সাতকানিয়ায় তেল জাতীয় ফসল সরিষার চাষ বাড়ছে। কম খরচে এবং অল্প সময়ে ভালো লাভ পাওয়ায় সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকছে কৃষকরা। বছরের পর বছর বাড়ছে সরিষা চাষ।
কৃষি বিভাগ থেকে বিনামূল্যে বীজ, সার ও উপকরণ প্রদানসহ নানা প্রণোদনা, প্রশিক্ষণ প্রদান এবং বিভিন্নভাবে উদ্বুদ্ধকরণের ফলে সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন সাতকানিয়ার কৃষকরা। গত ৫ বছরের ব্যবধানে সাতকানিয়ায় সরিষা চাষপ্রায় ১৫ গুণ বেড়েছে। এখন সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে ফসলের মাঠ। বিলজুড়ে নানা জাতের সবজি খেতের মধ্যে কোথাও কোথাও যেন হলুদ রঙে সাজানো হয়েছে।
সাতকানিয়ার উপ–সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা শম্ভু নাথ দেব জানান, এ বছর মোট ২৯৮ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ইতোমধ্যে ২৪৮ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। ডিসেম্বরে মধ্যে ২৭০–২৭৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২৪–২০২৫ অর্থবছরে রবি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ২৭০ জন কৃষককে ১ কেজি করে সরিষা বীজ, ১০ কেজি করে ডিএপি ও ১০ কেজি করে এমওপি সার দেওয়া হয়েছে।
রাজস্ব কর্মসূচির আওতায় ৫০ জন কৃষককে সরিষার বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। একই কর্মসূচির আওতায় আরও ২৫০ জন কৃষককে ১ কেজি করে সরিষার বীজ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় ২১ জন কৃষককে বীজ, সার ও বীজ সংরক্ষণ পাত্র দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরও ৮০ জন কৃষককে বীজ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সাতকানিয়ায় মূলত বারি সরিষা ১৪, বারি সরিষা ১৫ ও বিনা সরিষা ১১ জাতের সরিষার চাষ করা হয়েছে।
সাতকানিয়ার সোনাকানিয়া, ছদাহা, বাজালিয়া, কেঁওচিয়া, কালিয়াইশ, নলুয়া, আমিলাইষ ও খাগরিয়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বিলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোনো কোনো এলাকায় চাষকৃত সরিষা খেতে ফুল এসেছে। অধিকাংশ ফুল হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে।
আবার কোথাও কোথাও সরিষা খেত এখনো সবুজ। কোথাও কৃষকরা এখনো জমি তৈরি করে সরিষার বীজ বপন করছে। তবে অধিকাংশ এলাকায় সরিষা ফুল রাঙিয়ে দিয়েছে পুরো বিলকে। সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে মাঠের পর মাঠ। যতদূর চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। সোনাকানিয়া ইউনিয়নের মির্জারখীল এলাকার কৃষক মো. ইউসুফ আলী বলেন, আমি ৩ একর জমিতে সরিষা চাষ করেছি। সরিষা চাষকৃত জমিগুলো অন্যান্য বছর আমন ধান কাটার পর থেকে বোরো চারা রোপণের আগ পর্যন্ত অনাবাদি পড়ে থাকত।
কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে এ বছর আমন ধান কাটার সাথে সাথে সরিষা চাষ করেছি। এখন সরিষার প্রত্যেকটি চারায় ফুল এসেছে। সরিষার হলুদ ফুল পুরো বিল সাজিয়ে তুলেছে। আশা করছি ভালো ফলন পাব।
বাজালিয়া ইউনিয়নের বড়দুয়ারা এলাকার কৃষক সাহাব মিয়া বলেন, আমি সরকারিভাবে পাওয়া বীজ দিয়ে ১ কানি জমিতে সরিষা চাষ করেছি। খেতে এখন ফুল এসেছে। আগামী বোরো চাষের আগে সরিষা উত্তোলন করতে পারব।
এরপর বোরো চাষ করব। খাগরিয়া এলাকার কৃষক আহমদ কবির জানান, আমি দেড় কানি জমিতে সরিষা চাষ করেছি। কৃষি অফিস থেকে দেওয়া ভালো মানের বীজ পাওয়ায় খেত বেশ সুন্দর হয়েছে। আশা করছি ভালো ফলন পাব। এবার ভালো ফলন পেলে আগামীতে আরও অধিক জমিতে সরিষা চাষ করব। কারণ আমন ধান কাটার পর জমি যখন খালি পড়ে থাকে তখন সরিষা চাষ করে পরে বোরো রোপণ করা যাবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, সরিষা এখন বিল রাঙাচ্ছে। আগামীতে কৃষকের মন রাঙাবে। আমন ধান কাটার পর বোরো চাষের আগ পর্যন্ত জমিগুলো খালি পড়ে থাকে। এই সময়টাতে কৃষকরা সরিষা চাষ করে বাড়তি লাভ পাচ্ছে।
বীজ বপনের পর থেকে মাত্র ৭২ দিনের মধ্যে সরিষা উত্তোলন করা সম্ভব। সরিষা উত্তোলনের পর কৃষকরা একই জমিতে আবার বোরো চাষ করার সুযোগ পাচ্ছে। সরিষা চাষ বছরের পর বছর বাড়ছে।