সহিংসতা চাই না; চাই নারী ও পুরুষের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক

| বৃহস্পতিবার , ২৫ নভেম্বর, ২০২১ at ৬:০৫ পূর্বাহ্ণ

আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস আজ। বাংলাদেশের নারী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এ উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করছে। এখানে উল্লেখ করতে পারি, নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধে ১৯৮১ সালে লাতিন আমেরিকায় নারীদের এক সম্মেলনে ২৫ নভেম্বর আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস পালনের ঘোষণা দেয়া হয়। ১৯৯৩ সালে ভিয়েনায় বিশ্ব মানবাধিকার সম্মেলন দিবসটিকে স্বীকৃতি দেয়। জাতিসংঘ দিবসটি পালনের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয় ১৯৯৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর। বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ দিবস উদযাপন কমিটি ১৯৯৭ সাল থেকে এই দিবস ও পক্ষ পালন করছে।
নারীর অগ্রযাত্রায় পুরুষও যে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে, তার উদাহরণ এ দেশে কম নয়। নারীর অবস্থান তৈরির পেছনে রয়েছে তাঁদের পরিবার, বিশেষ করে স্বামীর বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতাপূর্ণ আচরণ। তাই সহযোগিতামূলক মনোভাবসম্পন্ন ইতিবাচক পুরুষ নারীর ক্ষমতায়নে অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে। নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে নারী নির্যাতন। অনেক সময় দেখা যায় বিশেষত, মেয়েশিশুরা যৌন হয়রানির শিকার হয়। যার ফলে অভিভাবকরা বাল্যবিয়ে দিতে বাধ্য হন। তাই যৌন হয়রানিসহ সব নির্যাতনের বিরুদ্ধে সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ জরুরি। সেইসঙ্গে অপরাধের দ্রুত শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবে অনেক সময় অপরাধের ঘটনা যত বেশি সংবাদ বা সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণা পায়; সাজাপ্রাপ্তির খবর ততটা প্রচারণায় আসে না দেখে আমরা অনেক সময় জানতে পারি না দোষীরা শাস্তি ভোগ করছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্যানুযায়ী, ২০১৮ সালে ৬৯৭ নারীকে ধর্ষণ, ১৮২ জনকে গণধর্ষণ ও ধর্ষণ শেষে ৬৩ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। ২০১৯ সালে অক্টোবর পর্যন্ত ১ হাজার ৩৯১ নারীকে ধর্ষণ, ১৯৬ জনকে গণধর্ষণ ও ধর্ষণ শেষে ৬৬ জনকে হত্যা করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আইনের দুর্বলতায় পার পেয়ে যায় ধর্ষণ-নির্যাতনের আসামিরা। এ কারণে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ হচ্ছে না।
বর্তমান সমাজে সব কাজে নারীর অংশগ্রহণ আছে, কিন্তু অংশীদারিত্ব বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অনেকে পিছিয়ে। এ জন্য আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। কর্মকৌশল পরিবর্তন করতে হবে। এ জন্য সামাজিক যে কাঠামো আছে, সেই কাঠামোর প্রতিটি স্তরে প্রতিষ্ঠানকে সংবেদনশীল হতে হবে এবং নারী-পুরুষ সবাইকে সমানভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। এ জন্য গণমাধ্যমও বড় ভূমিকা পালন করে। এ জন্য যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়, তাহলে অবশ্যই এটি সর্বক্ষেত্রে সমানভাবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
বর্তমান সরকার নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ব্যাপকভাবে কাজ করছে। নারীর ক্ষমতায়নে সবাইকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। আমাদের চ্যালেঞ্জ করতে হবে পুরুষের সহিংস আচরণকে। আমরা সহিংসতা চাই না; চাই নারী-পুরুষের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নারীকে উদ্বুদ্ধকরণ, ক্ষমতায়ন, তাদের অধিকার বাস্তবায়নসহ নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এসব পদক্ষেপ সবাইকে জানাতে হবে। নারী-পুরুষ ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে আর কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার পরিবর্তনে প্রথমে সমাজ কাঠামোর পরিবর্তন জরুরি। ঘুরেফিরে সবকিছুতেই নারীকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। নারী অপরাধ করুক আর নাই করুক, অপরাধ যেন তারই। এই ‘ব্লেমিং সংস্কৃৃতি’ থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। এ ছাড়া নারীই নারীর শত্রু- এ ধরনের বিভেদ সৃষ্টিকারী কথাবার্তা বলা পরিত্যাগ করতে হবে। নারীদের সম্পর্কে প্রকাশ্যে নানা ধরনের অস্ল্লীল মন্তব্য, কটূক্তি ও কৌতুক করা হয়। আমরাও বছরের পর বছর এসব দেখে শুনে অভ্যস্ত হয়ে গেছি; প্রতিবাদ করি না, যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
পুরুষরা মূলত সামাজিকীকরণের মাধ্যমে নারীদের প্রতি সহিংস আচরণ এবং সহিংসতা বিষয়ে নীরব থাকার শিক্ষা লাভ করে, যেখানে পরিবর্তন আনা জরুরি। বলা দরকার যে বাংলাদেশের সংবিধান নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেক মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করেছে। আমরা বিবেকবান ও মানবিকতা বোধসম্পন্ন একটা সমাজের স্বপ্ন দেখি। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে