সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইনের কঠোর প্রয়োগ দরকার

| বৃহস্পতিবার , ১৩ এপ্রিল, ২০২৩ at ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ

বিজ্ঞানের অভাবনীয় অগ্রগতিতে উপকৃত হচ্ছে বিশ্বের সকল মানুষ। সেই অগ্রগতি দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে প্রযুক্তির বহুমাত্রিক ব্যবহারে। নিত্যনতুন উদ্ভাবন, প্রযুক্তির নানামুখী ব্যবহার ও চিন্তাচেতনায় আমরা অনেক বেশি অগ্রসর। প্রযুক্তির বড় উপকরণ ইন্টারনেটের আওতায় এদেশের সিংহভাগ জনগোষ্ঠী চলে এসেছে। ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অধিকাংশ ব্যক্তি সক্রিয় আছেন। আমরা জানি, ইমেইল, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ভাইবার, লিংকডইন জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম। এদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ফেসবুক। ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির যোগাযোগ বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে সামাজিক মাধ্যমের ভূমিকাকে অস্বীকার করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। সামাজিক মাধ্যমের অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তাইএর প্রমাণ।

কিন্তু যোগাযোগ ও বন্ধন এক নয় বলে সমাজবিজ্ঞানীরা অভিমত দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, সামাজিক মাধ্যম যোগাযোগ ঘটিয়ে দিচ্ছে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এ যোগাযোগে কোনো বন্ধন তৈরি হচ্ছে না। বরং পারিবারিক, আত্মীয়তা ও বন্ধুত্বের সম্পর্কে যে বন্ধন রয়েছে সেই বন্ধনেও শৈথিল্য দেখা দিয়েছে। প্রযুক্তির প্রতি আসক্তি তৈরি হয়েছে, মানুষে মানুষে সম্পর্কের ভিত দুর্বল হয়ে পড়েছে। সভ্যতার আদি যুগ থেকেই মানুষ সামাজিক জীব। সামাজিক মাধ্যমের দৌরাত্ম্য মানুষের এ চিরন্তন পরিচিতির সামনে প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকে দিয়েছে।

অস্বীকার করা যাবে না যে, ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা, হাতে হাতে স্মার্টফোন মানুষকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমমুখী করেছে। বাংলাদেশে কয়েক কোটি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করেন বলে ধারণা করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের উদ্দেশ্য কিংবা ব্যবহারের ধরনগুলো দেশভেদে ভিন্ন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, আমাদের দেশে যেভাবে আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছি এই ব্যবহারের উদ্দেশ্যের ক্ষেত্রে আমাদের নানা ধরনের প্রশ্ন রয়েছে। বিশেষ করে আমরা যে ধরনের সাংস্কৃতিক পরিচয় বা বৈশিষ্টের মধ্যে বড় হয়েছি অথবা আমাদের দেশে যে ধরনের সমাজ কাঠামো রয়েছে সেই প্রেক্ষাপটে সবার হাতে যে ফোনটি রয়েছে সেই ফোনের মাধ্যমে ফেসবুক ব্যবহারের ক্ষেত্রে একেবারে অবাধ স্বাধীনতার বিষয়টি আমাদের অনেক ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা কিংবা অশান্তি অথবা অবমাননাকর বিভিন্ন পরিবেশ বা পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। এমনকি গুজব রটিয়ে সহিংসতায় প্রাণহানিও হচ্ছে। এক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে বয়স, বৈশিষ্ট্য, আচরণগত বৈচিত্র্য এই ব্যাপারগুলোকে বিবেচনায় আনা জরুরি। কারণ বাংলাদেশের মানুষের সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক যে ধরন তার প্রেক্ষাপটে অবাধে ব্যবহারের সুযোগ বিপথগামিতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা এর প্রমাণও হরহামশো দেখতে পাচ্ছি। যদি আমাদের দেশে ফেসবুক ব্যবহারে নির্দিষ্ট নীতিমালা থাকে এবং সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি যদি নির্দিষ্ট মনিটিরিংয়ের মধ্যে নিয়ে আসা যায়। একজন ব্যক্তির একাধিক আইডি থাকতে পারবে না। তাহলেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। গুজব রটানোই হয় ফেইক আইডি ব্যবহার করে। তাই একজন ব্যক্তির একটি আইডি থাকলে সেক্ষেত্রে বিচারবিবেচনার বিষয়টি চলে আসবে। ব্যবহারকারী তার নিজের বিষয়টিও ভাবতে বাধ্য হবেন। আর অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে ব্যবহারকারীর আইডেন্টিটি নিশ্চিত করা। একজন ব্যক্তি যাতে তার জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে শুধু একটি ফেসবুক আইডি খুলতে পারেন সেটি নিশ্চিত করা। সেক্ষেত্রে সরকার চাইলে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে নির্দিষ্ট নীতিমালার আওতায় নিয়ে আসতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ফেসবুকে অবাধ স্বাধীনতার সুযোগে অনেকে এটিকে অপব্যবহার করছে অথবা হীন কোনও উদ্দেশ্যে বা তার ব্যক্তিগত কোনও উদ্দেশ্যে অথবা রাজনৈতিক কোনও উদ্দেশ্যে ফেসবুকের যে উপাদানগুলো রয়েছে সেসব উপাদানগুলোকে ব্যবহার করছে। সমস্যাটি তৈরি হচ্ছে এখান থেকেই। পরিচয় নিশ্চিত করা গেলে ব্যবহারকারী নিজেই নিজের কাজে লাগাম টানবে। কোনও কিছু করার আগে অন্তত কিছুটা হলেও তার মধ্যে চিন্তা কাজ করবে। তাছাড়া একটি নির্দিষ্ট নীতিমালা কিংবা প্রক্রিয়া অথবা শিষ্টাচারের মধ্যে নিয়ে আসা হলে ইতিবাচকতার সংখ্যা এবং ইতিবাচকভাবে ফেসবুক ব্যবহার করার প্রবণতাও বেড়ে যাবে।

বর্তমান সময়ে অপপ্রচার থেকে রেহাই পাচ্ছেন না দেশের নামিদামি ব্যক্তিরা। প্রধানমন্ত্রী ও দেশের উন্নয়নকে ব্যঙ্গ করেও অনেকে এই অপপ্রচার চালিয়েছে। রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের ভেতরে ও বাইরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতেই ‘টার্গেট’ করা হচ্ছে তাদের। সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এবং অপরাধীদের নিরুৎসাহিত করতে আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে।

সেই সঙ্গে বাড়াতে হবে ‘ডিজিটাল নজরদারি’। সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলেন, যারা এমন অপরাধ করছেন, তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হলে অন্যরা নিরুৎসাহিত হবেন। যারা দেশের বাইরে থেকে এসব করেন তাদেরকেও দেশের প্রচলিত আইনেই দেশে এনে বিচার করার বিধান রয়েছে। আইসিটি অ্যাক্টের ৪ ধারায় এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও এমন বিধান রয়েছে। একই সঙ্গে সাইবার জগতে ডিজিটাল নজরদারি বাড়াতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে