ঝড়ের কবলে পড়ে বঙ্গোপসাগরের ভাসানচরের কাছে ডুবে যাচ্ছে একটি কন্টেনার জাহাজ। আমদানিকৃত একশ কোটিরও বেশি টাকা দামের পণ্যবোঝাই কন্টেনার নিয়ে জাহাজটি চট্টগ্রামবন্দর থেকে পানগাঁও টার্মিনালে যাচ্ছিল। জাহাজটি থেকে পণ্যবোঝাই ৪০ ফুটি তিনটি কন্টেনার সাগরে ছিটকে পড়েছে। বাকি ৯৩টি কন্টেনারও কাত হয়ে অর্ধনিমজ্জিত জাহাজটিতে এলোমেলো অবস্থায় রয়েছে।
জাহাজটিতে পানি ঢুকছে। তবে এটি উপকূলের কাছে চরের মাটিতে আটকে গেছে বলে উল্লেখ করে সূত্র জানিয়েছে যে, জাহাজটি পুরোপুরি ডোবার আশংকা কম। তবে পুরোপুরি কাত হয়ে গেলে এটিকে রক্ষা করা কঠিন হবে। জাহাজটির ১৪ জন নাবিক একটি নৌকায় আশ্রয় নিয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জাহাজটি উদ্ধারে কান্ডারি–১০ এবং অপর একটি টাগ পাঠিয়েছে। একই সাথে জাহাজ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে।
সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল থেকে গতকাল সকালে ৯৬ টিইইউএস কন্টেনার নিয়ে এমভি পানগাঁও এক্সপ্রেস নামের জাহাজটি কেরানীগঞ্জের পানগাঁও টার্মিনালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন জাহাজটি ‘বেয়ারবোটচার্টার (পরিচালনাসহ সব দায়িত্ব ভাড়া নেওয়া প্রতিষ্ঠানের)’ চুক্তিতে পরিচালনা করে আসছে সী গ্লোরি শিপিং এজেন্সিস লিমিটেড। এই জাহাজটি দিয়ে মূলত চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি পণ্যবাহী কন্টেনার সাগর ও অভ্যন্তরীণ নৌপথ পাড়ি দিয়ে পানগাঁও টার্মিনালে নেওয়া হয়। একইভাবে টার্মিনালটি থেকে রপ্তানি পণ্য নৌপথে এনে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়।
গতকাল সকালে একশ কোটিরও বেশি টাকা দামের পণ্যবোঝাই কন্টেনার নিয়ে যাওয়ার পথে ভাসানচরের কাছে জাহাজটি তীব্র ঝড়ের কবলে পড়ে। উত্তাল সাগরে নানাভাবে চেষ্টা করেও জাহাজটির শেষ রক্ষা করা যায়নি। তীব্র রোলিং এর ফলে জাহাজটিতে পানি ঢুকে পড়ে। এই সময় জাহাজটি প্রায় ৩০ ডিগ্রী কাত হয়ে যায়। জাহাজ থেকে ৪০ ফুটি তিনটি পণ্যবোঝাই কন্টেনার সাগরে ছিটকে পড়ে। গতরাত নয়টা পর্যন্ত কন্টেনার তিনটির কোন হদিশ মিলেনি। দুর্ঘটনার সময় জাহাজটিতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের পাইলট থাকলেও জাহাজটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। এক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণহীন জাহাজটি ভাসানচরের কাছে চরে আটকা পড়ে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জাহাজটি কাত হয়ে রয়েছে। এটির বেশিরভাগ অংশ পানিতে ডুবে রয়েছে। এলোমেলো হয়ে আছে জাহাজের সব কন্টেনার। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের যুগ্ম পরিচালক সবুর খান সাংবাদিকদের বলেন, সাগর খুব উত্তাল হয়ে উঠেছিল। কোন সিগন্যাল না থাকলেও হঠাৎ করে উত্তাল হয়ে উঠা সাগরপাড়ি দেওয়ার সময় ৯৬ কন্টেনারবাহী জাহাজটিতে পানি ঢুকতে থাকে। এ সময় সাগরের উপকূলের দিকে নেওয়ার সময় জাহাজটি নিমজ্জিত হয়। সেখানে পানি কম থাকায় জাহাজটি পুরোপুরি ডুবে যায়নি। অর্ধনিমজ্জিত অবস্থায় রয়েছে। জাহাজের ১২ জন নাবিক ও বিআইডব্লিউটিএর দুই জন মাস্টার ও পাইলটসহ মোট ১৪ জন আরেকটি নৌযানে ওঠে রক্ষা পেয়েছেন বলেও তিনি জানান। পরে তাদের একটি বোটে করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
দুর্ঘটনার পর অপর একটি জাহাজ থেকে করা একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। যাতে দেখা যায় যে, কন্টেনারসহ জাহাজটি পুরোপুরি কাত হয়ে পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। জাহাজটির একাংশপানির ওপরে রয়েছে। কন্টেনারগুলোতে পানি ঢুকছে। জাহাজটি পরিচালনাকারী সী গ্লোরি শিপিং এজেন্সিস লিমিটেডের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, ঝড়ের কবলে পড়ে জাহাজটি চরে আটকে গেছে। তবে জাহাজটি উদ্ধার এবং কন্টেনারগুলো রক্ষা করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। দুর্ঘটনার পর একটি টেকনিক্যাল টিম (ডলফিনমেরিন) চেষ্টা করছে জাহাজের পানি ও কন্টেনার অপসারণের চেষ্টা করছে। জাহাজটি হালকা হলে ডকে মেরামতের জন্য নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক জানান, জাহাজটি পরিচালনাকারী সী গ্লোরিশিপিং এজেন্সিকে জাহাজটি দ্রুত উদ্ধার করা জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।
দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে নৌবাণিজ্য অফিসের ইঞ্জিনিয়ার সার্ভেয়ার রফিকুল ইসলাম ও বন্দরের সহকারী হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন মোস্তাহিদুল ইসলামকে সদস্য করে নৌবাণিজ্য অফিস একটি কমিটি গঠন করেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।












