মামলায় সাক্ষ্য দিতে হলে একজন সাক্ষীকে আদালত কক্ষে উপস্থিত থাকতে হয়। এতে দূরবর্তী কোন স্থানে অবস্থানকারী সাক্ষীর কষ্ট হয়ে যায়। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে গত রোববার নতুন প্র্যাকটিস নির্দেশনা জারি করেছে উচ্চ আদালত। এই নির্দেশনা অনুযায়ী এখন থেকে আদালত কক্ষে হাজির থাকতে হবে না সাক্ষীকে। সাক্ষী যেখানে আছেন সেখান থেকে অডিও–ভিডিও কনফারেন্স বা অন্য কোন ইলেট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে সাক্ষ্য দিবেন। এ পদ্ধতিতে শুনানিসহ মামলার যেকোন পর্যায়ের কার্যক্রমও অনুষ্ঠিত হবে। আদালত কর্তৃক নির্ধারিত ব্যক্তি পুরো কার্যক্রম পরিচালনায় সমন্বয় করবেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিচার কর্মে প্রযুক্তির ব্যবহার নিঃসন্দেহে বিচার কাজকে গতিময় করবে। একজন সাক্ষী যখন দূরবর্তী কোন স্থান থেকে সাক্ষ্য দিতে আসেন তখন তার কষ্ট হয়। সেটা শুধু তিনিই বুঝতে পারেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট একজন লিখেছেন, একজন সাক্ষী যখন সুদূর পঞ্চগড় থেকে সাক্ষী দিতে আসেন তখন আমি বুঝতে পারি তার কষ্ট। একই ভাবে আমি নিজেও যখন সাক্ষী দিতে যাই তখন অনুভব করি এই কষ্ট। অথচ এমন যদি হতো যে, আমি আমার অফিসে বসেই সাক্ষ্য দিতে পারতাম নিজের কাজ শেষ করে! আইনজীবীরা বলছেন, এর মাধ্যমে সরকারি অর্থ সাশ্রয়, সেবা লাভ থেকে বঞ্চিত না হওয়া, দীর্ঘ ভ্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া, দ্রুত এবং নির্ধারিত তারিখে সাক্ষ্য গ্রহণ সবই সম্ভব। এমনকি বিদেশে থাকা সাক্ষীরও সাক্ষ্য নেওয়া যাবে নতুন প্র্যাকটিস নির্দেশনা অনুযায়ী।
আইনজীবী তৌহিদুল মুনির চৌধুরী টিপু আজাদীকে বলেন, তেতুলিয়া থাকলেও বা বিদেশে থাকলেও একজন সাক্ষীর সাক্ষ্যদানে আর প্রতিবন্ধকতা থাকল না। তবে জারিকৃত নির্দেশনা যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে কিনা তা তদারকি করতে হবে। অপব্যহার হচ্ছে কিনা তা দেখতে হবে। জেলা পিপি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, এটি একটি ভালো পদক্ষেপ। বিচার ব্যবস্থা গতিশীল হবে। কোন সাক্ষী এখন অজুহাত দেখাতে পারবে না। উচ্চ আদালতের এই প্র্যাকটিস নির্দেশনা পালনে অপব্যহারের সুযোগ নেই উল্লেখ করে পিপি বলেন, এখানে সমন্বয়কারী থাকবেন।
প্র্যাকটিস নির্দেশনায় যা বলা আছে : তথ্য–প্রযুক্তি ব্যবহার আইন, ২০২০ এর ৫ ধারার ক্ষমতা বলে প্রধান বিচারপতি কর্তৃক জারি করা প্র্যাকটিস নির্দেশনায় বলা হয়, ভার্চুয়ালি বিচার কার্য পরিচালনার এই কার্যক্রমে আদালতপ্রাপ্ত, দূরবর্তীপ্রাপ্ত ও সমন্বয়কারী থাকবে। আদালতপ্রাপ্ত অর্থ হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট আদালত বা ট্রাইব্যুনাল কক্ষ যেখানে বিচারিক কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। দূরবর্তীপ্রাপ্ত অর্থ হচ্ছে, এমন একটি স্থান যেখানে মোকদ্দমায় কোন পক্ষ, সাক্ষী, আসামি বা আইনজীবী শারীরিকভাবে উপস্থিত থেকে অডিও–ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রম উপস্থিত হতে হবে। আর সমন্বয়কারী হচ্ছে, সমন্বয়ের জন্য আদালত কর্তৃক নির্ধারিত যেকোন ব্যক্তি।
