বঙ্গোপসাগরের ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বাংলাদেশ জলসীমায় ৩৪৭ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৫২ প্রজাতির চিংড়ি, ৫ প্রজাতির লবস্টার, ৬ প্রজাতির কাঁকড়া, ২২০ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল ও ৬১ প্রজাতির সি–গ্রাস চিহ্নিত করা হয়েছে, যার অধিকাংশই অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পন্ন। অথচ এর পাশাপাশি ৪৯৮ প্রজাতির ঝিনুক আছে, যার মধ্যে ১৪২ প্রজাতির ঝিনুকের মাংস খাওয়ার উপযোগী হলেও বাংলাদেশে এর কোন অর্থনৈতিক গুরুত্ব নেই। ঝিনুকের ভেতরে থাকা নরম ও মাংসল অংশটি খাওয়ার উপযোগী এবং এটি প্রতিবেশী থাইল্যান্ড–মালয়শিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনপ্রিয় সী–ফুডস বা সামুদ্রিক খাবার। এই স্বল্প প্রচলিত খাদ্যটি আমাদের দেশেও খাবার টেবিলে এনে দেশের সুনীল অর্থনীতিতে আমরা ভূমিকা রাখতে পারি। কক্সবাজারস্থ বিএফআরআই’র সামুদ্রিক প্রযুক্তি কেন্দ্রে আয়োজিত ‘সামুদ্রিক ঝিনুক বা বাইভাল্বের ব্যবহার, বাণিজ্যিকীকরণ ও জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে তাজা ও মূল্যসংযোজন পণ্য উৎপাদন ও বাজার সংযোগ স্থাপন’ শীর্ষক দুই দিনের এক প্রশিক্ষণ কর্মশালা ও উপকরণ বিতরণ অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্টরা এ কথা বলেন।
বক্তারা আরও বলেন, সামুদ্রিক ঝিনুক বা বাইভাল্ব বাংলাদেশের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ মৎস্য সম্পদ যেটি উন্নত বিশ্বে উপাদেয় খাদ্য হিসাবে প্রচলিত। বাংলাদেশের রাখাইনসহ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কাছেও এটি জনপ্রিয় খাদ্য হলেও সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের মাঝে এ খাদ্যটির ব্যবহার নেই। অথচ সামুদ্রিক বাইভাল্বকে খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে আমাদের পুষ্টি চাহিদা যেমন পূরণ হবে, তেমনি এই খাতে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সুষ্টি হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’
কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন সমুদ্র উপকূলে পাওয়া যায় নানা জাতের সামুদ্রিক ঝিনুক। এরমধ্যে স্থানীয় ভাষায় ‘ছিলইন’ নামে পরিচিত ওয়েস্টার বা কস্তুরা, গ্রিন মাজল বা সবুজ ঝিনুক ও ক্ল্যামসহ বাইভাল্ব জাতীয় ঝিনুকগুলোর মাংস খাওয়ার উপযোগী বলে জানান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অনুষদের ডিন ও এ সংক্রান্ত প্রকল্পের মূখ্য গবেষক প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান মণ্ডল।
তিনি বলেন, সামুদ্রিক ঝিনুকের ব্যবহার, বাণিজ্যিকীকরণ ও জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে তাজা ও মূল্যসংযোজন পণ্য উৎপাদন এবং বাজার সংযোগ স্থাপনের জন্য কক্সবাজারে ২০ জন সংগ্রাহক, ১০ জন প্রক্রিয়াজাতকারী, ৫ জন ভেন্ডর ও একজন সী–ফুড বিক্রেতাতে ২ দিনের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সে সাথে তাদের মাঝে প্রয়োজনীয় উপকরণও বিতরণ করা হয়েছে।