সাঈদীর মৃত্যু : ডাক্তারকে প্রাণনাশের হুমকি, থানায় জিডি

চিকিৎসা সঠিক নিয়মে হয়েছে : বিএসএমএমইউ শাহবাগে হামলায় সাঈদীর ছেলেসহ আসামি ৫ হাজার

| বৃহস্পতিবার , ১৭ আগস্ট, ২০২৩ at ৮:১২ পূর্বাহ্ণ

যুদ্ধাপরাধের দণ্ডিত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ার পর প্রাণনাশের হুমকি পাওয়ার অভিযোগে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন একজন চিকিৎসক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদরোগ বিভাগের অধ্যাপক এস এম মোস্তফা জামান গত মঙ্গলবার রাতে ধানমন্ডি থানায় গিয়ে এই জিডি করেন।

মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাঈদী কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে গাজীপুরের তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে ১৩ অগাস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে হৃদরোগ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক চৌধুরী মেশকাত আহমেদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪ অগাস্ট রাতে মৃত্যু হয় সাঈদীর। তার চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলে ছিলেন এস এম মোস্তফা জামান। এ ঘটনায় গতকাল পুলিশের দুটি বিশেষ ইউনিট ঢাকার উত্তরা ও ঝিনাইদহ থেকে এক নারীসহ দুইজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়ে সংবাদমাধ্যমে বার্তা পাঠিয়েছে। র‌্যাব তফসিরুল ইসলাম (২৩) নামের এক ব্যক্তিকে ঝিনাইদহের মহেশপুর থেকে গ্রেপ্তার করে। অপরদিকে উত্তরা থেকে একই অভিযোগে হাফিজা মাহবুবা বৃষ্টি (৩২) নামে এক নারীকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সিটিটিসি। খবর বিডিনিউজের।

জিডিতে তিনি বলেছেন, ‘কতিপয় ব্যক্তি’ সামাজিক মাধ্যম এবং ইউটিউবে বিভিন্ন আইডি থেকে তার বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচার’ করছে। মেসেঞ্জারে বিভিন্ন গ্রুপে এবং ফেসবুকে তার ব্যক্তিগত আইডিতে ‘ভয়ভীতি’ দেখাচ্ছে এবং ‘প্রাণনাশের হুমকি’ দিচ্ছে। তাতে তিনি ‘ভীত, শঙ্কিত’। ফেসবুক ও ইউটিউব ব্যবহারকারীদের কয়েকটি লিংক জিডিতে উল্লেখ করে এই চিকিৎসক বলেছেন, তারা এবং তাদের অনুসারী ব্যক্তিরা যে কোনো সময় আমার এবং আমার পরিবারের সদস্যদের খুন, জখমসহ বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে।

তবে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর চিকিৎসা যথাযথ প্রটোকল মেনেই হয়েছে বলে জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালে ভর্তি সাঈদীর রোগের ধরন, চিকিৎসা ও সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে তার ছেলে মাসুদ সাঈদী অবগত ছিলেন। চিকিৎসককে প্রাণনাশের হুমকির পর সাধারণ ডায়েরির প্রেক্ষাপটে গতকাল সংবাদমাধ্যমে প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন বক্তব্য এল বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের।

বিএসএমএমইউর রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হাফিজুর রহমানের স্বাক্ষরে পাঠানো এ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৩ অগাস্ট রাত সাড়ে ১০টায় বিএসএমএমইউর জরুরি বিভাগে আনা হয় ৮৪ বছর বয়সী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে। তার ভর্তি থেকে শুরু করে পরবর্তী সব চিকিৎসা বিধিসম্মতভাবে আন্তর্জাতিক প্র্যাকটিস অনুসরণ করে সম্পন্ন হয়। তার চিকিৎসার দায়িত্বে নিয়োজিত বিশেষজ্ঞ অধ্যাপকরা সঠিকভাবে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন। পরদিন ১৪ অগাস্ট বিকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে তার সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। অ্যাডভান্স কার্ডিয়াক লাইফ সাপোর্ট প্রটোকল অনুযায়ী তার চিকিৎসা চলতে থাকে; কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত রাত ৮টা ৪০ মিনিটে তিনি মারা যান। এই রোগের গতিপ্রকৃতি, চিকিৎসা ও সম্ভাব্য পরবর্তী পরিণতি সম্পর্কে তার সন্তান মাসুদ সাঈদী অবগত আছেন।

এদিকে সাঈদীর মরদেহ পিরোজপুরে নেওয়ার সময় ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহবাগ মোড়ে হামলাভাঙচুরের ঘটনায় তার ছেলেসহ জামায়াতশিবিরের ৫ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে শাহবাগ থানার দায়ের করা এ মামলায় সরকারি কাজে বাধা, মারধর, গাড়িতে আগুন দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে বলে ওসি নুর মোহাম্মদ জানান। মামলায় চারজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলেনসাঈদীর ছোট ছেলে মাসুদ সাঈদী, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, ইসলামিক ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি সফিকুল ইসলাম মাসুদ এবং ঢাকা মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাইফুল ইসলাম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনাফ নদীতে অভিযান, ৫ কেজি আইস ও ৫ লাখ ইয়াবা উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধ ৩৮ ঘণ্টা বন্ধ ছিল এনআইডি সার্ভার