সাজেকে আগুনে পুড়ল রিসোর্ট কটেজসহ ৯৫ স্থাপনা

তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি

রাঙামাটি প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৭:৫৭ পূর্বাহ্ণ

মেঘপাহাড়ের উপত্যকা সাজেক ভ্যালিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৯৫টি স্থাপনা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। গতকাল সোমবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ভ্যালি পর্যটনকেন্দ্রের ‘অবকাশ ম্যানুয়েল রিসোর্ট’সহ আশপাশের এলাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে বলে জানিয়েছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন।

গতকাল রাত ৮টার দিকে জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুপুর সোয়া ১টার দিকে আগুনের সূত্রপাতের পর আগুন মুহূর্তেই আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার পর স্থানীয়রা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। এতে যোগ দেন পর্যটনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও। বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৪টার দিকে প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনে রিসোর্টকটেজ, দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় ৯৫টির বেশি স্থাপনা পুড়ে গেছে। তবে এখনো পর্যন্ত হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। নিরূপণ করা যায়নি ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক তালিকাও। এ ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এদিকে সাজেক ভ্যালিতে আগুনের ঘটনায় খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটের সঙ্গে খাগড়াছড়ি ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটও কাজ করেছে। সাময়িকভাবে সাজেক ভ্যালিতে পর্যটকদের যাতায়াত বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে রাঙামাটি প্রশাসন। তবে গতকাল বিকেলে সাজেকের আগুন নিয়ন্ত্রণে বিমানবাহিনীর ২টি হেলিকপ্টার আসার কথা থাকলেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আসা ও সন্ধ্যা নেমে আসায় পরে আর হেলিকপ্টার আনা হয়নি বলে জানিয়েছে রাঙামাটির প্রশাসন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সাজেক ভ্যালিতে পর্যাপ্ত পানির সংকট ও দমকলবাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করতে না পারায় আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে। তবে আগুনের ঘটনায় রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের প্রাথমিক প্রতিবেদনে ৯০৯৫টির মতো স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানানো হলেও প্রকৃত তথ্য নিরুপণ করা হয়নি। স্থানীয় ও পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, সাজেকে পানি সংকটের কারণে স্থানীয়রা দ্রুত আগুন নেভাতে পারেননি। এছাড়া দীঘিনালা, খাগড়াছড়িসহ অন্যান্য উপজেলা থেকে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি পৌঁছাতে সময় লাগার কারণে আগুনে ক্ষয়ক্ষতি বেড়ে গেছে। সাজেকে অগ্নি মোকাবিলার জন্য যথাযথ পানি সংরক্ষিত ছিল না।

সাজেক রিসোর্ট ও কটেজ মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিজয় ত্রিপুরা বলেন, আগুন এখন নিয়ন্ত্রণে এলেও ক্ষয়ক্ষতি কী পরিমাণ হয়েছে তা এখনো সঠিক বলা যাচ্ছে না। যে পরিমাণ আগুন লেগেছে মুহুর্তে চোখের সামনে সব শেষ হয়ে গেছে। সঠিক তথ্য জানাতে একটু সময় লাগবে, কারণ এই মুহূর্তে আমরা কিছুই বলতে পারছি না।

১৬৭ নম্বর রুইলুই মৌজার হেডম্যান লাল থাঙ্গা লুসাই বলেন, আগুনের ঘটনায় আমার বসতবাড়িসহ আশপাশের বিভিন্ন স্থাপনা পুড়ে গেছে। কথা বলার মতো পরিবেশে এখন নেই।

রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ রুহুল আমীন জানান, সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সাজেকে ৯০৯৫টির মতো স্থাপনা পুড়ে গেছে। আগুনে এখনো হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন, যতটুকু জানা গেছেবৈদ্যুতিক শটসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। তবে সেটি পরে তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে। আপাতত আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে কাজ চলছে।

এদিকে, গত রাত সাড়ে ৮টার দিকে এক বিজ্ঞপ্তিতে রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) পাঠান মো. সাইদুজ্জামান সাজেকে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে আজ মঙ্গলবার থেকে পরবর্তী নিদের্শনা না দেয়া পর্যন্ত সাজেক ভ্যালি ভ্রমণে পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করেছেন। মূলত নিরুৎসাহিত করা হলেও এই সময়ে সাজেকে পর্যটক যাতায়াত বন্ধ থাকে।

৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি : এদিকে অগ্নিকাণ্ডের উৎস ও কারণ উদ্ঘাটনে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। তদন্ত কমিটিকে আগামী সাতদিনের মধ্যে তদন্ত করে সংঘঠিত অগ্নিকাণ্ডের উৎস ও কারণ উদ্ঘাটন এবং দুর্ঘটনা প্রতিরোধকল্পে সুপারিশ প্রদানের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গত রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহর সই করা এক অফিস আদেশে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, তদন্ত কমিটি প্রয়োজনে এক বা একাধিক সদস্য কোঅপ্ট করতে পারবে।

তদন্ত কমিটিতে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক মো. মোবারক হোসেনকে আহ্বায়ক ও বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শিরীন আক্তারকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটির অন্য ৩ সদস্য হলেন রাঙামাটির সহকারী পুলিশ সুপার (বাঘাইছড়ি সার্কেল), রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (দীঘিনালা) সহকারী প্রকৌশলী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএক মাসের বেশি ছুটিতে যাচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
পরবর্তী নিবন্ধফটিকছড়িতে বৃদ্ধকে কুপিয়ে জখম