বিক্ষিপ্ত কয়েকটি ঘটনা ছাড়া সাতকানিয়ায় শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোটের পরিবেশ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী সকল প্রার্থী সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। তবে ভোটারের উপস্থিতি ছিল কম। বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন, ভোটার ও কেন্দ্রে নিয়োজিত পুলিশ এবং প্রিসাইডিং অফিসারের সাথে কথা বলে জানা যায়, গতকাল সকাল ৯টার দিকে সাতকানিয়া মডেল হাইস্কুল কেন্দ্রের দক্ষিণ পাশের সড়ক থেকে পরপর ৫টি ককটেল নিক্ষেপ করে। এসময় ২টি ককটেল বিস্ফোরণ হয় এবং অপর ৩টি ককটেল অবিস্ফোরিত রয়ে যায়। ওই কেন্দ্রে নিয়োজিত প্রিসাইডিং অফিসার রনি দাশ জানান, কেন্দ্রের বাইরে থেকে ৩টি স্থানে পরপর ৫টি ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। এরমধ্যে তাৎক্ষণিক ২টি ককটেলের বিস্ফোরণ হয়। অপর ৩টি ককটেল অবিস্ফোরিত ছিল। পরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর লোক এসে অবিস্ফোরিত ককটেলগুলো নিষ্ক্রিয় করে। ককটেল বিস্ফোরণের সময় কেন্দ্রে খুব বেশি ভোটার ছিল না।
সাতকানিয়া মডেল হাইস্কুল কেন্দ্রে নিয়োজিত পুলিশের নায়েক লোকমান হাকিম জানান, ভোট কেন্দ্রের সীমানা প্রাচীরের ভেতর পরপর দুইটি ককটেল বিস্ফোরণ হওয়ায় ভোটার এবং আশপাশের লোকজন কিছুটা আতংকিত হয়েছিল। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন উপস্থিত হওয়ায় আতংক কেটে যায়।
এদিকে, আজিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জোরপূর্বক কেন্দ্র দখল করে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সিল মারার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই কেন্দ্রে পৌনে ১ টা থেকে ৩৫ মিনিট ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মো. সুজন মিয়া বলেন, কেন্দ্রের ৩,৫, ৬ ও ৭ নং বুথে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সিল মেরেছে। অবশ্যই এসব ব্যালট পেপারে সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের স্বাক্ষর নাই। ফলে জোরপূর্বক সিল মারা ব্যাটলগুলো আমরা বাতিল করে দিয়েছি। তিনি আরো জানান, ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে সিল মারার সাথে জড়িত লোকগুলো কেন্দ্র থেকে ৩টি সিল নিয়ে যায়। ফলে বাধ্য হয়ে ৩টি বুথে ভোট গ্রহণ বন্ধ রাখতে হয়েছে।
অন্যদিকে, ছদাহা আফজালনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের আশপাশে কয়েক দফা ফাঁকা গুলি ছুঁড়েছে দুর্বৃত্তরা। ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার শফিউল আজম নুরী জানান, কেন্দ্রের বাইরে ভোটের আগের দিন রাত থেকে ফাঁকা গুলির আওয়াজ শুনেছি। ভোট চলাকালেও একাধিকবার ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। কারা গুলি ছুঁড়েছে জানি না। তবে কেন্দ্রের ভেতর কোনো সমস্যা হয়নি।
এছাড়া আরো কয়েকটি ভোট কেন্দ্রের বাইরে গুলির আওয়াজ শুনেছেন বলে জানিয়েছেন সাধারণ ভোটাররা।
এরকম কয়েকটি কেন্দ্রে বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া পুরো উপজেলায় শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি তুলনামূলক কম ছিল। ফলে অনেক কেন্দ্রে ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা–কর্মচারীরা কেন্দ্রে অলস সময় কাটিয়েছেন।
বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে সাতকানিয়া আলীয়া এম ইউ ফাযিল মাদ্রাসা কেন্দ্র এসে পরিদর্শন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী বলেন, অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কোথাও কোনো সমস্যা নাই। ভোটের পরিবেশ এভাবে বজায় থাকলে ফলাফল যা–ই হোক আমি মেনে নেব।
দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে পূর্ব নলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মোতালেব বলেন, সুষ্ঠু, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভোটের পরিবেশ নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। ফলাফল যাই হোক আমি মেনে নেব।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার মিল্টন বিশ্বাস বলেন, নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভাবে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।