চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সলিমপুর আবাসিক এলাকার লাগোয়া পাহাড়ে ইউরোপের স্টাইলে আবাসন গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পাহাড়কে পাহাড়ের আদলে রেখে একই স্টাইলে সবগুলো বাংলো টাইপের বাড়ি নির্মিত হবে। সিডিএ নতুন করে প্লট করে বরাদ্দ দেবে, একই সাথে ডিজাইন ও প্ল্যানও সিডিএ দেবে। প্লট মালিককে ওই ডিজাইন এবং প্ল্যান অনুযায়ী বাড়ি করতে হবে। কোনো বাড়ির বাইরের দিকের কাঠামোতে ভিন্নতা আনা যাবে না। প্রায় পরিত্যক্ত হয়ে থাকা সিডিএর অন্যতম বৃহৎ আবাসিক এলাকাটিকে বাসযোগ্য করতে নতুন এই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রায় ৬৫ বছর আগে চট্টগ্রামের আবাসন সমস্যা দূর করতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ১৯৬০–৬১ সালে সীতাকুণ্ডের সলিমপুর ইউনিয়নের পাহাড়ের পাশে সলিমপুর সিডিএ আবাসিক এলাকা গড়ে তোলে। ওই সময় ১২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা প্রকল্পটি ছিল তখনকার সিডিএর সর্ববৃহৎ আবাসিক প্রকল্প। কিন্তু স্থান নির্ধারণ এবং কিছুটা উন্নয়ন করে দীর্ঘদিন সিডিএ ওই এলাকায় কিছু করেনি। পরবর্তীতে ১৯৭৯, ১৯৮৭ ও ২০০২ সালে সর্বমোট ১৯৬ একর জায়গায় ‘এ’ ও ‘বি’ ব্লকে সর্বমোট ১ হাজার ২৭৮টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু বসবাসের সুযোগ সুবিধা এবং নিরাপত্তা না থাকায় সিডিএর আবাসিক এলাকাটিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাড়িঘর গড়ে উঠেনি। প্লট বরাদ্দপ্রাপ্তদের অনেকেই ইতোমধ্যে মারা গেছেন। অনেকেই প্লট বিক্রি করে দিয়েছেন। একের পর এক হাতবদল হলেও প্রকল্পটি প্রকৃতপক্ষে আবাসিক এলাকা হিসেবে গড়ে উঠেনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, ইতোমধ্যে সর্বোচ্চ শ’খানেক প্লটে বাড়িঘর হলেও নিরাপত্তার অভাব প্রকট। বহু প্লটে বস্তির মতো ঘর রয়েছে। যেখানে নিম্নআয়ের মানুষজন বসবাস করেন। স্কুল কলেজ হাসপাতালসহ নাগরিক সুুযোগ সুবিধাতো দূরের কথা আবাসিক এলাকার রাস্তাগুলোরও উন্নয়ন হয়নি। আবাসিক এলাকার পাশ দিয়ে আশুগঞ্জ বাখরাবাদ গ্যাস সঞ্চালন লাইন বয়ে গেলেও এই আবাসিক এলাকায় কোনো গ্যাস সংযোগ নেই। আবাসিক এলাকার নকশায় স্কুল এবং শিশুপার্কের জায়গা নির্ধারিত থাকলেও তাও হয়নি। এতো ‘নেই’ এর মাঝে কারো পক্ষে সেখানে বসবাস করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন একাধিক প্লট মালিক। তারা বলেন, সিডিএ প্লট বরাদ্দ দিয়েই দায়িত্ব সেরেছে। কিন্তু সেটিকে প্রকৃতপক্ষে একটি আবাসিক এলাকা করার ব্যাপারে সিডিএ আর কখনো এগিয়ে আসেনি।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সলিমপুর আবাসিক এলাকা নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু করে। এরমধ্যে প্লট মালিকদের সাথে নিয়ে সিডিএ নতুন করে পরিকল্পনা গ্রহণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। প্লট মালিকদের সমিতিকে কাজে লাগিয়ে সংকট সুরাহা করারও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। একইসাথে যে সব প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এর পাশের পাহাড়ে আরো কিছু নতুন প্লট করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে এসব প্লট কোনো সাধারণ আবাসিক এলাকার মতো হবে না। পাহাড়ে কোনো আঁছড় না লাগিয়ে প্লট করে সিডিএ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ডিজাইন এবং প্ল্যান করে দেবে। যারা প্লট নেবেন তাদেরকে সিডিএর ওই ডিজাইন অনুসরণ করে বাড়ি করতে হবে। সবগুলো বাড়ি হবে বাংলো স্টাইলে। সবগুলো বাড়ির বাইরের ডিজাইন হবে একই রকম। এসব বাড়ির বাইরের অবকাঠামোতে কোনো ধরনের পরিবর্তন আনা যাবে না। সিডিএর এসব শর্ত যারা মানবেন কেবল তাদেরকেই প্লট বরাদ্দ দেয়া হবে। এতে আবাসনের সুবিধার পাশাপাশি পুরো এলাকার দৃশ্যপটও পাল্টে যাবে। একই সাথে বিদ্যমান সলিমপুর আবাসিক এলাকায়ও লোকজনের বাড়িঘর তৈরি করার পরিবেশ তৈরি হবে।
নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এলাকায় পুলিশ ফাঁড়ি কিংবা পুলিশের পাশাপাশি বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার লোকজন মোতায়েন করা হবে।
বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নতুন চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ দৈনিক আজাদীকে বলেন, সলিমপুর শহরের কাছের একটি এলাকা। ফৌজদারহাট–বায়েজিদ লিংক রোড হয়ে যাওয়ায় সলিমপুর থেকে মাত্র ২০ থেকে ৩০ মিনিটে শহরের যে কোনো স্থানে পৌঁছা সম্ভব। শহরের এতো কাছে পাহাড়ের পাদদেশে এমন সুন্দর এবং নান্দনিক একটি জায়গা এতো অনাদরে থাকতে পারে না। তাই এই এলাকাটিকে নিয়ে আমরা একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এটি বাস্তবায়ন করে আমরা পুরো এলাকার চেহারাটা পাল্টে দিতে চাই। তিনি সলিমপুর আবাসিক এলাকার উন্নয়নে আরো বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান।