সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে নারী উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করতে হবে

| শনিবার , ১ জুন, ২০২৪ at ৭:০১ পূর্বাহ্ণ

আইএলও কানাডা সরকারের অর্থায়নে প্রগ্রেস প্রকল্প এবং চট্টগ্রাম উইম্যান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিডব্লিউসিসিআই) যৌথ আয়োজনে ‘নারী উদ্যোক্তা : চট্টগ্রাম অঞ্চলে চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ’ শীর্ষক বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মশালায় বক্তারা নারী উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ দেয়া উচিত বলে অভিমত দিয়েছেন। গত বুধবার অনুষ্ঠিত কর্মশালায় নানামত উঠে এসেছে। এতে দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক সুন্দর একটা প্রস্তাবনা উত্থাপন করেছেন। এতে তিনি বলেছেন, ‘সরকার যদি এফবিসিসিআই বা উইম্যান চেম্বারকে ১০০ বা ২০০ কোটি টাকার একটা থোক বরাদ্দ দেয়, তবে নারী উদ্যোক্তারা তাদের ব্যবসার একটা প্রোফাইল তৈরি করে আবেদন করতে পারে। যদি আবেদন যাচাই বাছাই করে তাদের ঋণ দেয়া যায়, তবে সেই ঋণের টাকার ওপর ১২ শতাংশ সার্ভিস চার্জ ধার্য করা যেতে পারে। অথবা তা দুই বছরের জন্য সুদমুক্ত হতে পারে। তবে এ টাকাটা তাদের অবশ্যই ফেরত দিতে হবে। কারণ টাকা ফেরত পেলে সেই টাকা অন্য একজন পাবে। আমার মনে হয়, সরকার এটি ভেবে দেখতে পারে।’

কর্মশালায় চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম বলেছেন, ‘নারী উদ্যোক্তারা খুব কমই ব্যাংকের ঋণ খেলাপি হন। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ দেয়া উচিত। কারণ দেশের অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই নারী উদ্যোক্তারা আছেন, যারা অর্থের অভাবে নিজেদের ব্যবসা সমপ্রসারণ করতে পারছেন না।’

আমরা জানি, বর্তমান সরকার নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও উদ্যোক্তা তৈরিতে বহুমুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এটি জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার ২০৪১ সালে কর্মস্থলে নারীর অংশগ্রহণ ৫০:৫০ উন্নীত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, গত ১১ বছরে কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত নারীর সংখ্যা বেড়েছে ৭৩ লাখ ৫০ হাজার জন। কর্মসংস্থানের সংখ্যাগত দিক থেকে নারীর অংশগ্রহণ পুরুষদের তুলনায় বাড়ছে চার গুণেরও বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে দেশে প্রতি বছর নারীদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রায় ছয় শতাংশ হারে। আর পুরুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার দেড় শতাংশ। ০৫০৬ অর্থবছরে নারী কর্মসংস্থান ছিল এক কোটি ১৩ লাখের মতো। আর ২০১৬১৭ অর্থবছরের জরিপে এই সংখ্যাটি পাওয়া গেছে এক কোটি ৮৬ লাখ ৫০ হাজার জন। শূন্য দশকের পর থেকেই নারী অগ্রগতির শুরু বাংলাদেশে। পরের দশক থেকে গতিটা আরও বাড়ে। এরই মধ্যে মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষায় মেয়েরা ছাড়িয়ে গেছে ছেলেদের আর উচ্চ মাধ্যমিকেও মেয়েরা ছেলেদের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। চাকরি ক্ষেত্রে মেয়েরা এখনও তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে রয়েছে যদিও পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, এই খাতেও পার্থক্যটা কমে এসেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।

বাংলাদেশ এখন বিশ্বের উন্নয়নের রোল মডেল। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে তথ্য ও প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। এজন্য আমাদের রয়েছে বিশাল জনসংখ্যা। এই বিশাল জনসংখ্যার অংশ হলো নারী ও পুরুষ। যে দেশগুলো বিশ্বে উন্নত দেশের কাতারে দাঁড়াতে পেরেছে সেই সব দেশই নারীর ক্ষমতায়নের পথ সুগম করেছে। নারী ও পুরুষের পাশাপাশি অবদানেই এগিয়ে চলেছে। আমাদের দেশেও সেটাই হচ্ছে। একসময় যে ক্ষেত্রগুলোতে নারীর অংশগ্রহণ চিন্তা করা যেত না অথবা সামাজিক প্রতিবন্ধকতাসমূহ আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যেত সেই ক্ষেত্রগুলো এখন মুক্ত। ফলে নারীরা স্বাধীনভাবে এসব ক্ষেত্রে অংশ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। দেশ যতই এগিয়ে চলেছে পুরুষের সঙ্গে সঙ্গে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারীর ক্ষমতায়ন হলো দেশের উন্নয়ন কাজে নারীর অংশগ্রহণের সুযোগ। আজ প্রতিটি কাজে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষা, কৃষি, শিল্প, ব্যবসাবাণিজ্য, প্রবাস, আইসিটি মোটকথা অর্থনীতি প্রতিটা ক্ষেত্রে নারীর অবদান বাড়ছে। যেখানে নারীরা ঘরের কাজ করত এখন সেখানে কেউ চাকরি, কেউ ব্যবসা করছে। বাংলাদেশে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবক্ষেত্রে রয়েছে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা।

নারী উদ্যোক্তা বাড়ানোর জন্যও সরকারের পক্ষ থেকে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। যে প্রস্তাবনা কর্মশালায় উত্থাপন হয়েছে, তার বাস্তবায়ন হলে অনেকে এক্ষেত্রে এগিয়ে আসবেনতাতে কোনো সন্দেহ নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে