দেশের কোথাও সাইলো (খাদ্য গুদাম) খালি নেই। একই সাথে প্রায় চার লাখ টন গম আমদানি করায় সাইলোগুলোতে রাখা যাচ্ছে না। প্রচলিত নিয়মের তোয়াক্কা না করে একের পর এক গমবোঝাই জাহাজ নিয়ে আসায় পরিস্থিতি নাজুক আকার ধারণ করেছে। গম খালাসের সুযোগ না পাওয়ায় এক মাসেরও বেশি সময় দুইটি মাদার ভ্যাসেল আটকা পড়ে আছে। চট্টগ্রাম গ্রেন সাইলো জেটিকে কেন্দ্র করে ১৭টি লাইটারেজ জাহাজ অলস বসে আছে।
সূত্র জানিয়েছে, দেশের চাহিদা মেটাতে রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে গম আমদানি করে সরকার। নিয়মানুযায়ী একেকটি জাহাজ থেকে অন্তত ১৫দিন গ্যাপ দিয়ে গম আমদানির সিডিউল দেয়া হয়। কিন্তু এবার ৩ লাখ ৯৬ হাজার ২শ’ টন গম একই সাথে আমদানি করা হয়। এরমধ্যে রাশিয়া থেকে ছয়টি এবং ইউক্রেন থেকে দুইটি জাহাজ প্রায় চার লাখ টন নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছে। গত ৬ অক্টোবর প্রথম জাহাজ আসে। ৪ নভেম্বরের মধ্যে ৭টি জাহাজ বহির্নোঙরে নোঙর করে। একটি জাহাজ আসে ১৯ নভেম্বর। ৮টি জাহাজ প্রায় একই সাথে চলে আসায় দেশে গম খালাসে বিপত্তি দেখা দেয়। মাদার ভ্যাসেল এবং লাইটারেজ জাহাজগুলো গমের ভাসমান গুদাম হয়ে ওঠে।
সূত্র বলেছে, দেশে খোলা অবস্থায় গম খালাসের সুযোগ রয়েছে চট্টগ্রামের গ্রেন সাইলো, নারায়ণগঞ্জ সাইলো এবং মোংলা সাইলোতে। এরমধ্যে ১ লাখ টন ধারণ ক্ষমতার চট্টগ্রাম সাইলোতে সর্বোচ্চ ৯০ হাজার টন পর্যন্ত গম খালাস করা যায়। মোংলা সাইলোতে খালাস করা যায় ৫০ হাজার টন। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর থেকে লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ সাইলোতে নিয়ে যাওয়া হয় গম। ওই সাইলোতে খালাস করা যায় ৫০ হাজার টন। দেশে সর্বসাকুল্যে ১ লাখ ৯০ হাজার টন গম সাইলোতে খালাসের সুবিধা রয়েছে। অথচ একই সাথে প্রায় ৪ লাখ টন গম দেশে নিয়ে আসায় দুই লাখ টনেরও বেশি গম নিয়ে খাদ্য বিভাগ চরম বেকায়দায় পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাহাজ থেকে খোলা অবস্থায় গম খালাস করে সাইলোর গুদামে রাখা হয়। ওখান থেকে বস্তা ভর্তি করে ওই গম দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করা হয়। চট্টগ্রাম সাইলোতে দিনে সর্বোচ্চ দেড় হাজার টন গম বস্তা বোঝাই করার সুযোগ রয়েছে। এতে করে গুদাম ভর্তি হয়ে যাওয়ার পর প্রতিদিন মাত্র দেড় হাজার টন গম সরবরাহ হচ্ছে, আর এই দেড় হাজার টন গমই জাহাজ থেকে খালাস করা সম্ভব হচ্ছে। এই অবস্থায় চট্টগ্রাম সাইলো জেটিকে ঘিরে ১৭টি লাইটারেজ জাহাজে ২৬ হাজার টনেরও বেশি গম আটকা পড়েছে। এই গম খালাস করতে কমপক্ষে ১৭ দিন লাগবে। সাইলো গ্রেন জেটিকে ঘিরে যেখানে লাইটারেজ জাহাজের বিশাল বহর ভাসমান সেখানে বহির্নোঙরেও এক মাসেরও বেশি সময় ধরে অলস ভাসছে এমভি আকিজ গ্লোব নামের একটি মাদার ভ্যাসেল। ৫১ হাজার ৭শ’ টন গম নিয়ে আসা মাদার ভ্যাসেলটি গত ৪ নভেম্বর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে ভাসছে। জাহাজটি থেকে অল্পস্বল্প গম লাইটারেজ জাহাজে নেয়া হলেও তা খালাস করার সুযোগ না থাকায় ভয়াবহ রকমের অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।
চট্টগ্রাম সাইলোর পদস্থ একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সবগুলো গম একই সাথে আমদানি করায় বিশৃংখলা তৈরি হয়েছে। ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময় যেভাবে আমদানি করা হয়েছিল সেভাবে সিডিউল রক্ষা করে জাহাজ আনা হলে পরিস্থিতি এত বেহাল হতো না। অলস বসে থাকা জাহাজগুলোর পেছনে কোটি কোটি টাকা গচ্ছা যাচ্ছে বলে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, আকিজ গ্লোব জাহাজটি একদিন বসে থাকলে ৩৫ হাজার ডলার বা প্রায় ত্রিশ লাখ টাকা গচ্ছা দিতে হবে। আপাতত সাপ্লাইয়ার থেকে এই টাকা গচ্ছা গেলেও যা পরবর্তীতে গমের বাজারের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেও সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র মন্তব্য করেছে।
বিষয়টি নিয়ে খাদ্য বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে জাহাজ অলস বসে থাকা এবং গম আমদানিতে ভয়াবহ রকমের বিশৃংখল পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।










