জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা নিয়ে এক প্রশ্নে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা বিএনপি নেতা ও জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার আমিনুল হকের প্রসঙ্গ টেনেছেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমিনুল জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিল, আমিনুলকে যেভাবে অত্যাচার করা হয়েছে, তখন কি আপনারা প্রশ্ন করেছিলেন?’
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন আসিফ নজরুল। তার কাছে সংবাদ মাধ্যমের কর্মীরা ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও শরিক দলের নেতাদের আদালতে হেনস্তা নিয়ে প্রশ্ন করেন, এর মধ্যে সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা নিয়েও প্রশ্ন উঠে। খবর বিডিনিউজের।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন গত ৫ আগস্ট ঢাকার আদাবরে মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই দিন পর পোশাক কর্মী মো. রুবেলের মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আসামি করে যে মামলা হয়েছে তাতে নাম আছে সাকিবেরও। যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এই মামলা, সাকিব তখন ব্যস্ত ছিলেন কানাডায় গ্লোবাল টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে। কোটা আন্দোলন ও সেটির সূত্র ধরে সরকার পতনের আন্দোলনের পুরো সময়টা দেশের বাইরেই ছিলেন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকেটে সংসদ সদস্য হওয়া এই ক্রিকেটার। সাকিব এই মুহূর্তে পাকিস্তান সফরে আছেন, রাওয়ালপিন্ডিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে টেস্টে ১০ উইকেটে জয়ে তারও উল্লেখযোগ্য অবদান আছে। দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তানের তিন জন ব্যাটারকে ফিরিয়েছেন তিনি।
আসিফ নজরুলের কাছে প্রশ্ন ছিল, সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। সে যেহেতু একজন স্টার, তাই দেশবিদেশে এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এটা নিয়ে আপনাদের অবস্থান কী? জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, এটাও আওয়ামী লীগই তো শুরু করেছে, তাই না? আমিনুল যে ফুটবলার, সাকিব তো আর বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য কিছু বয়ে আনে নাই। সাকিব নিজেই অনেক কিছু অর্জন করেছে। আমিনুল তো বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য পুরস্কার বয়ে এনেছিল। এনেছিল না? জাতীয় দলের ক্যাপ্টেন ছিল। সাকিবের বিরুদ্ধে তো জাস্ট মামলা হয়েছে আর আমিনুলকে তো জেলে ভরা হয়েছে। আমিনুলকে গ্রেপ্তারের পর দিনের পর দিন জামিন দিচ্ছিল না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি শুধু প্রথম আলোতে কলাম লিখেছি। আমি আপনাদের কাউকে লিখতে দেখি নাই, আপনাদের পত্রিকায়।
ফুটবলার আমিনুলের ভূমিকা তুলে ধরে আসিফ নজরুল বলেন, একটা জাতীয় দলের, বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল সাফ গেমসে তার ইয়েতে.. চ্যাম্পিয়নশিপে। গ্রেপ্তার করেছে মামলা–গ্রেপ্তার। দিনের পর দিন জামিন রিজেক্ট করেছে। আমি আশা করি সাকিব গ্রেপ্তার হবে না। আমি যতদূর জানি আমাদের পুলিশ বাহিনীকে বলা আছে যে, এপারেন্টলি অবিশ্বাস্য কিছু হলে যতটা পারা যায় আইনের মধ্যে থেকে রিস্টেইন বজায় রাখার জন্য।
জাতীয় ফুটবল দল থেকে অবসরে যাওয়ার পরে আমিনুল হক রাজনীতিতে যোগ দেন। তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব। নাশকতার একাধিক মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরকার পতনের দাবিতে বিএনপির আন্দোলনে একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন সাবেক ফুটবলার আমিনুল হক। সরকার পতনের দাবিতে বিএনপির আন্দোলনে একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন সাবেক এই ফুটবলার।
সাকিব আল হাসান ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। সেবার না পেলেও গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মাগুরা–১ আসন থেকে তিনি নৌকা নিয়ে নির্বাচিত হন। শেখ হাসিনার পতনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা যেমন হচ্ছে, তেমনি গ্রেপ্তারও করা হচ্ছে অনেককে। সাকিবকেও গ্রেপ্তার করা হবে কি না, এ নিয়ে মানুষ প্রশ্ন তুলছে সামাজিক মাধ্যমে।
এই প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা নিজে থেকেই বলেন, এটা পুলিশ প্রশাসনের ব্যাপার। আমাদের.. আমরা যতটুকু বলার, বলার চেষ্টা করেছি। মামলা হওয়া বা এফআইআর হওয়া মানেই তো গ্রেপ্তার না। আমার বিশ্বাস– আমার বিশ্বাস আমাদের মানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ নেওয়া হবে, যাতে কেউ অতি উৎসাহিত হয়ে গ্রেপ্তার না করতে যায়।
আদালতে আসামিদের ওপর হামলার চেষ্টা, তাদেরকে পিটুনি এমনকি আইনজীবীদের কথা বলতে না দেওয়ার প্রসঙ্গে আসিফ নজরলে বলেন, আপনারা যতগুলো প্রশ্ন করেছেন, সবগুলোর জন্মদাতা হচ্ছে আওয়ামী লীগ। আমি কি বাড়িয়ে বলছি? সব কিছু। কোনটার কোন এঙাম্পল চান? তারা এমন একটা পর্যায়ে– আপনারা জানেন, এভরি অ্যাকশন হ্যাজ সাম রিয়েকশন। ইক্যুয়াল রিয়েকশন বলে। কিছু রিয়েকশন হয়, সেটা আমরা পছন্দ করি না। বাট এই রিয়েলিটি তো বুঝতে হয়। এটা তো আউট অব দ্যা ব্লু (অপ্রত্যাশিত কিছু) আসে নাই, আউট অব দ্য ব্লু (অপ্রত্যাশিত কিছু) আসে নাই।