আনন্দ, বেদনা, সৌরভ, গৌরবের মাস এই ফেব্রুয়ারি মাস। এই মাসের পয়লা তারিখের আগে থেকে শুরু হয়ে যায় বইমেলা স্টলের ঠক ঠক পেরেক গাঁথা।
টান টান উত্তেজনা… লেখক, প্রকাশনী সংস্থা, সাথে সাথে পাঠকও। ঢাকা শহরে বাংলা একাডেমি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশাল চত্বর জুড়ে ফোঁটা ফোঁটা মধু হয়ে জমতে থাকে বইমেলা। চট্টগ্রাম এবং অন্যান্য শহরও তাল মিলিয়ে চলে। ফাগুনের মিষ্টি হাওয়ার দোলায় রাঙা পলাশ, শিমুল আগুন হয়ে রঙ ছড়ায় ছোট বড় সবার মনে। একই সাথে মন মাতানো লাল, নীল, হলুদ, নানা রঙের ফুলেদের হাত ধরে হাজির হয় ভালোবাসার দিন অর্থাৎ ভ্যালেন্টাইন্স ডে। বইমেলার চত্বরে ডানাকাটা প্রজাপতিরা হাসি, আনন্দে মুগ্ধ। অন্যদিকে লেখকেরা শংকিত বিশেষ করে নবীন লেখকেরা…. পাঠকেরা যেন ছুঁয়ে দেখে তাদের বই। কখনো হা হুতাশ, কখনো বা আনন্দ জোয়ারে ভাসে যখন পরিচিত জন, বন্ধু বান্ধবরা দল বেঁধে বই কিনে। হাতে গোনা কিছু বইপ্রেমী আছে, যারা প্রতিবছর অপেক্ষা করে থাকে, এই ফেব্রুয়ারি মাসের বইমেলার জন্য। প্রাণ ভরে নিবে নতুন নতুন বইয়ের ঘ্রাণ। বেশির ভাগ জনগণই আড্ডা, ঘোরাঘুরি, আইসক্রিম, কফি, পরোটা, কাবাবের প্রতি আকৃষ্ট। স্টলে নিভৃতে একেলা থাকে সারি সারি বই।
এই দুর্মূল্যের বাজারে সন্তানের মতো যত্নে সৃষ্টিকে প্রকাশকের হোমানলে আত্মাহুতি দিতে দিতে অর্বাচীন লেখক ভাবে পরের বার জয় হবেই হবে। এর মধ্যেই চলে আসে শহীদ দিবস বা ২১ শে ফেব্রুয়ারি। ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সাদা, কালো পোশাকে অসংখ্য নারী– পুরুষ বইমেলাকে প্রাণবন্ত করে রাখে।
বন্ধের দিন গুলিতে উপচে পড়া ভিড় থাকে। বাবা–মায়ের হাত ধরে শিশুরা আসে… পছন্দমতো গল্প আর ছড়ার বই কিনে… আনন্দ, কলকাকলিতে ভরে তোলে শিশু চত্বর। এ এক অন্যরকম বিনোদন। প্রতিদিনই নতুন নতুন বই আসে। নামকরা লেখকদের বই নামেই বিক্রি হয়। একজন নতুন লেখক যখন নিজের অটোগ্রাফ দিয়ে পাঠকের হাতে বই তুলে দেয়, তার মূল্য কোটি টাকার চেয়েও বেশি। এই অনুপ্রেরণাই একজন লেখককে নতুন নতুন লেখার প্রাণশক্তি যোগায়। এই বইমেলা নিয়ে দায়বদ্ধতা সবারই… প্রকাশক, লেখক, পাঠক।
সৃজনশীল, মননশীল লেখকদের মেধা মননের চারণভূমি হওয়া উচিত এই বইমেলা। তা কি হয়? কিছু নিয়ম, নীতির পরিসরে আরো সুসংগঠিত এবং সুন্দর করে সাজানো উচিত এই প্রাণের বইমেলাকে। বড় বড় স্টল সাজিয়ে বসে থাকেন অনেক সংস্থা। সেখানে কতটুকু পাঠ যোগ্য বই আছে, দেখা উচিত।
কিছু কিছু প্রকাশনী সংস্থার উচ্চাভিলাষী আচরণ, মানসম্মত লেখা, পাঠকদের পছন্দমতো বই সংগ্রহ…..সবই বৃত্তাকারে ঘুরে। আজকাল ডিজিটাল বই পড়ার দিকে মানুষ ঝুঁকেছেন। কিন্ত হাতের স্পর্শ, বইয়ের ঘ্রাণ তার আনন্দ কি আর পাওয়া যায়। বই শুধু জ্ঞানের বাহকই নয়, মনের ভাব প্রদানের সেতুবন্ধন। দু:খ– কষ্ট ভুলে মনকে সতেজ, উজ্জীবিত করার পরম ওষুধ এই বই। ছোটবেলার মতো এমনই চাই, বই হাতে নিয়ে নাওয়া– খাওয়া যেন ভুলে যাই। বই হোক, অবসর সময় কাটানোর পরম বন্ধু। বই কিনুন, বই পড়ুন, বই উপহার দিন।











