সাকিবের ব্যাটে ওয়ানডে সিরিজ বাংলাদেশের

ক্রীড়া প্রতিবেদক | সোমবার , ১৯ জুলাই, ২০২১ at ৬:৩৩ পূর্বাহ্ণ

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজটা নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল রোববার হারারের স্পোর্টস ক্লাব মাঠে সাকিবের ব্যাটে ভর করে বাংলাদেশ ৩ উইকেটে জিম্বাবুয়েকে হারায়। ফলে তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকার পাশপাশি সিরিজও নিজেদের করে নিল।
সর্বশেষ ১২ বছর আগে, ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের মাটিতে ৪-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল টাইগাররা। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করা জিম্বাবুয়ে ২৪১ রানের লক্ষ্য দেয় টাইগারদের। বাংলাদেশ সে লক্ষ্যে ব্যাট করতে গিয়ে টপ অর্ডারদের ব্যর্থতায় শংকা জাগিয়ে তোলে। আফিফ হোসেন ধ্রুব যখন আউট হন ১১ ওভারে তখনও ৬৮ রান দরকার বাংলাদেশের। হাতে মাত্র ৩ উইকেট। ভরসা হয়ে একটা প্রান্ত ধরে রাখেন সাকিব আল হাসান। কঠিন পরিস্থিতি থেকে ঠান্ডা মাথায় দলকে বের করে আনেন, রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে শেষ ওভারে এনে দেন ৩ উইকেটের জয়। সিরিজ জেতার ম্যাচে নায়ক সাকিব এবং তা ব্যাটে-বলেই।
প্রথমে বোলিংয়ে ১০ ওভারে ৪২ রানে নিয়েছিলেন ২ উইকেট। পরে ব্যাট হাতে দলের চরম বিপদে খেললেন ৯৬ রানের হার না মানা ইনিংস। আর মাঠ ছাড়েন বীর বেশে। সাকিবকে যথার্থ সঙ্গ দেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। অষ্টম উইকেটে সাকিবের সঙ্গে ৬৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে তোলেন সাইফ। ৩৪ বল খেলে এক বাউন্ডারিতে তিনি করেন ২৮ রান। শেষ দুই ওভারে ১২ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের, সেঞ্চুরি করতে সাকিবের তখন প্রয়োজন ১০। তেন্দাই চাতারার ওই ওভারের শেষ বলে চার মারেন সাইফউদ্দিন। শেষ ওভারে লাগে মাত্র ৩ রান। আর স্ট্রাইকে গিয়ে মুজারাবানিকে থার্ডম্যান এরিয়া দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে জয় তুলে নেন সাকিব। দলের কঠিন বিপদের মুখে ১০৯ বলে ৮ বাউন্ডারিতে গড়া সাকিবের ৯৬ রানের ইনিংসটি ছিল সেঞ্চুরির চাইতে বেশি, বাংলাদেশের জন্য মূল্যবান। ৫ বল বাকি থাকতেই ৭ উইকেটে ২৪২ রান হয়ে যায় বাংলাদেশের।
এর আগে ২৪১ রান তাড়ায় শুরুটা খারাপ ছিল না তামিম ইকবাল আর লিটন দাসের। ৯.৩ ওভারের উদ্বোধনী জুটিতে তারা তোলেন ৩৯ রান। প্রথমে আউট হন তামিম। লুক জঙউইকে ড্রাইভ করতে গিয়ে পয়েন্টে সিকান্দার রাজার দুর্দান্ত ক্যাচ হন। ৩৪ বলে ৪ বাউন্ডারিতে বাংলাদেশ অধিনায়ক তখন ২০ রানে। এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি লিটন দাসও। মিডঅনে তার সহজ ক্যাচ নেন ব্রেন্ডন টেলর। ৩৩ বলে ৪ বাউন্ডারিতে লিটনের ব্যাট থেকে আসে ২১ রান। এরপর মোহাম্মদ মিঠুন এসে দলকে বিপদে ফেলে যান। জঙউইকে উইকেট উপহার দেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। কভার পয়েন্টে ক্যাচ দেন মাদভেরেকে। ৩ বলে ২ রান করেন তিনি। ৫০ রানে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর মোসাদ্দেক হোসেন হন দুর্ভাগ্যজনক রান আউটের শিকার। ১৯তম ওভারের প্রথম ডেলিভারিতে এনগারাভার ওয়াইড বলটি উইকেটরক্ষক রেগিস চাকাভার হাত ফসকে গেলে এক রান নিতে চান মোসাদ্দেক, সাকিবও দৌড় দেন। কিন্তু মোসাদ্দেক স্ট্রাইকার এন্ডে পৌঁছানোর আগেই স্ট্যাম্প ভেঙে দেন চাকাভা। তিনি করেন ৫ রান। ৭৪ রানে ৪ উইকেট হারানো দলকে টেনে তোলার দায়িত্ব নেন সাকিব আর বিপদের ভরসা মাহমুদউল্লাহ। পঞ্চম উইকেটে ৫৬ রানের জুটি গড়েন তারা। শেষ পর্যন্ত এই জুটি ভেঙে যায়। মাহমুদউল্লাহ কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। ৩৫ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ২৬ রান করেন তিনি। তার বিদায়ে আবার বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। মেহেদি হাসান মিরাজ সুবিধা করতে পারেননি। মাদভেরেকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে মায়ের্সের ক্যাচে পরিণত হন এই অলরাউন্ডার, মাত্র ৬ রান করেন মিরাজ। আফিফ হোসেন ধ্রুব উইকেটে এসে সাকিবকে সঙ্গ দেয়ার চেষ্টা করেন। ঝুঁকিপূর্ণ শট না খেলে সিঙ্গেলস-ডাবলসে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ২৩ বলে কোনো বাউন্ডারি ছাড়াই ১৫ রান করা আফিফ শেষ পর্যন্ত ঝুঁকি নিতে গিয়েই আউট হয়েছেন। সিকান্দার রাজাকে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন। তাতেই ১৭৩ রানে ৭ উইকেটে পরিণত হয় টাইগাররা। এর আগে যুব বিশ্বকাপ জয়ী পেসার তরুণ শরিফুল ইসলামের বিধ্বংসী বোলিং সত্ত্বেও বাংলাদেশের সামনে ৯ উইকেটে ২৪০ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর দাঁড় করায় জিম্বাবুয়ে।
ফিল্ডিং করতে নেমে প্রথম ওভারেই দলকে উল্লাসে মাতান ডান হাতি পেসার তাসকিন আহমেদ। তার করা প্রথম ওভারের শেষ বলে কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে দাঁড়ানো আফিফ হোসেন ধ্রুবর হাতে ধড়া পড়েন ডানহাতি ওপেনার তিনাশে কামুনহুকামুই। তিনি করেন ১ রান। তবে সাইফউদ্দিনের করা চতুর্থ ওভারে জোড়া বাউন্ডারিতে ১০ রান তোলেন চাকাভা। তাসকিনের করা পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে মিড অনে মাহমুদউল্লাহ ও ডিপ থার্ড ম্যানে মারুমানির ক্যাচ ছেড়ে দেন সাইফউদ্দিন। অবশ্য জোড়া জীবন পেয়েও কিছুই করতে পারেননি মারুমানি। ষষ্ঠ ওভারে প্রথমবারের মতো আক্রমণে আসেন মিরাজ। প্রথম চার বল খেলেন চাকাভা। পঞ্চম বলে স্ট্রাইক পেয়েই বড় শটের চেষ্টা করেন মারুমানি। কিন্তু বল তার ব্যাট ও পা হয়ে আঘাত হানে স্ট্যাম্পে। ফলে সমাপ্তি ঘটে ১৮ বলে ১৩ রানের ইনিংসের। মাত্র ৩৩ রানে জোড়া উইকেট পতনের পর উইকেটে আসেন টেলর। শুরু থেকেই খেলতে থাকেন আত্মবিশ্বাস নিয়ে। সাকিবের ওভারে ইনসাইড আউট শটে বাউন্ডারি কিংবা শরিফুল ইসলামের ওভারে ফ্লিক শটে ছক্কা মারেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক। টেলরের আধিপত্য বিস্তার করা ব্যাটিংয়ে তৃতীয় উইকেট জুটিটি এগুচ্ছিল পঞ্চাশ রানের দিকে। তবে ইনিংসের ১৬তম ওভারে নিজের চতুর্থ ওভার করতে এসে সরাসরি বোল্ড করে চাকাভাকে সাজঘরে পাঠিয়ে দেন সাকিব।
আউট হওয়ার আগে ৩২ বলে ২ চারের মারে ২৬ রান করেছেন চাকাভা। এরপরই প্রতিরোধ গড়ে দাঁড়িয়ে যান ব্রেন্ডন টেলর এবং ডিওন মায়ার্স। টেলর ৪৬ রান করার পর দুর্ভাগ্যজনক হিটআউট হন। বোলার ছিলেন শরিফুল ইসলাম। ডিওন মায়ার্সও বিপজ্জনক হয়ে উঠছিলেন। ৫৯ বলে ৩৪ রান করে মায়ার্স আউট হন সাকিবের বলে। মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ তুলে দেন মায়ার্স। এরপর হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন মাধভিরে। শরিফুল ইসলামের বলে তামিম ইকবালের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ৫৬ করে। সিকান্দার রাজা কিন্তু মাধভিরের সঙ্গে ভালো একটা জুটি গড়েন। ৪৪ বলে তিনি করেন ৩০ রান। ১০ ওভারে ৪৬ রান দিয়ে ক্যারিয়ার সেরা ৪ উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম। ২ উইকেট নেন সাকিব আল হাসান, ১টি করে উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন এবং তাসকিন আহমেদ। ব্যাটে-বলে নৈপূন্যের সুবাদে ম্যাচ সেরা হন সাকিব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনয় মুক্তিযোদ্ধার নামে গাছে নামফলক
পরবর্তী নিবন্ধপবিত্র হজ আজ