নির্দেশনায় প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা বিষয়ে বলা হয়, আদালতপ্রান্তে একজন এবং দূরবর্তী প্রান্তে একজন সমন্বয়কারী থাকবেন। আদালত প্রান্তে আদালত নিজে অথবা আদালত কর্তৃক মনোনীত একজন সমন্বয়কারী হিসেবে থাকবেন। দূরবর্তী প্রান্তে যেমন দেশের বাইরে কনস্যুলেট বা দূতাবাসে একজন কর্মকর্তা সমন্বয়কারী থাকবেন। কারাগারে জেল সুপারিনটেন্ট বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, হাসপাতালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা মনোনীত কর্মকর্তা, নিরাপদ স্থান, প্রত্যায়িত প্রতিষ্ঠান, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র বা যেকোন প্রতিষ্ঠান যেখানে আইনের সংস্পর্শে আসা শিশু বা আইনের সাথে সংঘাতে জড়িত শিশুকে রাখা হয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সুপ্রীম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিসার, ফরেনসিক ল্যাবরেটরির কোন কর্মকর্তা এবং অন্য যে কোন স্থানের আদালত কর্তৃক মনোনীত যে কোন ব্যক্তি সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করবেন। নির্দেশনায় বলা হয়, আদালত প্রান্ত এবং দূরবর্তী প্রান্ত উভয় প্রান্তের সমন্বয়কারীরা নিশ্চিত করবেন যে অডিও–ভিডিও কনফারেন্সের সময়ে দফা ৩ এ উল্লেখিত সুবিধা সমূহ পাওয়া যাবে। দূরবর্তী প্রান্তের সমন্বয়কারী নিশ্চিত করবেন যে কনফারেন্সিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যক্তি নির্ধারিত সময়ের কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে দূরবর্তী প্রান্তে উপস্থিত হয়েছেন। অডিও–ভিডিও কনফারেন্স চলাকালীন কোন অননুমোদিত ব্যক্তি কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করবে না। যে ব্যক্তিকে পরীক্ষা করা হচ্ছে তাকে কোন ভাবে প্ররোচিত করা, টিউটর করা, বাধ্য করা হয়নি এবং যে ব্যক্তিকে পরীক্ষা করা হচ্ছে তাকে কনফারেন্স চলাকালীন সংশিষ্ট আদালতের অনুমতি ছাড়া কোনো নথি, খ্রিস্ট বা ডিভাইস দেখানো হয়নি।
আদালত অডিও–ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের সময়সূচি নির্ধারণ করে নোটিশ দেবেন এবং উপযুক্ত ক্ষেত্রে দূরবর্তী প্রান্তের সমন্বয়কারীর অফিসিয়াল ইমেইল একাউন্টে মামলার কাগজ পত্রের প্রয়োজনীয় অংশের স্ক্যানকপি পূর্বেই প্রেরণ করবেন। অডিও–ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের পদ্ধতি বিষয়ে নির্দেশনায় বলা হয়, মামলা সংশ্লিষ্ট পক্ষ, সাক্ষী, অভিযুক্ত ব্যক্তি আইনজীবী, বিশেষজ্ঞের আবেদনক্রমে বা আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে যেকোন মামলার যেকোন পর্যায়ের কার্যক্রম অডিও–ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের নির্দেশ প্রদান করতে পারবেন। এরূপ আবেদন প্রাপ্তি এবং সংশিষ্ট ব্যক্তিদের শুনানির পর আদালত সিদ্ধান্ত প্রদান করবেন যে, অডিও–ভিডিও কনফারেন্সিং এক্ষেত্রে আবশ্যিক কি না। আবেদন মঞ্জুর করা হলে আদালত অডিও–ভিডিও কনফারেন্সের সময় সূচি নির্ধারণ করবেন। জেলহাজতে আটক অভিযুক্ত বা সাক্ষীর ক্ষেত্রে কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করা যাবে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত জারিকৃত প্র্যাকটিস নির্দেশনা চলমান থাকবে বলেও নির্দেশনায় বলা হয়।