজে শুনতেন এবং মোবাইলে রেকর্ড করে রাখতেন। হুজুর চলে যাওয়ার পর তা শুনে শুনে মুখস্থ করতেন।

দুই বছর তিন মাসের মধ্যে হাফেজ ইব্রাহিম শাকিলকে কোরআন শরীফ মুখস্ত করান। পরে পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নে কেওচিয়া আমতলা তাহফিজুল কোরআন মাদ্রাসার হাফেজ মো. রফিকের তত্ত্বাবধানে কোরআন মুখস্ত করেন।

২০২১ সালে এনটিভি আয়োজিত ‘পিএইচপি কোরআনের আলো’ এবং ২০২২ সালে বাংলাভিশন টিভিতে আয়োজিত ‘পবিত্র কোরআনের আলো’ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে সেরাদের একজন নির্বাচিত হন। এরপর ঢাকার যাত্রাবাড়ি মারকাজুত তাহফিজ ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসায় পড়া অবস্থায় জাতীয় হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন।

হাফেজ আবু জাফর শাকিল বলেন, আল্লাহর রহমত, সকলের দোয়া ও ভালোবাসা ছিল বলেই আমি আজ এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন, যাতে আমি বড় কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারি এবং দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারি।

শাকিলের মা রোকসানা আক্তার ডলি বলেন, ছোটবেলা থেকে সে কোনো কিছু শুনলে তা শিখে ফেলত। ছোটবেলা থেকে তার ইচ্ছে ছিল টেলিভিশন ও বড় বড় কোরআন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে। আমিও তার জন্য দোয়া করতাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও আমার ছেলেকে দোয়া করেছেন এবং পুরস্কার প্রদান করায় আমরা সকলে আনন্দিত।

ছদাহা ইউপি চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম জানান, জন্মান্ধ হাফেজ আবু জাফর মোহাম্মদ শাকিল সাতকানিয়ার গর্ব। সে এলাকার নাম উজ্জ্বল করেছে। আমরা তাকে সংবর্ধনা দেব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআজও আমার রুধির ধারায় সদা জাগে যে স্পন্দন
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা