সাতকানিয়ায় বোরো চাষে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে কৃষকরা। বন্যার কারণে আমনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগেভাগেই নেমে পড়েছে বোরো চাষে। কৃষকরা বোরো চাষ নিয়ে বুনছে নতুন স্বপ্ন। ফলে কনকনে শীতকে উপেক্ষা করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিলে কাটিয়ে দিচ্ছে তারা। সেচ ও চাষ দিয়ে জমি প্রস্তুত করা, বীজতলা থেকে চারা উত্তোলন করে প্রস্তুতকৃত জমিতে চারা রোপনে ব্যস্ত রয়েছে কৃষকরা। বীজতলা তৈরির পর থেকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবারে চারার কোনো ক্ষতি হয়নি। যথাসময়ে সার ও বীজ পাওয়ায় কৃষকদেরকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। বর্তমানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়ায় সেচের পানি নিয়েও কোনো সমস্যা নাই। ফলে বোরো চাষে কৃষকরা বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছেন, সেচ সুবিধা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবারে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অধিক জমিতে বোরো চাষ হবে। সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রমতে, এবারে ৭ হাজার ২ শত ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে উফশী জাতের ৩ হাজার ৯ শত ৫০ হেক্টর ও হাইব্রিড জাতের ৩ হাজার ৩ শত হেক্টর। এবারে চরতিতে ৫ শত ৯৩ হেক্টর, খাগরিয়ায় ১ শত ২৫, নলুয়ায় ৭ শত ৪০, কাঞ্চনায় ৬ শত ৫, আমিলাইষে ২ শত ৫, এওচিয়ায় ৩ শত ৬, মাদার্শায় ২ শত ৬০, ঢেমশায় ২ শত ৭, পশ্চিম ঢেমশায় ১ শত ৫৫, কেঁওচিয়ায় ৫ শত ৫৫, কালিয়াইশে ৩ শত ৭০, ধর্মপুরে ৪ শত ৪৫, বাজালিয়ায় ৩ শত ৮৫, পুরানগড়ে ৭ শত ১০, ছদাহায় ২ শত ২৩, সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নে ৩ শত ৭০, সোনাকানিয়ায় ৪ শত ৭০ ও পৌরসভায় ৫ শত ২৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে, জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা কর্তৃক ধর্মপুর ও পুরানগড় ইউনিয়নে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৭ শত ২১ জন কৃষককে ৫ কেজি করে উফশী জাতের বীজ, ১০ কেজি করে ডিএপি, ১০ কেজি করে এমওপি, ১টি করে কোদাল ও ১টি করে বীজ সংরক্ষণ পাত্র বিতরণ করা হয়েছে।
এছাড়াও সরকারিভাবে উপজেলার ৬ হাজার ৬ শত জন কৃষককে ২ কেজি করে হাইব্রিড বোরো বীজ, ২ হাজার ৮ শত ৭০ জনকে ৫ কেজি করে বীজ, ১০ কেজি করে ডিএপি ও ১০ কেজি করে এমওপি প্রদান করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বিলে সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, বোরো চাষে মহাব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে কৃষকরা। কেউ জমিতে পানি দিচ্ছে, কেউ চাষ দিচ্ছে। আবার কেউ আইল বাঁধছে, কেউ মই টেনে জমি সমান করছে। এভাবেই জমিকে চারা রোপনের উপযোগী করে তুলছে। আবার কেউ বীজতলা থেকে চারা উত্তোলন করে প্রস্তুতকৃত জমিতে রোপন করছে। শৈতপ্রবাহের হাড়কাঁপানো শীতেও কৃষকরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানিযুক্ত জমিতে কাটিয়ে দিচ্ছে। বন্যায় আমনের যে ক্ষতি হয়েছে সেটা পুষিয়ে নিতে বোরো নিয়ে এত আয়োজন। আবার কয়েকজন কৃষক জানিয়েছে, বোরো চাষ কিছুটা আগাম করতে পারলে ফলনও আগে আসে। সেক্ষেত্রে বৃষ্টির শুরু হওয়ার আগে বোরো ধান কেটে ঘরে তোলা যায়। জনার কেঁওচিয়া এলাকার কৃষক আবু তৈয়ব জানান, আমি গত এক সপ্তাহ আগে থেকে বোরোর চারা রোপন শুরু করেছি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে রোপন শেষ হবে। এবছর একটু আগে রোপন করেছি।
একই এলাকার কৃষক মনির আহমদ জানান, গত আমন মৌসুমে বন্যায় কৃষকদের সর্বনাশ হয়ে গেছে। বন্যার পানিতে চারা পচে যাওয়ায় নতুন ভাবে বীজতলা তৈরি করতে হয়। নতুন ভাবে তৈরিকৃত বীজতলার চারা দিয়ে রোপনকৃত আমনের ফলন খুব কম হয়েছে। ধানের পরিবর্তে চিটা পেয়েছি। তাও আবার প্রতি কানি জমিতে ২৫–৩০ আড়ি হবে। আমি ৯ কানি জমিতে আমন চাষ করেছিলাম। এসব জমিতে যে ধান পেয়েছি তা বিক্রি দূরের কথা, পুরো বছর খেতেও পারবো না। আমন চাষে এক লক্ষ টাকার উপর লোকসান থাকবে। এখন বোরো চাষের জন্য জমি তৈরি করেছি। ঠিকভাবে সেচ দিতে পারলে বোরোতে ফলন ভালো হবে। বোরোতে ভালো ফলন পেলে আমনের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে আসবে।
সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, এবারে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে বোরো চাষ হবে। কারণ কৃষকরা যথাসময়ে বীজ পেয়েছে। বীজতলা তৈরির পর থেকে আবহাওয়াও ভালো ছিল। ফলে বীজতলার কোনো ধরনের ক্ষতি হয়নি। এবারে সেচ সুবিধা বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যান্য বছর অনাবাদি পড়ে থাকতো এরকম কিছু জমি এবারে সেচ সুবিধার আওতায় এসেছে। সারের কোনো সংকট নাই। ফলে কৃষকরা চাহিদা মতো সার পাচ্ছে। এছাড়াও নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ পাওয়ায় সেচের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। এজন্য লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে বোরো চাষ হবে বলে আশা করছি। গতকাল পর্যন্ত উফশী জাতের ৭ শত হেক্টর ও হাইব্রিড জাতের ৮ শত হেক্টর জমিতে বোরো চারা রোপন করা হয়েছে। বেশির ভাগ এলাকায় বোরো রোপন এখন শুরু হয়েছে।