বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শক্তিমান গল্পকার, কবি ও সাংবাদিক সাইয়িদ আতীকুল্লাহ। তাঁর সৃষ্টি আধুনিকতার নিরীক্ষাধর্মী বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। এতে সমকালীন রাজনীতি ও রাজনৈতিক পরিবেশ, সমাজ বাস্তবতা প্রভৃতির নিখুঁত চিত্র আঁকা হয়েছে। তাঁর ছোটগল্প স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে অনন্য।
সাইয়িদ আতীকুল্লাহর জন্ম ১৯৩৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল জেলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করে সাংবাদিকতাকে বেছে নেন পেশা হিসেবে। বায়ান্নোর ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের সময় হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ সংকলনে তাঁর একটি ছোটগল্প ছাপা হয়েছিল। ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে কারারুদ্ধ হতে হয়েছে তাঁকে। মহান মুক্তিযুদ্ধে ছিল তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ। স্বৈরাচার ও সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন শেষ বয়সেও। সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে পরিপূর্ণভাবে তিনি ছিলেন এক প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর, সংগ্রামী কলম যোদ্ধা। শিল্পসৌকর্যের স্বাতন্ত্রে অল্প কিছু ছোটগল্প লিখেই বাংলা ছোটগল্পের ধারায় বিশেষভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। ‘বুধবার রাত’ তাঁর একমাত্র গল্পগ্রন্থ। গল্পগুলো তরুণ বয়সে লেখা। পরিণত বয়সে প্রধানত কাব্যচর্চা করেছেন। কাব্যগ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে বেশ কয়েকটি। সাইয়িদ আতীকুল্লাহর রচনা আধুনিতকার নীরিক্ষাধর্মী বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। এতে তীক্ষ্ণ জীবনবোধ, সমকালীন রাজনীতি ও রাজনৈতিক পরিবেশ এবং সমাজ বাস্তবতার ছবি আঁকা হয়েছে নিখুঁতভাবে। পরাধীন স্বদেশভূমির অবনত অবস্থা তাঁকে নিয়তই ব্যথিত করতো। তাই সর্বদাই লালন করতেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। আতীকুল্লাহর রচনাসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘আমাকে ছাড়া অনেক কিছু’, ‘আঁধির যতো শত্রুমিত্র’, ‘সবখানেই চড়া রোদ’, ‘চেয়ে দেখি কত কিছু’, ‘শাসন নেই ধমক নেই’, ‘একই টেবিলে দশজন’ এবং ‘বুধবার রাত’। এছাড়া ইংরেজি, রুশ ও উর্দু ভাষা থেকে অনুবাদ করেছেন কিছু গ্রন্থ। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার, পদাবলী পুরস্কার, ও আবুল মনসুর আহমদ সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। নিতান্ত সাদাসিধে জীবনে অভ্যস্ত সাইয়িদ আতীকুল্লাহ ব্যক্তিজীবনে ছিলেন নির্মোহ ও আদর্শবান। ১৯৯৮ সালের ১৪ নভেম্বর প্রয়াত হন সাইয়িদ আতীকুল্লাহ।