কড়া পুলিশ প্রহরায় ফটিকছড়ি নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার শূরা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকাল বুধবার সকালে। বৈঠকে মুহতামিম দাবিদার মাওলানা সলিম উল্লাহসহ ১৩ শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয়েছে। নতুন মুহতামিম মনোনীত করা হয়েছে ভারপ্রাপ্ত মুহতামিম মাওলানা হাবিবুর রহমান কাসেমীকে। মাদ্রাসার মোতোওয়াল্লি করা হয় হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীকে।
জানা গেছে, মাদ্রাসার পরিচালক পদ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা চলে আসছিল। এনিয়ে মারামারি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, মামলার ঘটনাও ঘটে। এই পরিস্থিতিতে ‘মুহতামিম’ দাবিদার মাওলানা সলিমুল্লাহ এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন গত শনিবার দুপুরে। এসময় ছাত্রদের একাংশ মাওলানা সলিমুল্লাহকে ‘মুহতামিম মানি না, শূরা চাই, শূরা চাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে ছাত্রদের একটি অংশ স্লোগানধারীদের সরিয়ে দিতে চাইলে উভয়পক্ষ হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
উল্লেখ্য, এ মাদ্রাসার পরিচালক বা মুহতামিমের পদ নিয়ে মাওলানা সলিমুল্লাহ ও মাওলানা হাবিবুর রহমান কাসেমীর মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল গত জুন থেকে। মাওলানা সলিমউল্লাহ আল্লামা শাহ আহমদ শফির ছেলে আনাস মাদানীর অনুসারী এবং মাওলানা হাবিবুর রহমান কাসেমী হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীর অনুসারী বলে জানা গেছে ।
বুধবারের শূরা বৈঠকে মাদ্রাসা থেকে মাওলানা সলিম উল্লাহসহ ১৩ শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহি:ষ্কৃৃত শিক্ষকরা হলেন মাওলানা সালাহ উদ্দীন, মুফতি হাশেম, মাওলানা মিজান, মাওলানা নুরুল আলম আনছারি, মাওলানা মাহফুজুর রহমান, হাফেজ ইদ্রিস, হাফেজ আব্দুল কাদের, মাওলানা ইয়াছিন, মাওলানা আলী আকবর, আমির হোসেন, মাওলানা আব্দুর রহিম, মাওলানা হারুনর রশিদ। নায়েবে মুহতামিম করা হয় মাওলানা ইয়াহিয়া ও মুঈনে মুহতামিম মওলানা ইসমাইল। শিক্ষা সচিব করা হয় হাবিবুল্লাহ নদভীকে। ঢাকার খিলগাঁও মাদ্রাসার মুহতামিম নুরুল ইসলাম জিহাদী শূরার বৈঠক শেষে নির্বাচিতদের নাম ঘোষণা করেন। এতে উপস্তিত ছিলেন পটিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম আবদুল হালিম বোখারী, জিরি মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা খোবাইব, মাওলানা আনোয়ার, খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী মাওলানা ওমর ফারুক, মেখল মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা নোমান ফয়েজী, হাটহাজারী মাদ্রাসার মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী, বাবুনগর মাদ্রাসার মুহতামিম মহিবুল্লাহ বাবুনগরী, ওবাইদিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম সালাউদ্দিন, ঢাকার বসুন্ধরা মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আরশাদ রহমান, তালিমুদ্দিন মাদ্রাসার মুহতামিম হাফেজ কাসেম, নাজিরহাট মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত মুহতামিম হাবিবুর রহমান কাসেমী, ফতেপুর মাদ্রাসার মুহতামিম মাহমুদুল হাসান। উপস্থিত হননি চারিয়া মাদ্রাসার মাওলানা আবদুল্লাহ, হাটহাজারী মাদ্রাসার প্যানেল মুহতামিম মুফতি শেখ আহমেদ।
এদিকে বুধবারের শূরা বৈঠককে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মঙ্গলবার রাত থেকে মাদ্রাসার আশপাশসহ নাজিরহাট এলাকায় তিন শতাধিক র্যাব-পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সকাল থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত নাজিরহাট বাজারের পাঁচ সহস্রাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং যানচলাচল ও জনসমাগম নিয়ন্ত্রিত ছিল। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার সায়েদুল আরেফিনের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের চারজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেন। এদিন চট্টগ্রাম-নাজিরহাট-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের চারিয়া থেকে কুম্ভারপাড়া পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কে পুলিশের টহল ও নজরদারি অব্যাহত ছিল।
ফটিকছড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সায়েদুল আরেফিন বলেন, আমরা আইন শৃংখলা রক্ষায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলাম। শেষ পযর্ন্ত কোন বিশৃঙ্খলা হয়নি। শূরা সদস্যরা তাদের মাদ্রাসার প্রয়োজনে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখানে কারো হস্তক্ষেপ ছিল না।