সাকিব আল হাসানকে নিয়ে অনেক বিতর্ক। এবার চেন্নাই টেস্টে বোলিংয়ে অনেক দেরিতে আসা, কম বোলিং করা এবং বোলিংয়ের ধার কমে যাওয়া নিয়ে আলোচনা চলছিল ধারাভাষ্যে। এর মধ্যেই মুরালি কার্তিক জানালেন বিস্ফোরক এক তথ্য। সেটি জন্ম দিল নতুন প্রশ্ন ও বিতর্কের। চেন্নাই টেস্টের তৃতীয় দিন সকালে মাঠে সাকিবের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় ধারাভাষ্যকার মুরালি কার্তিককে। পরে ধারাভাষ্যের এক পর্যায়ে কার্তিকের কাছে তামিম ইকবাল জানতে চান, সাকিবের সঙ্গে তার কী কথা হলো এবং এত পরে বোলিংয়ে আসা বা কম বোলিং করা নিয়ে কিছু কি জানা গেল কি না। কার্তিক তখন জানালেন চমকে ওঠার মতো তথ্য। ভারতের এই বাঁহাতি স্পিনারকে সাকিব জানিয়েছেন যে তার বোলিং আঙুলে (তর্জনি) অস্ত্রোপচার করানো হয়েছে এবং সেই আঙুল তিনি ঠিকভাবে নাড়াতে পারছেন না এখনও। কিছুটা ফুলে আছে সেখানে, তাই বল গ্রিপ করার সময় সেভাবে ‘ফিল’ পাচ্ছেন না তিনি। এছাড়া তার কাঁধেও একটু সমস্যা আছে। সব মিলিয়েই এত কম বোলিং করছেন সাকিব এবং বোলিংয়েও নেই প্রত্যাশিত ছন্দ। সাকিবের আঙুলের সমস্যা নিয়ে কিছুটা গুঞ্জন বেশ কিছুদিন ধরেই চলছিল। তবে তার পক্ষ থেকে বা বিসিবি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। অস্ত্রোপচারের মতো গুরুতর কোনো ব্যাপারেও কোনো তথ্য জানানো হয়নি। পরবর্তীতে ধারাভাষ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন টিম ম্যানেজমেন্টের দিকে ছুড়ে দিলেন তামিম ইকবাল। ‘মুরালি কার্তিক যা বললেন, সত্যিই যদি সাকিবের আঙুলে সমস্যা থাকে, তাহলে তো টিম ম্যানেজমেন্টের আগে থেকেই তা জানার কথা। তিনি ঠিকমতো বল করতে পারছেন না, মানে বাংলাদেশ কার্যত চার জন প্রথম সারির বোলার নিয়ে খেলছে। টিম ম্যানেজমেন্টের তো এটা জানার কথা! অবশ্যই এই ব্যাপারটি তাদের দেখা উচিত।’ তামিমের ইঙ্গিতটা পরিষ্কার। বাংলাদেশের স্কোয়াডে আরও দুজন স্পিনার আছেন, তাইজুল ইসলাম ও নাঈম হাসান। সাকিবের আঙুলে সমস্যা থাকলে বিকল্প বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিলই। ভারতের বিপক্ষে চলতি চেন্নাই টেস্টের প্রথম দিনে সাকিবকে বোলিংয়ে আনা হয় ৫২ ওভারের পর। সেদিন যদিও পেসাররা ভালো করছিলেন। তার পরও দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও সফলতম বোলারকে এত পর বোলিংয়ে আনা ছিল প্রশ্ন জাগানিয়া। ধারাভাষ্যকাররাও সেটা বারবার বলছিলেন। দলের অন্য স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ততক্ষণে ১১ ওভার বোলিং করে ফেলেছেন। প্রথম ইনিংসে ৮ ওভার বোলিং করে ৫০ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকেন সাকিব। অন্তত পাঁচ ওভার বোলিং করেছেন, এমন ইনিংসে তার সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে ওভার প্রতি রান সবচেয়ে বেশি দিয়েছেন এই ইনিংসেই। দ্বিতীয় ইনিংসে অবশ্য দ্রুতই বোলিংয়ে আনা হয় তাকে। দ্বিতীয় দিনের শেষ বিকেলে খুব একটা খারাপ বোলিং করেননি তিনি। ৬ ওভারে ২০ রান দিয়ে উইকেটশূন্য ছিলেন। তবে তৃতীয় দিন সকালে আবার তাকে দীর্ঘক্ষণ বোলিংয়ে দেখা যায়নি। শুবমান গিল ও রিশাভ পান্ত দ্রুত রান তুললেও সাকিবকে বোলিং থেকে দূরে রাখা হয়। অবশেষে দিনের ২৩ ওভার শেষে তাকে দেখা যায় আক্রমণে। কিন্তু তার বোলিং ছিল একদম সাদামাটা। লাঞ্চের আগে তার তিন ওভার থেকে রান আসে ২৪। তার বলে একটি ক্যাচ অবশ্য ছেড়ে দেন নাজমুল হোসেন শান্ত। চোখের সমস্যা দেখা দেওয়ার পর থেকে সাকিব ব্যাটিংয়ে ভুগছেন নিয়মিতই। দু–একটি ইনিংসে ভালো ব্যাট করা ছাড়া সেভাবে তার ব্যাট কথা বলেনি। শুধু রান করার ব্যর্থতাই নয়, উইকেটে বেশির ভাগ সময় তাকে মনে হয়েছে নড়বড়ে। ক্যারিয়ারজুড়ে তার বোলিং ছিল বরাবরই ধারাবাহিক। খুব বেশি বাজে সময় তার আসেনি। কিন্তু গত কয়েক মাসে বল হাতেও তিনি ছিলেন বিবর্ণ। গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি সিরিজে তিন ম্যাচে তার উইকেট ছিল একটি। পরে বিশ্বকাপে ছয় ম্যাচে তার উইকেট ছিল মোটে তিনটি। চার ম্যাচেই উইকেট পাননি তিনি। পরে টি–টোয়েন্টি লিগগুলোতেও তাকে বল হতে সেরা চেহারায় দেখা যায়নি। পাকিস্তান সফরে ২টি উইকেট পেলেও কাউন্টি ক্রিকেটে তাকে জ্বলে উঠতে দেখা যায়। সারের হয়ে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচে সমারসেটের বিপক্ষে ৯ উইকেট শিকার করেন তিনি। তাতে জাতীয় দলের হয়েও বোলার সাকিবকে সেরা চেহারায় পাওয়ার আশা ফেরে। কিন্তু চেন্নাইয়ে আবার তিনি অনুজ্জ্বল। এর মধ্যেই জানা গেল তার আঙুলের অস্ত্রোপচারের কথা। তবে সাকিবের সেই অস্ত্রোপচার ঠিক কোন সময়ে হয়েছে, সেটি জানাননি কার্তিক।