ইলিশের প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে সাগরে মাছ ধরার উপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে বৃহস্পতিবার (০৫ নভেম্বর) থেকে ফের সাড়ম্বরে মাছ ধরা শুরু হয়েছে। এ উপলক্ষে গত বুধবার মধ্যরাতে জেলা মৎস্য বিভাগ ও কোস্টগার্ড আয়োজিত এক সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে আতশবাজি ফুটিয়ে ফের মাছধরা শুরুর ঘোষণা দেয়া হয়। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত শতকরা ৭৫ ভাগ বোট সাগরে রওয়ানা দিয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতি। সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ জানান, সাগরে মাছ ধরার উপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে বৃহস্পতিবার প্রথম প্রহর থেকেই জেলার বিভিন্ন ঘাট থেকে সাগরে রওয়ানা দিতে শুরু করে জেলেরা। এরপর প্রথমদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত শতকরা ৭৫ ভাগ বোট সাগরে রওয়ানা দেয় বলে জানান তিনি।
জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতি সূত্র জানায়, কক্সবাজারে মাছ ধরার ছোট বড় ৭ সহস্রাধিক যান্ত্রিক বোট রয়েছে। এসব বোটে প্রায় ১ লাখ জেলে শ্রমিক নিয়োজিত। নিষেধাজ্ঞা অতিবাহিত হওয়ার পরপরই যাতে মাছ ধরা শুরু করা যায় সেজন্য কক্সবাজারের অধিকাংশ জেলেই ছিলেন পূর্ব থেকে প্রস্তুত। কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম খালেকুজ্জামান বিপ্লব বলেন, নতুন করে মাছধরা শুরু করা উপলক্ষে বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শহরের নূনিয়াচড়াস্থ বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে এক সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মৎস্য বিভাগ ও কোস্টগার্ড। অনুষ্ঠানে ঘড়ির কাটা রাত ১২-টা অতিক্রম করার সাথে সাথেই আতশবাজি ফুটিয়ে মাছধরা শুরুর ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর জেলেরা ট্রলার শোভাযাত্রার মাধ্যমে সাগরে রওয়ানা দেয়। তবে নিষেধাজ্ঞা শেষে বৃহস্পতিবার থেকে সাগরে ফের মাছ ধরা ফের শুরু হলেও ইলিশ ধরে ঘাটে ফিরতে জেলেদের আরো ৪/৫ দিন সময় লাগবে। আর তখনই বাজারে ইলিশ সরবরাহ শুরু হবে বলে জানান ফিশারীঘাটস্থ মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী।
তিনি বলেন, ইলিশের প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে গত ১৪ অক্টোবর থেকে সাগরে মাছ ধরার উপর ২২ দিনের শুরুর পর মাছের অভাবে সাগরপাড়ের এ শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারীঘাট এখন খাঁ খাঁ প্রান্তরে পরিণত হয়েছে। কয়েকদিন পর মাছ ধরে জেলেরা ঘাটে ফিরতে শুরু করলেই বাজারে ইলিশ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর ইলিশের স্বাদ পেতে আরো কয়েকদিন সময় লাগলেও বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই বাজারে আসতে শুরু করেছে পাঁচকাড়া মাছ নামে পরিচিত সাগরের বাটা, পোয়া, চামিলাসহ পাঁচ প্রকারের মাছ।
জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতি সূত্র জানায়, সাগরে মাছধরা বড় নৌকায় ৩০ থেকে ৪০ জন এবং ছোট নৌকায় ৫ থেকে ১৭ জন জেলে থাকে। আবার কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর ঘাটের ইঞ্জিনবিহীন ককশিটের বোটে থাকে মাত্র ২ জন জেলে। নৌকাগুলোর মধ্যে ইলিশ জালের বোটগুলো গভীর বঙ্গোপসাগরে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো উপকূলের কাছাকাছি মাছ ধরে। ইলিশ জালের বোটগুলো পক্ষকালের রসদ নিয়ে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো মাত্র একদিনের রসদ নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। বিহিন্দি জালের বোটগুলো সাগর উপকূলে ছোট প্রজাতির মাছ ধরে যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘পাঁচকাড়া’ (পাঁচ প্রকারের) মাছ বলা হয়। এছাড়া ককশিটের বোটগুলো প্রতিদিন ২ থেকে ৩ বার পর্যন্ত সাগরে মাছ ধরতে যায়।