সাতকানিয়ায় পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের সঙ্গে এলাকাবাসীর গোলাগুলি

একজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ, ৩টি মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দিল বিক্ষুব্ধ জনতা

সাতকানিয়া প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ১৯ মার্চ, ২০২৪ at ৪:২৮ পূর্বাহ্ণ

সাতকানিয়ায় চাঁদাবাজি করতে আসা পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের সঙ্গে এলাকাবাসীর গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এসময় সন্ত্রাসীদের হামলায় ৩জন আহত হয়েছে। গত রবিবার রাতে ও গতকাল সোমবার সকালে উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়নের বৈতরণী এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে সাতকানিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. শিবলী নোমান ও থানার অফিসার ইনচার্জ প্রিটন সরকার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পুরানগড় ইউপি চেয়ারম্যান আ ফ ম মাহবুবুল হক সিকদার জানান, বিগত দেড় থেকে দুই বছর ধরে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা এলাকায় এসে চাঁদাবাজি করছে। বিশেষ করে মৎস্য, ডেইরী ও পোল্ট্রি খামার এবং পানের বরজ মালিকদের কাছ থেকে মাসিক হারে চাঁদাবাজি করে আসছিল। ফলে এলাকার লোকজনকে নিয়ে বৈঠক করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা চাঁদাবাজি করতে আসলে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয়া হবে এবং সাথে সাথে এলাকাবাসী এগিয়ে এসে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। গত রবিবার রাতে একদল পাহাড়ি সন্ত্রাসী বৈতরনী এলাকায় গ্রীণ ওয়ান্ড এগ্রো নামের একটি খামারে এসে চাঁদা দাবি করে। এ সময় তারা চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় খামারের মালিকসহ লোকজনকে হত্যার হুমকি দিতে থাকে। এক পর্যায়ে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা খামারে আসার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর স্থানীয় মসজিদের মাইকে প্রচার করে। তখন এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা গুলি ছুড়ে। পরে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকেও লাইসেন্স করা অস্ত্র নিয়ে পাল্টা গুলি ছুড়ে। এরপর লোকজনের ধাওয়া খেয়ে সন্ত্রাসীরা পাহাড়ের ভেতর ঢুকে পড়ে।

ইউপি চেয়ারম্যান আরো জানান, গতকাল সকালে সন্ত্রাসীরা পুনরায় গ্রীণ ওয়াল্ড এগ্রো খামারে এসে কর্মচারীদেরকে মারধর শুরু করে। বিষয়টি মসজিদের মাইকে প্রচারের পর এলাকার লোকজন এগিয়ে আসলে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা গুলি বর্ষণ করে। এক পর্যায়ে এলাকার লোকজনও লাইসেন্সকৃত অস্ত্র নিয়ে গুলি চালায়। গোলাগুলির এক পর্যায়ে এলাকাবাসীর ধাওয়া খেয়ে সন্ত্রাসীরা তাদের ব্যবহৃত ৩টি মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যায়। এরপর বিক্ষুব্ধ লোকজন আগুন দিয়ে মোটরসাইকেল গুলো জ্বালিয়ে দেয়। এসময় স্থানীয় লোকজন মংশি মারমা (২৮) নামের এক সন্ত্রাসীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। মংশি মারমা বান্দরবান সদরের গোয়ালিয়া ঘোলার রোয়াজির পাড়া এলাকার মংশু মারমার ছেলে।

গ্রীণ ওয়াল্ড এগ্রো খামারের ম্যানেজার মো. বোরহান উদ্দিন জানান, একদল পাহাড়ি সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন যাবৎ আমাদের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিল। সর্বশেষ গত রবিবার রাতে খামারে এসে ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। খামারে সন্ত্রাসীরা আসার বিষয়টি মসজিদের মাইকে প্রচারের পর স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসে। তখন সন্ত্রাসীরা আমাদেরকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়ে গুলি করতে করতে চলে যায়। পরে গতকাল সকালে আবারো তিনটি মোটরসাইকেল নিয়ে একদল সন্ত্রাসী খামারে এসে চাঁদা দাবি করে। এক পর্যায়ে আমাদের কর্মচারীদেরকে মারধর করতে শুরু করে। এতে মো. মুন্না, নুরুল ইসলাম ও কামাল উদ্দিন নামের ৩ জন কর্মচারী আহত হয়। সন্ত্রাসীরা খামারে এসে হামলা চালানোর বিষয়টি মসজিদের মাইকে প্রচারের পর এলাকার লোকজন এসে ধাওয়া করলে সন্ত্রাসীরা গুলি ছুড়ে। এক পর্যায়ে এলাকার লোকজনও লাইসেন্স করা অস্ত্র দিয়ে গুলি চালায়। তখন সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলে ক্ষুব্দ লোকজন তাদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল গুলো আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।

তিনি আরো জানান, পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা প্রতিদিনই এলাকায় এসে মানুষকে চাঁদা দাবি করে চিঠি দিচ্ছে। তাদের কথা মতো চাঁদা না দিলে রাতে এসে মারধর করছে। প্রতিনিয়ত হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে গেছে।

সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শিবলী নোমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সন্ত্রাসী সন্দেহে আটককৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনায় জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে এ ঘটনায় এখনো কেউ লিখিত কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসকল সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ কেন্দ্রের
পরবর্তী নিবন্ধ৬ মাস পর পুকুরে ডুবে মারা গেল বোন