সহজ ম্যাচকে অনেকটা কঠিন করেই জিতলো বাংলাদেশ। একটা সময় দেখা যাচ্ছিল বাংলাদেশ সহজেই ম্যাচ জিতে নিচ্ছে। সেখান থেকে শেষদিকে এসে ম্যাচই জমে উঠল। এমনকি হারের শঙ্কাও পাচ্ছিল বাংলাদেশ। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন দারুণ ব্যাটিংয়ে সেই শঙ্কা দূর করে দিলেন। শেষ ওভারে দারুণ জয় পেলো লিটন দাসের দল। বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে গতকাল শনিবার সিরিজের দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টিতে আয়ারল্যান্ডকে ৪ উইকেট আর ২ বল হাতে রেখে হারিয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১–১ সমতা ফিরিয়েছে টাইগাররা। প্রথমে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ১৭০ রান তুলেছিল আয়ারল্যান্ড। জবাবে ১৯.৪ ওভারে ৬ উইকেটে ১৭৪ করে বাংলাদেশ।
১৭১ রানের লক্ষ্যে উড়ন্ত সূচনা করেন পারভেজ হোসেন ইমন। কিন্তু তার সঙ্গী তানজিদ তামিমকে ফিরতে হয়েছে হতাশা নিয়ে। ১৬ বলে ২৬ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে ইমনের সঙ্গে তামিমের ভুল বোঝাবুঝিতে। ১০ বলে ৭ করে বোলার ম্যাকার্থির সরাসরি থ্রোতে ফেরেন তামিম। তবে তামিমকে হারালেও ইমন আর লিটন দাসের ব্যাটে পাওয়ার প্লেতে ঝড় তোলে বাংলাদেশ। ৬ ওভারে টাইগাররা তোলে ১ উইকেটে ৬৬ রান। ইমন খেলছিলেন বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। তার সেই আত্মবিশ্বাসী ইনিংসের ইতি ঘটে ডেলানির বলে রিভার্স সুইপ খেলতে গেলে। ২৮ বলে ৫ চার আর ২ ছক্কায় ৪৩ করেন ইমন। ছক্কা মেরে ফিফটি পূরণ করেন লিটন, ৩৪ বলে। ইনিংসের ১৫ তম ওভারে মার্ক এডায়ারের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরতে হয় তাকে। বাংলাদেশ অধিনায়কের ৩৭ বলে ৫৭ রানের ইনিংসে ছিল ৩টি করে চার–ছক্কার মার। পরের ওভারে আরও এক উইকেট। এবার ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে আউট হয়ে যান সাইফ হাসান তিনি ১৭ বলে ২২ রান করেন।
চার বলের ব্যবধানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। এরপর রান আউট হন তাওহিদ হৃদয়। তাওহিদ ৯ বলে ৬ রান করেন। ৭ বলে ৫ রান করে বোল্ড হয়ে যান নুরুল হাসান সোহান। ৬ উইকেট হারিয়ে স্বাগতিকরা শঙ্কায় পড়ে যায় এই সময়। সেখান থেকে সাইফউদ্দিনের ব্যাটে আসে জয়। ৭ বলে ২ চার আর ১ ছক্কায় ১৭ রানে অপরাজিত থাকেন সাইফউদ্দিন। ৩ বলে একটি ছক্কা হাঁকান শেখ মেহেদি। ওই ছক্কাতেই ম্যাচ চলে আসে বাংলাদেশের অনুকূলে। আয়ারল্যান্ডের পক্ষে এডায়ার এবং ডেলানি ২টি করে উইকেট নেন।
এর আগে ৬ উইকেটে ১৭০ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় আয়ারল্যান্ড। টস হেরে ফিল্ডিংয়ে নামে বাংলাদেশ। দুই প্রান্ত থেকে স্পিন দিয়ে আক্রমণ শুরু করেন অধিনায়ক লিটন দাস। তবে বাজিমাত হয়নি। শেখ মেহেদী আর নাসুম আহমেদের প্রথম দুই ওভার থেকে ২৭ রান তুলে নেয় আইরিশরা। তৃতীয় ওভারে এক বল হওয়ার পর ফ্লাডলাইড বিভ্রাটে খেলা বন্ধ থাকে প্রায় ১২ মিনিট। প্রায় অন্ধকার হয়ে যায় পুরো মাঠ। দুই দলের ক্রিকেটাররাই তাদের ড্রেসিংরুমে ফিরে যান। বিরতির পর খেলা শুরু হলে ফের ঝড় চালিয়ে যায় আইরিশরা। ৪.১ ওভারে দলীয় সংগ্রহ ৫০ পূর্ণ করে তারা।
পঞ্চম ওভারে তানজিম হাসান সাকিব প্রথম আঘাত হানেন। ১৪ বলে ২৯ করা স্টার্লিংকে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ বানান এই পেসার। নবম ওভারে আরেক সেট ব্যাটার টিম টেক্টরকে ফেরান শেখ মেহেদি। ডাউন দ্য উইকেটে গেলে বলের লাইন মিস করে স্টাম্পিং হন টেক্টর। ২৫ বলে ৩৮ রান করে তিনি। ওই ওভারে টেক্টরের আরেক ভাই হ্যারি টেক্টরকেও বোল্ড করেন মেহেদি। ১১ বলে ১১ রান করেন হ্যারি। নিজের শেষ ওভারে এই অফস্পিনারের তৃতীয় শিকার বেন কালিটজ (৭)। ১১ ওভারে ১০৩ রানে ৪ উইকেট হারায় আয়ারল্যান্ড। পঞ্চম উইকেটে ৪৪ বলে ৫৬ রানের জুটি গড়েন লরকান টাকার আর জর্জ ডকরেল।
শেষ পর্যন্ত এই জুটিটি ভাঙেন সাইফউদ্দিন। ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লংঅনে তানজিদ তামিমের দুর্দান্ত এক ক্যাচ হন ডকরেল। ২১ বলে ১৮ রান করে বিদায় হন তিনি। ৩১ বলে ৪১ রানে অপরাজিত থাকেন টাকার। বাংলাদেশের শেখ মেহেদি হাসান ৪ ওভারে ২৫ রান দিয়ে নেন ৩টি উইকেট। ১টি করে উইকেট পান তানজিম সাকিব এবং মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ম্যাচ সেরা হন লিটন দাস। বাংলাদেশ–আয়ারল্যান্ড টি–টোয়েন্টি সিরিজের তৃতীয় ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২ ডিসেম্বর মঙ্গলবার। দুপুর ২টা থেকে এ খেলা বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে শুরু হবে।
