সাজেকে আটকা ৭ শতাধিক পর্যটক

খাগড়াছড়িতে ৩৫ গ্রাম প্লাবিত, সড়কে ধসে পড়ল পাহাড়

খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি প্রতিনিধি | বুধবার , ৩ জুলাই, ২০২৪ at ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়ি আলুটিলার সাপমারা এলাকায় পাহাড় ধসে ঢাকা ও চট্টগ্রামের সাথে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। এসময় আটকা পড়ে শত শত যানবাহন। টানা বর্ষণে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে দীঘিনালার মেরুং ইউনিয়ন ও কবাখালি ইউনিয়নে ২৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ও জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে দুর্ভোগে পড়েন হাজারো মানুষ। অন্যদিকে সড়ক জলমগ্ন হওয়ায় রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ভ্যালি পর্যটনকেন্দ্রে বেড়াতে গিয়ে ৭ শতাধিক পর্যটক আটকে পড়ার খবর পাওয়া গেছে।

রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ভ্যালি পর্যটনকেন্দ্রে বেড়াতে গিয়ে ৭ শতাধিক পর্যটক আটকা পড়েছে। বাঘাইছড়ির সাজেক ইউনিয়নের বাঘাইহাট বাজার, মাচালং ব্রিজ ও দীঘিনালা উপজেলার কবাখালীতে সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সোমবার সাজেক যাওয়া এ বিপুল সংখ্যক পর্যটক আটকা পড়েন। বিষয়টি নিশ্চিত করে সাজেক কটেজ মালিক সমিতির সহকারী সাধারণ সম্পাদক মতিজয় ত্রিপুরা জানান, সোমবার প্রায় ছোটবড় ১২৫টি গাড়ি সাজেকে এসেছে। কিন্তু রাত থেকে টানা বর্ষণে বাঘাইহাট বাজারের সড়ক ও মাচালং ব্রিজ পানিতে তলিয়ে যায়। এতে সাজেকে আসা প্রায় ৭০০ পর্যটক আটকা পড়েন। সোমবার যেসব গাড়ি এসেছে তাদের সবাই সাজেকে অবস্থান করছেন। পানি যেভাবে বাড়ছে তাতে আজকে (মঙ্গলবার) গাড়ি চলাচল করা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে মঙ্গলবার সকালে খাগড়াছড়ি জেলা শহর থেকেও কোনো গাড়ি সাজেকে প্রবেশ করেনি। এতে আটকা পড়া পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এদিকে গত রোববার থেকে রাঙামাটি জেলায় মাঝারি বৃষ্টিপাত ও উজানের পানির ঢলে নদনদীর পানি ফুলছে। তিনদিন ধরেই ক্রমাগত বৃষ্টি আর ঢলের পানিতে চেঙ্গী, কাচালং, মাইনি, রীংক্ষ্যং নদ ও কর্ণফুলী নদীর পানি বাড়ছে। এতে করে ইতোমধ্যেই জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় কাচালং নদীর পানি বেড়ে বাঘাইছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। পানি উঠেছে উপজেলা পরিষদসহ আশেপাশের এলাকায়। বিলাইছড়ির রীংক্ষ্যং নদীর পানি বেড়ে ফারুয়া ইউনিয়নের নদী পার্শ্ববর্তী এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরীণ আক্তার জানান, বাঘাইছড়িতে টানা ভারী বর্ষণের ফলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। যাতে প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলায় ৫৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হলেও এখনো কেউ আসেনি। বাঘাইহাট সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সাজেকে পর্যটক আটকা পড়েছে। ঢলের পানি না নেমে যাওয়া পর্যন্ত কেউ বের হতে পারবে না।

অন্যদিকে মঙ্গলবার বিকালে রাঙামাটি জেলা শহরের শিমুলতলী, রূপনগরসহ পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শনে গেছেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ খানসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এসময় তারা ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসরতদের নিরাপদ স্থানে ও আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। শহরজুড়ে করা হচ্ছে মাইকিং। টানা বৃষ্টির কারণে সড়কের পাশেও ছোটখাটো ভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে এখনো বড় ধরনের কোনো ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক জাকির হোসেন জানান, সাপমারা এলাকায় সকাল ৫টায় পাহাড়ের বড় একটি অংশ ধসে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের খাগড়াছড়ি ও মাটিরাঙা ইউনিটের সদস্যরা এসে মাটি সরিয়ে নিলে সকাল ১০টা থেকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। অন্যদিকে ভারী বর্ষণে সিন্দুকছড়ির ধুমনিঘাট কাটাপাহাড় এলাকায় সড়ক দেবে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

মঙ্গলবার বিকেলে খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মাকসুদুর রহমান জানান, গেল কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণে পাহাড়ি সড়কটির একপাশের মাটি দেবে গিয়ে সড়কে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার বিষয়টি জানার পর বিকেলে সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু হয়। সড়ক দেবে যাওয়ায় খাগড়াছড়ির মহালছড়ি থেকে গুইমারার জালিয়াপাড়ার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সংস্কার কাজ শেষ করতে কতদিন সময় লাগবে সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারেনি সড়ক বিভাগ সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে দীঘিনালালংগদু সড়কের হেড কোয়ার্টার এলাকায় সড়ক ডুবে যাওয়ার রাঙামাটির লংগদুর সাথে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ডুবে গেছে মেরুং বাজার। টানা বর্ষণে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে খাগড়াছড়ির দীঘিনালার মেরুং ইউনিয়ন ও কবাখালি ইউনিয়নে ২৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। টানা বর্ষণের কারণে মাইনী নদীর পানি বেড়ে বন্যার সৃষ্টি হয়। সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

মেরুং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদা বেগম লাকি জানান, গতকাল রাতে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে মেরুং ইউনিয়নের ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মেরুংয়ের হেড কোয়ার্টার এলাকায় সড়কে পানি উঠে যাওয়ায় লংগদুর সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

খাগড়াছড়িতে চেঙ্গী নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলা শহরের শব্দ মিয়া পাড়া, মুসলিম পাড়া, গঞ্জ পাড়া, গোলাবাড়ি, মেহেদী বাগ, কালাডেবা, খবং পুরিয়াসহ ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। খাগড়াছড়ি সাজেক সড়কের কবাখালি, বাঘাইহাট ও মাচালং এলাকায় পানি উঠে যাওয়ায় সাজেকের সাথে সারাদেশে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে সাজেক রুইলুই পর্যটন আটকে পরেছে ৪৬৫ পর্যটক।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সাজেক কর্টেজ ও মালিক সমিতির সহসভাপতি চাইথোয়াই অং চৌধুরী (জয়)। তিনি জানান, সাজেক সড়কে পানি কমতে একদিন সময় লাগবে। সাজেকে ৪৬৫ আটকে আছে। আটকা পরা পর্যটকদের ভাড়া কমানো হয়েছে। কোনো রিসোর্ট রুম প্রতি ১৫শ টাকার বেশি ভাড়া আদায় করতে পারবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবান্দরবানে বন্যার শঙ্কা, নিরাপদ আশ্রয়ে সরতে মাইকিং
পরবর্তী নিবন্ধসরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দাখিলের নির্দেশ হাইকোর্টের