চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার বহু আকাঙ্ক্ষিত নির্বাচন আর মাত্র চার দিন পরেই। এই নির্বাচনকে ঘিরে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনে এখন উৎসবের আমেজ। রেকর্ড সংখ্যক প্রার্থী অংশ নিচ্ছে এবারের নির্বাচনে। তাই বলা যায় বেশ জমে উটেছে নির্বাচন। এরই মধ্যে প্রার্থীরা ছুটছে ভোটারদের পেছনে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার ২৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির প্রধান পদ অর্থাৎ সাধারণ সম্পাদক পদে আ.জ.ম. নাছির বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন। এখন বাকি পদ গুলোতে চলছে জোর লড়াই। যেখানে প্রথম পদটি হচ্ছে সহ সভাপতি। আর এই সহ সভাপতি পদে নির্বাচিত হবেন ৪ জন। তার বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন দশ জন। বলা যায় এই দশ জনই হেভিওয়েট প্রার্থী। অবস্থাটা ঠিক এমন যে কেউ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান। এই দশ জনের মধ্যে চারজন বর্তমান কমিটির সহ সভাপতি। বাকি ছয় জনের দুজন আছেন বর্তমান কমিটির নির্বাহি সদস্য পদে। বাকি চারজন আগে বিভিন্ন সময় কমিটিতে থাকলেও এবারে নতুন করে নির্বাচন করছেন। এই দশ প্রার্থীর প্রথম জন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাশেম। দেশের জন্য যুদ্ধ করা এই মুক্তিযোদ্ধা চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনে যোগ দেন ১৯৯১ সালে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের কাউন্সিলর হয়ে আসেন তৎকালীন সিজেকেপিতে। পরের বছরই নির্বাচিত হন নির্বাহি সদস্য হিসেবে। এরপর নিয়মিতই জেলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটিতে আছেন তিনি নির্বাহি সদস্য হিসেবে। মাঝখানে ২০০৮ থেকে ২০১১ পর্যন্ত ছিলেননা। তবে আবারও নিয়মিত তিনি নির্বাহি কমিটিতে। এছাড়াও হকি কমিটির চেয়ারম্যান, ফুটবল কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান, ক্রিকেট কমিটির সদস্য সহ নানা দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনেরও নির্বাহি কমিটির সদস্য ছিলেন দুইবার। ছিলেন সেখানকার ডেভেলপম্যান্ট কমিটির চেয়ারম্যানও। দীর্ঘ সময় সংস্থায় থাকা আবুল হাশেম এবার সহ সভাপতি পদে নির্বাচন করছেন নতুনদের জন্য পথ করে দিতে।
এ কে এম এহছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল একজন রাজনীতিবিদ। ছাত্র রাজনীতি থেকে তিনি রাজ পথের সৈনিক। তবে খেলাধুলার প্রতি তার ছিল অগাধ টান। আর সে টান থেকেই ১৯৯৪–৯৫ মৌসুমে ঐতিহ্যবাহি মোহামেডান ব্লুজ দলের ফুটবল ম্যানেজার হয়েছিলেন। এরপর ২০০১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ছিলেন মোহামেডান ব্লুজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান। জেলা ক্রীড়া সংস্থায় প্রথম কাউন্সিলর হন লিটল ব্রাদার্স ক্লাবের। তবে তখন নির্বাচন করেননি। ২০১৫ সালে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি হন। সেবার নির্বাচন করে নির্বাহি সদস্য হন। যদিও নির্বাচন হয়নি। সমঝোতার প্যানেল হয়েছিল। ২০১৯ সালে নির্বাচিত হন সহ সভাপািত। তবে এবারে তিনি প্রতিনিধি হয়ে এসেছেন রাইফল ক্লাবের। খেলাধুলার উন্নয়নে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাতে আবারো সহ সভাপতি প্রার্থী তিনি।
তাহের উল আলম চৌধুরী স্বপন। একজন সাবেক ফুটবলার। পরবর্তীতে ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেও সুনাম কুড়িয়েছেন। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ফুটবল খেলেছেন রাইজিং স্টার, আবাহনী, মোহামেডান, কাস্টমস, জেলা দল এবং বিশ্ববিদ্যাল দলের হয়ে। প্রথম কাউন্সিলর হন ২০০৩ সালে সাউথ এন্ড ক্লাবের হয়ে। ২০০৮ সালে আসেন কমরেড ক্লাবের হয়ে। সে বছরই নির্বাচিত হন নির্বাহি সদস্য হিসেবে। যদিও এরপর তিনি জেলায় আর নির্বাচন করেননি। ২০১১ সালে বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থায় কোষাধ্যক্ষ, ২০১৫ সালে নির্ভাহি সদস্য এবং ২০১৯ সালে যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সাইক্লিং ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক। এর আগে তিনি এই ফেডারেশনের এডহক কমিটিতে ছিলেন। তাই সহ সভাপতি পদে তিনিও একজন শক্তিশালী প্রার্থী।
দিদারুল আলম চৌধুরী। চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনে এক আলোচিত নাম তিনি। ১৯৭৮ সালে মাদারবাড়ি উদয়ন সংঘের হয়ে সিজেকেএস কাউন্সিলর। ১৯৮৮ সালে ডবলমুরিং ক্লাবের প্রতিনিধি। ১৯৯২ সালে হাটহাজারী উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রতিনিধি হয়ে নির্বাচিত হন নির্বাহি সদস্য। ২০০৮ সালে হন সহ সভাপতি। পরের নির্বাচনে হেরে গেলেও ২০১৫ সালে হন নির্বাহি সদস্য। সবশেষ নির্বাচনে তিনি সহ সভাপতি নির্বাচিত হন। চট্টগ্রাম আবাহনীর প্রতিষ্টিাতা তিনি। ব্লাইন্ড ক্রিকেট এবং ডিজেবল ক্রিকেট নিয়ে কাজ করছেন। এবারের সিজেকেএস নির্বাচনে তিনিও একজন হেভিওয়েট প্রার্থী। মকসুদুর রহমান বুলবুল জেলা ক্রীড়া সংস্থায় প্রথম কাউন্সিলর হন ১৯৮৭ সালে এলিট পেইন্ট ক্লাবের হয়ে। সেই এখন পর্যন্ত আছেন সেই ক্লাবে। কখনো নির্বাহি কমিটিতে না থাকলেও ক্রিকেট কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন দীর্ঘ দিন। এছাড়াও সংস্থার নানা কমিটিতে কাজ করেছেন অনেক দিন ধরে। চট্টগ্রামের ক্রড়াঙ্গনে তিনি বেশ পরিচিত মুখ। শেষ বয়সে এসে সহ সভাপতি পদে নির্বাচন করছেন তিনি। তাই হিসেবে ধরতে হবে তাকেও।
মফিজুর রহমান একজন রাজনীতিবিদ হলেও খেলার প্রতি ছিল তার যতেষ্ট টান। যা এখনো আছে। চট্টগ্রাম এবং ঢাকা আবাহনীর সাথে ছিলেন সক্রিয়ভাবে জড়িত। আবাহনী সমর্থক গোষ্টীর সভাপতি ছিলেন। ছিলেন আবাহনীর পরিচালকও। তবে জেলা ক্রীড়া সংস্থায় আসেন ১৯৯৬ সালে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি হয়ে। এরপর রাফা ক্রিকেট ক্লাবের প্রতিনিধি হিসেবে আছেন দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে। ২০১১ সালের নির্বাচনে হয়েছিলেন সিজেকেএস এর নির্বাহি সদস্য। লম্বা বিরতির পর আবার এসেছেন এই সংস্থায়। নির্বাচন করছেন সহ সভাপতি পদে। বলা যায় হেভিওয়েট প্রার্থী। এডভোকেট শাহীণ আফতাবুর রেজা চৌধুরী একজন ক্রিকেটার এবং সংগঠক হিসেবে কাটিয়ে দিয়েছেন ৫০ বছর। ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত খেলেছেন ক্রিকেট। বিভিন্ন ক্লাবের পক্ষে খেলেছেন তিনি। খেলেছেন জেলা দলের হয়েও। ১৯৮৬ সালে ফ্রেন্ডস ক্লাবের হয়ে প্রথম আসেন জেলা ক্রীড়া সংস্থায়। এখন আছেন এম এইচ স্পোর্টিং ক্লাবের প্রতিনিধি হিসেবে। প্রথমবারেই এডহক কমিটির সদস্য। এরপর থেকে তিন মেয়াদে নির্বাহী সদস্য, এক মেয়াদে কোষাধ্যক্ষ, এক মেয়াদে যুগ্ম সম্পাদক। মাঝখানে এক মেয়াদে বিরতির পর টানা চার মেয়াদে সহ সভাপতি। ছিলেন ক্রিকেট সম্পাদক। বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক। বিসিবির পরিচালক। নানা আন্তর্জাতিক আয়োজনের সাথে ছিলেন জড়িত। এবারেও তিনি সহ সভাপতি পদে প্রার্থী। কাজেই হেভিওয়েটদের উপরের দিকে থাকবে তার অবস্থান।
শাহজাদা আলমও ক্রীড়াবিদ থেকে ক্রীড়া সংগঠক। ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত খেলোয়াড় হিসেবে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক পদক জিতেছেন। এরপর ক্রীড়া সংগঠক। নানা সময় নানা ক্লবের হয়ে তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন। তবে তার জীবনটা কারাতেময়। কারাতে ফেডারেশনের সহ সভাপতি ছাড়াও নানা দায়িত্ব পালন করেছেন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে। ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক। নতুনদের জায়গা করে দিতে তিনি এবার নির্বাচন করছেন সহ সভাপতি পদে। তাই শাহজাদাও এই পদের শক্ত প্রার্থী।
ক্রিকেটের অন্তপ্রাণ মানুষ সৈয়দ আবুল বশর। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৮৮ সালে প্রথম জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি হয়ে সিজেকেএসএ। ১৯৯২ সাল থেকে ফ্রেন্ডস ক্লাবের হয়ে আসেন। ১৯৮৮ সালে প্রথম নির্বাচনে তিনি নির্বাহি সদস্য। আর সে পদে এরপর টানা সাতবার। এখন সময় এসেছে নতুনদের সুযোগ করে দেওয়ার। তাই তিনি সহ সভাপতি পদে প্রার্থী। ক্রিকেট সম্পাদক থেকে শুরু করে অনেক দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। কাজেই আবুল বশরও এই পদের অন্যতম দাবিদার।
হাফিজুর রহমান। ক্রীড়াবিদ থেকে ক্রীড়া সংগঠক। খেলেছেন ফুটবল ১৯৭২ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত। তিনি যেন চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার অবিচ্ছেদ্য এক অংশ। সাউথ এন্ড ক্লাবের হয়ে ১৯৮৯ সালে প্রথম আসেন জেলা ক্রীড়া সংস্থায়। এরপর থেকে আছেন নানা পদে। ৯২ সালে নির্বাহি সদস্য। ৯৩ সালে ফুটবল কমিটির যুগ্ম সম্পাদক। ৯৪ সালে ফুটবল সম্পাদক। ৯৫ সালে নির্বাহি কমিটির যুগ্ম সম্পাদক। ছিলেন দুই মেয়াদে। ২০০৭ সালে এডহক কমিটির সাধারন সম্পাদক। ২০০৮ সালে নির্বাচিত সাধারন সম্পাদক। ২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সহ সভাপতি। এবারেও তিনি সহ সভাপতি প্রার্থী। জেলা ক্রীড়া সংস্থার নানা গুরুত্বপূর্ন কর্মকান্ড তার হাত ধরে হয়েছে। বিশেষ করে স্থাপনা সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম তিনি সম্পাদন করেছেন অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সাথে। যা প্রশংসিত সর্ব মহলে। এবারের নির্বাচনে হাফিজুর রহমানকে এক নম্বরে রাখছেন খোদ তার প্রতিদ্বন্দ্বীরাও।
এবারের নির্বাচনে এই পদটিতে সবচাইতে কঠিন লড়াই হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা। কারন এখানে সবাই হেভিওয়েট। এখনর দেখার বিষয় এই দশজন থেকে কোন চারজন বেরিয়ে আসেন।