নিয়ম না মেনে গম খালাসের জন্য নির্ধারিত সাইলো জেটিতে পাথর খালাস করা হচ্ছে। জাহাজের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত এই জেটিতে হাজার হাজার টন পাথর খালাস এবং সরবরাহ জেটির অপারেশনাল কার্যক্রম হুমকির মুখে ফেলছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
চলতি মাসে বেশ কয়েকটি গমবাহী জাহাজ আসছে। সাইলো জেটি কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে সরকারি খাতে আমদানিকৃত হাজার হাজার টন গম খালাস অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। অবশ্য সাইলো জেটি কর্তৃপক্ষ এই আশঙ্কা নাকচ করে বলেছে, নিয়ম কানুন মেনেই বন্দর কর্তৃপক্ষ সাইলোতে জাহাজ ভিড়িয়েছে। এতে কোনো সমস্যা হবে না বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।
জানা যায়, সরকারিভাবে আমদানিকৃত গম খালাসে সবচেয়ে বড় স্থাপনা হচ্ছে নগরীর উত্তর পতেঙ্গা গ্রিন সাইলো। কর্ণফুলী নদীতে নির্মিত খাদ্য বিভাগের গ্রিন সাইলো জেটিতে জাহাজ বার্থিং করে গম খালাস করে। এখানে বার্থিং করা জাহাজ থেকে পাইপের সাহায্যে বিশেষ ব্যবস্থায় গম খালাস করা হয়। এই গুদামের গম ধারণক্ষমতা ১ লাখ ২০ হাজার টন।
সাইলো জেটি গমবাহী জাহাজের জন্য নির্মিত এবং নির্ধারিত। তবে চট্টগ্রাম বন্দরে কিংবা বহির্নোঙরে যখন গমবাহী জাহাজ থাকে না তখন বন্দর কর্তৃপক্ষ অন্যান্য পণ্যবাহী কিংবা খালি জাহাজ এই জেটিতে নোঙর করে। পণ্যবাহী জাহাজ বার্থিং দেয়া হলেও শুধুমাত্র পোর্ট সাইটে পণ্য খালাসের অনুমোদন দেয়া হয়। অর্থাৎ সাইলো জেটিতে নোঙর করা মাদার ভ্যাসেলের পাশে নদীতে অবস্থান নিয়ে লাইটারেজ জাহাজে পণ্য খালাসের অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই জেটির পোর্ট সাইটে পণ্য খালাসের অনুমোদন দেয়া হয় না। সাইলো জেটিতে থাকা বিভিন্ন ধরনের পাইপ, রেললাইনের ট্র্যাকসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় কোনো জাহাজকে সাইলোতে পণ্য খালাসের অনুমোদন দেয়া হয় না।
কিন্তু নিয়ম না মেনে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে সাইলো জেটিতে পাথর খালাস করা হচ্ছে। ওখান থেকে শত শত ট্রাক পাথর সরবরাহও নিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে গত দুদিন ধরে চট্টগ্রামের শিপিং সেক্টরে তোলপাড় চলছে। সিঙ্গাপুর থেকে আসা পানামার পতাকাবাহী এমভি পিএইচসি ডায়নামিক সাইলো জেটিতে নোঙর করে পণ্য খালাস করে। জাহাজটিতে ৮ হাজার ২শ টন সিরামিক পাথর রয়েছে। জাহাজটি থেকে নদীর দিকে (ওভার সাইটে) পণ্য খালাস হচ্ছে না। জাহাজের পাথর নামানো হচ্ছে সাইলো জেটিতে। ওখান থেকে ভারী পে লোডার ব্যবহার করে শত শত ডাম্প ট্রাকে বোঝাই করে পাথর সরবরাহ করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, সাইলো জেটি গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থাপনা। তবে ২০১৬ সালে বিদেশি একটি জাহাজের ধাক্কায় জেটিটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমভি সামির নামের ওই জাহাজ থেকে ক্ষতিপূরণ নেয়া হলেও জেটি পুরোপুরি সংস্কার করা হয়নি। জেটির বিভিন্ন অংশে দুর্বলতা রয়েছে। এখন হাজার হাজার টন পাথরের চাপে জেটি আরো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কিনা তা নিয়ে অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
অপর একজন কর্মকর্তা জানান, চলতি মাসে বেশ কয়েকটি গমবাহী জাহাজ আসছে। এসব জাহাজের গম সাইলো জেটিতে খালাসের প্রোগ্রাম রয়েছে। এখন পাথর হ্যান্ডলিং করার কারণে যদি জেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে সরকারি গম খালাসে সংকট দেখা দেবে। এমভি পিএইচসি জাহাজের স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে এফএমএস মেরিন এজেন্সি। জাহাজ থেকে পাথর খালাসের স্টিভিডোরিং প্রতিষ্ঠান মেসার্স আকমল খান।
গ্রিন সাইলোর সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, জেটিতে কী ধরনের জাহাজ বার্থিং দেয়া হবে তা বন্দর কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে দেয়। আমাদের গমবাহী জাহাজ না থাকায় বন্দর থেকে পাথরবাহী জাহাজ দেয়া হয়েছে। এতে জেটির ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বন্দরের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, এই জেটির মালিক খাদ্য বিভাগ। এখানে বন্দরের নিয়ন্ত্রণ নেই, শুধু একটি চুক্তি আছে। ওই চুক্তির আলোকে জেটি খালি থাকলে বন্দর কর্তৃপক্ষ অলস জাহাজ কিংবা ওভার সাইটে পণ্য খালাস হবে এমন জাহাজ ভিড়ানোর অনুরোধ করে। সাইলো কর্তৃপক্ষ অনুরোধ রাখতে পারে, না-ও পারে। অবশ্য আমদানিকারক, শিপিং এজেন্ট এবং স্টিভিডোরদের অনুরোধে বিভিন্ন সময় সাইলো কর্তৃপক্ষ বিশেষ পদক্ষেপ নেয়। এসব ‘বেসরকারি অনুরোধে’র সাথে বন্দর কর্তৃপক্ষের কোনো সম্পর্ক নেই।