বঙ্গোপসাগরে দুই মাস পাঁচদিন মাছ শিকার বন্ধ থাকায় পর নিষেধাজ্ঞা উঠছে আগামী ২৩ জুলাই মধ্যরাত থেকে। এর দুইদিন আগে কুরবানির ঈদ থাকায় চট্টগ্রামের কয়েক হাজার জেলে ইতোমধ্যে সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছেন। দীর্ঘদিন কর্মহীন অবস্থায় থাকার পর নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসাতে কর্ণফুলী পাড়সহ উপকূলীয় জেলেপাড়ায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরতে শুরু করেছে। দীর্ঘদিন বঙ্গোপসাগর থেকে মাছ আহরণ বন্ধ থাকায় এবার বেশি মাছ পাবেন বলে আশাবাদী জেলেরা। সাগরে মাছসহ মূল্যবান প্রাণিজ সম্পদের ভাণ্ডারের সুরক্ষায় চলতি বছরের ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার। ইলিশের জাটকা নিধনে নিষেধাজ্ঞারোপের সফলতাকে অনুসরণ করে বঙ্গোপসাগরে মাছসহ মূল্যবান প্রাণিজ সম্পদের ভাণ্ডারের সুরক্ষায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সামুদ্রিক মাছসহ চিংড়ি-কাঁকড়ার মতো ক্রাস্টেশান আহরণেও ছিল এ নিষেধাজ্ঞার আওতায়। জেলেরা বলছেন, সাগরে মাছ আহরণ নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যে কারণে দু’মাস ধরে তারা আর্থিক অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করেছেন। মঙ্গলবার কর্ণফুলী পাড়ে নতুন ফিশারি ঘাট এলাকায় কথা হয় জেলে আবুল কালামের সাথে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নৌকার জাল তুননের কাজ করছে। আবুল কালাম বলেন, প্রায় ২০-২২ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাগরে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। কিন্তু গত কয়েক বছর থেকে হঠাৎ করে মাছ ধরা বন্ধের নিষেধাজ্ঞার কারণে খুব বেকায়দায় পড়তে হয়েছে। অনেক দিন পর আবার সাগরে মাছ ধরতে যাবো। এরমধ্যে কুরবানির কারণে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি।’
পাশের আরেক জেলে সুলতান মিয়া বলেন, ‘ঈদের পড়েও লকডাউন শুরু হবে। তাই আগেভাগে প্রস্তুতি নিচ্ছি। ক্ষতিগ্রস্ত জালগুলো তুনছি। নৌকায় প্রয়োজনীয় মালামালও মজুদ করা হচ্ছে। সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক ড. মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন বলেন, আগে সমুদ্রে নানান প্রজাতির বড়বড় মাছ পাওয়া যেতো। কিন্তু এখন সচরাচর ওই ধরনের মাছ পাওয়া যায় না। মাছের প্রজননকালীনও সাগরে মাছ ধরা অব্যাহত থাকা এর প্রধান কারণ। যে কারণে এখন মাছের প্রজননকালীন দীর্ঘ ৬৫দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই সময়ে সাগরে মৎস্য ভাণ্ডারে পরিণত হয়েছে। বড় আকারসহ প্রচুর মাছ জেলেদের জালে ধরা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট পরিচালিত গবেষণা মতে, মে মাসের শেষের দিক থেকে জুলাই পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে বিচরণরত মাছসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর প্রজননকাল। এ কারণেই সাগরের মাছসহ বিভিন্ন মূল্যবান প্রাণিজসম্পদ রক্ষার পাশাপাশি ভাণ্ডার বাড়াতে দীর্ঘসময় মাছ আহরণের ওপর নিষেধাজ্ঞারোপের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সরকার। এর পরিপ্রক্ষিতে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়।