সাইফুল হত্যায় ৩১ জনের বিরুদ্ধে বাবার মামলা

ছাত্রলীগ যুবলীগ আওয়ামী লীগের ইন্ধনে খুন, এজাহারে উল্লেখ হামলা ভাঙচুরের ঘটনায় ভাইয়ের মামলা, আইনজীবীসহ আসামি ১১৬

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে কারাগারে নেওয়ার সময় সহিংসতার মধ্যে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। ঘটনার তিন দিন পর গত শুক্রবার রাতে আলিফের বাবা জামাল উদ্দিন নগরীর কোতোয়ালী থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় ৩১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে; অজ্ঞাতনামা আছে ১০/১৫ জন। মামলার এজাহারে বলা হয়, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর প্রত্যক্ষপরোক্ষ ইন্ধনে আলিফকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে।

৩১ আসামি হলেন কোতোয়ালী থানাধীন মেথরপট্টি এলাকার বাসিন্দা চন্দন, আমান দাশ, পটিয়ার ধলঘাটের শুভ কান্তি দাশ, মেথরপট্টির বুঞ্জা, রনব, বিধান, বিকাশ, রমিত, রুমিত দাশ, নয়ন দাশ, গগন দাশ, বিশাল দাস, আশরাফ আলী রোডের ওমকার দাশ, মেথরপট্টির বিশাল, রাজকাপুর, লালা, সামির, সোহেল দাশ, শিব কুমার, বিগলাল, পরাশ, গণেশ, ওম দাশ, পপি, অজয়, দেবী চরণ, দেব, জয়, লালা, দুর্লভ দাশ ও ফটিকছড়ির আব্দুল্লাহপুরের রাজীব ভট্টাচার্য।

এদিকে একই দিন একই থানায় সাইফুল ইসলাম আলিফের ভাই খানে আলম বাদী হয়ে পৃথক আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন। আদালত প্রাঙ্গণে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে প্রায় ৭০ জন আইনজীবীসহ ১১৬ জনের নাম উল্লেখ ও ৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আসামি হলেন চন্দন কুমার তালুকদার, নিতাই প্রসাদ ঘোষ, নিখিল কুমার নাথ, শুভাশীষ শর্মা, রিগ্যান আচার্য্য, টিপু শীল জয়দেব, চন্দন দাশ, রুবেল পাল, সুমন আচার্য্য, আশীর্বাদ কুমার বিশ্বাস, অভিজিৎ ঘোষ, তপন কুমার দাশ, অভিজিৎ আচার্য্য, অনিক দে, স্বপন রায়, দুলাল চন্দ্র দেবনাথ, শ্যামল চৌধুরী শুভ, উজ্জ্বল সরকার প্রমুখ।

সাইফুল ইসলাম আলিফের বাবার দায়ের করা হত্যা মামলার এজাহারে বলা হয়, ২৬ নভেম্বর বেলা ১১টায় বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও বহিষ্কৃত ইসকন নেতা চন্দন কুমার ধর প্রকাশ চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে রাষ্ট্রদ্রোহের একটি মামলায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ প্রদান করেন। আদেশ প্রদানের সাথে সাথে আসামি পক্ষে নিযুক্ত ইসকনপন্থি আইনজীবীরা ক্ষুব্ধ হয়ে আদালতকে উদ্দেশ্য করে অশালীন মন্তব্য করে এবং আদালতে হট্টগোল সৃষ্টি করে। তখন চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের অনুসারীরা প্রিজন ভ্যানের সামনে অবস্থান করে দায়িত্বরত পুলিশের কাজে বাধা প্রদান করে। তাদের অনেকে প্রিজন ভ্যানের সামনেপেছনে শুয়ে পড়ে দীর্ঘ আড়াই তিন ঘণ্টা আদালত প্রাঙ্গণে জটলা বাধায়। তারা উস্কানিমূলক স্লোগান দিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স, আনসার ও বিজিবি এসে উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে আসামিরা আদালত প্রাঙ্গণে ত্রাস সৃষ্টি করে। তারা পুলিশের ধাওয়া খেয়ে আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করার সময় ওখানে রাখা আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী ও সরকারি গাড়িসহ আনুমানিক ২০৩০টি গাড়ি ভাঙচুর করে। পরে এজাহারনামীয় ও অজ্ঞতনামা আসামিরা একত্রিত হয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আদালত ভবনের প্রবেশ মুখে রাস্তায় অবস্থান নেয়।

এজাহারে বলা হয়, তখন বাদীর ছেলে ভিকটিম অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম আলিফ নিরাপদে বাসায় ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম আদালত ভবন থেকে নেমে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে আসে। এরপর মেইন রোড হয়ে যাওয়ার সময় বিকাল আনুমানিক সাড়ে ৪টার সময় কোতোয়ালী থানাধীন এসি দত্ত লেইন নিলয় স্বজন বিল্ডিংয়ের পাশে জামাল উদ্দিন আহমেদের বিল্ডিংয়ের গেটের সামনে সড়কে পৌঁছায়। এ সময় পূর্বপরিকল্পিতভাবে চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর নামে স্লোগান দেয় দেয় এবং আলিফের ঘাড়েসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। একপর্যায়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে আসামিরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে আশেপাশের প্রত্যক্ষদর্শীরা ঘটনাস্থল থেকে আলিফকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এজাহারে আলিফের বাবা উল্লেখ করেন, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর প্রত্যক্ষপরোক্ষ ইন্ধনে তার ছেলে সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) কাজী তারেক আজিজ আজাদীকে বলেন, অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ খুনের ঘটনায় তার বাবা বাদী হয়ে ৩১ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন। অন্যদিকে তার ভাই বাদী হয়ে আদালত পাড়ায় হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে পৃথক একটি মামলা করেন। আলিফ খুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ জন হচ্ছেন তার বাবার করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। অন্য দুজনের সম্পৃক্ততা তদন্তে পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, কোতোয়ালী থানার একটি মামলায় সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের জামিন নামঞ্জুরকে কেন্দ্র করে গত ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে আদালতের প্রবেশ গেটের অদূরে মেথরপট্টি এলাকায় আলিফ খুন হন। আদালত প্রাঙ্গণে সংঘাতের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছে। এতে ৭৯ জনের নাম উল্লেখ ও ১৪০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভারতীয় মিডিয়ার ভূমিকা স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় প্রতিবন্ধক : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা