সাগরে ইলিশ নেই, নেই নদীতেও। আকালে পড়েছে জেলেরা। বড় বড় ফিশিং জাহাজ কিংবা ট্রলার বা নৌকাগুলো লাখ লাখ টাকার জ্বালানি পুড়িয়ে দিনের পর দিন সাগরে ভাসলেও প্রত্যাশিত ইলিশের দেখা মিলছে না। ২২দিন বন্ধ থাকার পর উৎসবমুখর পরিবেশে জেলেরা সাগরে গেলেও ফিরতে শুরু করেছে মন খারাপ করে। দিনে চার টন তেল পুড়িয়ে মাত্র কয়েকশ’ কেজি ইলিশ নিয়ে ফিরছে বড় বড় ফিশিং জাহাজ। ইলিশের এই আকাল স্বাভাবিক নয় বলেও সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করে বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। পরিবেশ এবং প্রকৃতির অচিন পরিস্থিতিতে সাগর এবং নদী থেকে ইলিশ উধাও হয়ে গেছে। ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মা মাছ যাতে নির্বিঘ্নে ডিম ছাড়তে পারে সেজন্য ৪ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে ২৫ অক্টোবর মধ্যরাত পর্যন্ত ২২দিন সাগরে ইলিশ শিকার বন্ধ ছিল। গত ২৫ অক্টোবর মধ্যরাতের পর থেকে সাগরে যেতে শুরু করেন জেলেরা। চট্টগ্রাম থেকে ১৩০টি বড় সাইজের ফিশিং জাহাজ, ৬০টি কাঠবডির বড় ট্রলার এবং সারাদেশের ৩৫ থেকে ৪০ হাজার বোট সাগরে মাছ ধরতে যায়। কিন্তু জেলেরা হতাশ হয়ে ফিরতে শুরু করেছেন। কয়েকদিন সাগরে কাটিয়ে প্রত্যাশিত ইলিশ না পেয়ে তারা ফিরে আসতে শুরু করেছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, একেকটি স্টিল বডির ফিশিং জাহাজ ২৮দিনের অনুমতি নিয়ে সাগরে যায়। তবে মাছ শিকারের পরিমাণের উপর তাদের সাগরে থাকা নির্ভর করে। মাছ বেশি ধরা পড়লে ১৫দিনের মধ্যে ফিরে আসে। মাছ কম ধরা পড়লে আরো কয়েকদিন বেশিও থাকে। স্টিলবডির বড় ধরনের একটি ফিশিং জাহাজ দেড়শ’ থেকে তিনশ’ টন পর্যন্ত মাছ শিকার করে নিয়ে আসে। কাঠ বডির বড় বড় ট্রলারগুলো গড়ে ১৪ দিনের জন্য সাগরে যায়। তারা ১০ থেকে ১৪ দিন সাগরে থেকে ফিরে আসে। এসব ট্রলারে ৮০ টন থেকে ১৫০ টন পর্যন্ত মাছ থাকে। ছোট বোটগুলো ৩ থেকে সাত দিনের জন্য সাগরে যায়। এগুলো সর্বোচ্চ ২৫ থেকে ৩০ টন পর্যন্ত মাছ শিকার করে।
২২দিন বন্ধ থাকার পর মাছ শিকার উন্মুক্ত করা পর্যন্ত ফিশিং ট্রলার, কাঠের ট্রলার এবং বোটগুলো ঝাঁকে ঝাঁকে সাগরে যায়। কিন্তু দিনের পর দিন সাগরে ভেসেও তারা প্রত্যাশিত ইলিশের দেখা পায়নি। একেকটি জাহাজ খুবই সামান্য পরিমাণ ইলিশ শিকার করতে পেরেছে। একই অবস্থা নৌকা এবং কাঠের ট্রলারগুলোর। ইলিশ নেই সাগরে।
মন খারাপ করে ফিরে আসা একাধিক ট্রলারের জেলে দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে জানান, পরিস্থিতি একেবারে অস্বাভাবিক। কোনো ইলিশ নেই। পুরোদিনে একশ’ কেজি মাছও পাওয়া যায়নি। অথচ একদিনে একটি জাহাজে চার টনের মতো জ্বালানি পোড়াতে হয়। চার টন তেল পুড়িয়ে একশ’ কেজি মাছ না পাওয়ার পরিস্থিতি পুরো সেক্টরের জন্য বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টি করছে বলেও তারা মন্তব্য করেন।
স্টিল বডির জাহাজের মালিক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ইলিশের দেখা মিলছে না। সাগরে কয়েকদিন ধরে চেষ্টা করেও জাহাজগুলো প্রত্যাশিত ইলিশ পায়নি। তেল খরচও উঠবে না। ইলিশের এমন আকাল কেন হলো তা বুঝতে পারছেন না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ২২দিন মাছ শিকার বন্ধ ছিল। খুলে দেয়ার পর আমরা খুবই খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু ইলিশের দেখা মিলেনি। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এমনটি হয়েছে বলেও ধারণা ব্যক্ত করেন।
এসএম মামুন মিয়া নামের একজন ট্রলার মালিক জানান, একেবারে অস্বাভাবিক একটি ব্যাপার। আমাদের ধারণাতেই ছিল না যে এমন ব্যাপার ঘটবে। ইলিশের দেখা নেই, ট্রলার ও বোটগুলো খালি হাতে ফিরছে।
জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, শুধু সাগরে নয়, উপকূলীয় নদ-নদীতেও আর আগের মতো ইলিশ ধরা পড়ছে না। চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকায় ইলিশের ছড়াছড়ি চললেও এবার কেমন যেন সব হাওয়া হয়ে গেছে।
মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামালউদ্দিন চৌধুরী গতকাল দৈনিক আজাদীকে জানান, জেলেরা সাগরে গেলেও প্রত্যাশিত ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। জেলেদের উদ্বৃতি দিয়ে তিনি শীতের আবহ তৈরি হওয়ায় ইলিশ ধরা পড়ছে না বলেও মন্তব্য করেন।