সাংবাদিককে মারধর, চবি ছাত্রলীগের ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী ও দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার ক্যাম্পাস প্রতিনিধি শাহরিয়াজ মোহাম্মদকে মুখে কাপড় পেঁচিয়ে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল বুধবার ভুক্তভোগী সাংবাদিক বাদী হয়ে হাটহাজারী থানায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১০ থেকে ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

গত ১৯ জুলাই রাত পৌনে এগারোটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে শাহরিয়াজ মোহাম্মদকে মারধর করে শাখা ছাত্রলীগের অন্তত ২৫ জন নেতাকর্মী। শাহরিয়াজ চবি সাংবাদিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। মামলার আসামিরা হলেন আইন বিভাগের ২০১৭১৮ সেশনের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক আইন সম্পাদক খালেদ মাসুদ, বাংলা বিভাগের ২০১৮১৯ সেশনের শিক্ষার্থী ও সিঙটি নাইনের অনুসারী আকিব জাভেদ, অর্থনীতি বিভাগের ২০১৭১৮ সেশনের শিক্ষার্থী ও বিজয় গ্রুপের অনুসারী এস এম ফয়সাল প্রকাশ ফয়সাল সরকার, সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০১৭১৮ সেশনের শিক্ষার্থী ও বিজয় গ্রুপের অনুসারী হাসান মাহমুদ, ইতিহাস বিভাগের ২০১৮১৯ সেশনের শিক্ষার্থী ও সিঙটি নাইন গ্রুপের অনুসারী সৌরভ ভূঁইয়া, আইন বিভাগের ২০১৫১৬ সেশনের শিক্ষার্থী ও সিএফসি গ্রুপের অনুসারী ইয়াছিন আরফাত, সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০১৮১৯ সেশনের শিক্ষার্থী ও বিজয় গ্রুপের অনুসারী তানভির আলম তুষার, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৮১৯ সেশনের শিক্ষার্থী ও বিজয় গ্রুপের অনুসারী মামুন মিয়া, ইতিহাস বিভাগের ২০১৮১৯ সেশনের শিক্ষার্থী ও সিঙটি নাইন গ্রুপের অনুসারী অনুপ সরকার আকাশ, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৭১৮ সেশনের শিক্ষার্থী ও সিঙটি নাইন গ্রুপের অনুসারী মাহিন রুবেল, অর্থনীতি বিভাগের ২০১৫১৬ সেশনের শিক্ষার্থী ও সিঙটি নাইন গ্রুপের অনুসারী ইসহাক আলম ফরহাদসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০ থেকে ১৫ জন।

মামলার এজাহারে শাহরিয়াজ উল্লেখ করেন, গত ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেশের বিরাজমান পরিস্থিতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করে হল ছাড়ার নির্দেশ প্রদান করেন। ১৯ জুলাই প্রশাসনের নির্দেশকে উপেক্ষা করে কিছু সংখ্যক ছাত্র অন্যায়ভাবে বিভিন্ন হলে অবস্থান করার সংবাদ পেয়ে আমিসহ আরও কয়েকজন সাংবাদিক সকাল দশটার দিকে সরেজমিনে খোঁজ খবর নিতে যাই এবং দেখতে পাই যে, বর্ণিত আসামিরাসহ আরও অন্তত ১৫০ জন ছাত্র অন্যায়ভাবে বিভিন্ন হলে অবস্থান করছে। আমি এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানাই। এরপর এ বিষয়ে একটি সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশের জন্য প্রস্তুতি নিলে বর্ণিত আসামিগণ খবর পেয়ে পরিকল্পিতভাবে আমাকে মারধর করে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ১ নং আসামির (খালেদ মাসুদ) নেতৃত্বে অন্যান্য আসামিগণ জিরোপয়েন্ট এলাকায় পুলিশ বঙের সামনে আমার পেছন দিক থেকে এসে অতর্কিতভাবে আমার চোখ কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলেন। এ সময় আমি কিছু বুঝে উঠার আগে খালেদ মাসুদের হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে মাথা বরাবর হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করতে চেষ্টা করে, কিন্তু তা আমার আমার ডান কাঁধে লেগে মারাত্মক আঘাত পাই। এ সময় ২১১ নং আসামিগণ আমাকে এলোপাতাড়িভাবে কিলঘুষি লাথি মেরে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নীলাফুলা জখম করেন। পরবর্তীতে সাক্ষীগণ আহত অবস্থায় আমাকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে জরুরি বিভাগে নিয়ে চিকিৎসা করান। আমি এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেশ ও ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে না বলে জানায়।

ভুক্তভোগী শাহরিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, আমার সাথে ঘটে যাওয়া এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাচ্ছি।

হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মো. নুরুল আলম বলেন, মামলাটি কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মামলার তদন্ত হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফটকে তালা ঝুলিয়ে অফিস করছেন ওয়াসার কর্মকর্তারা
পরবর্তী নিবন্ধপ্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত হলেন লুৎফে সিদ্দিকী, কাজ আন্তর্জাতিক বিষয়ে