সম্প্রতি জনশ্রুতি মতে দেশের প্রায় সরকারি–বেসরকারি সংস্থায় উচ্চ থেকে নিম্নতর পর্যায় পর্যন্ত কর্মকর্তা–কর্মচারীদের অনৈতিক আচরণ নানা প্রশ্নের উদ্রেক করছে। সামগ্রিক পর্যালোচনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে এদের কার্যকলাপ সর্ষের মধ্যে ভূতের পদচারণার সমতুল্য। নানাভাবে কথিত প্রভাবশালীদের পৃষ্ঠপোষকতায় বর্ণচোরা ছদ্মবেশী দেশবিধ্বংসী কদর্য চরিত্রের মানুষগুলো সংস্থাসমূহে ঢুকে পড়েছে। উচ্চশিক্ষা থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদে আসীন জাতীয় পর্যায়ে পদ–পদবী–পদক দখলে নিয়ে সর্বত্রই এরা অপকৌশলে ব্যক্তিস্বার্থ বাস্তবায়ন করে চলছে। এসব নরপশুতুল্য হিংস্র প্রকৃতির নামধারী ব্যক্তিরা কট্টর সাম্প্রদায়িক–অগণতান্ত্রিক হিসেবে বিবেচ্য। ন্যূনতম দেশপ্রেম না থাকা সত্ত্বেও এসব নাগ–নাগিনীদের বিষাক্ত নিঃশ্বাসে অভিশপ্ত পুরো বাংলাদেশ। অপকৌশলে অদৃশ্য আপোষকামীতায় সিদ্ধহস্ত এসব জঘন্য প্রকৃতির মানুষগুলো যেকোনো সময় যেকোনো রূপ ধারণ করতে পারে। কোন ধরনের যথার্থ বাছবিচার ছাড়া এসব সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর মুখোশ উন্মোচন একান্ত জরুরি। দেশের যেকোন আর্থ–সামাজিক–রাজনৈতিক দুঃসময়ে এদের কোনো ভূমিকা কখনোই পরিলক্ষিত নয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বেসাতি করে ভাগ্যের পরিবর্তন সাধনই এদের লক্ষ্য।
কবিগুরু রবিঠাকুরের প্রান্তিক কাব্যগ্রন্থে উপস্থাপিত কবিতার পংক্তি ‘নাগিনীরা চারিদিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিশ্বাস,/ শান্তির ললিত বাণী শোনাইবে ব্যর্থ পরিহাস-/ বিদায় নেবার আগে তাই ডাক দিয়ে যাই/ দানবের সাথে যারা সংগ্রামের তরে প্রস্তুত হইতেছে ঘরে ঘরে’ উচ্চারণ এই ক্ষেত্রে বিশেষ প্রযোজ্য। দেশবাসী সম্যক অবগত আছেন, চলমান রাশিয়া–ইউক্রেন–ফিলিস্তিন–ইসরায়েল যুদ্ধসহ নানামুখী সংকটে বিপর্যস্ত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় পুরো বিশ্বের সমগ্র নাগরিক সমাজের হৃদয়ে গভীর আতঙ্ক–আশঙ্কার নির্মম দেয়াল নির্মাণ করে চলছে। খাদ্যশস্য–জ্বালানি তেল–গ্যাসসহ জীবন জীবিকার সচল প্রবাহে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি দেশের গণমাধ্যমে প্রতিনিয়তই প্রচারিত হচ্ছে। উন্নত বিশ্বের দেশসমূহের সংবাদ পর্যালোচনায় এই ধরনের পরিবেশনা এতবেশি প্রকাশ পাচ্ছে বলে মনে হয় না। সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন সেবা সংস্থাসহ সর্বত্রই অন্ধকারের পরাজিত অশুভ শক্তির অসহনীয় অপতৎপরতা জনগণের জীবনকে অতিশয় অতিষ্ঠ করে তুলছে। ঘুষ–দুর্নীতি–হয়রানির কুৎসিত পরিক্রমায় মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানেই ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা সর্ষের মধ্যে ভয়ানক ভূত ও পৃষ্ঠপোষকরা অতি সক্রিয়। পর্যাপ্ত আইনি প্রক্রিয়ায় এবং নিগূঢ় দক্ষ পর্যবেক্ষণে এদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতা সমুদয় দেশের উন্নয়ন অর্জনকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। এদের বেপরোয়া অপতৎপরতায় মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ভুলুন্ঠিত করার চরম ধৃষ্টতা জনগণকে অবলোকন করতে হচ্ছে। দৃঢ়চেতা–নির্ভীক পন্থায় সরকারের পক্ষ থেকে যথার্থ উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে অচিরেই সবকিছু যেন মুখ থুবড়ে পড়বে।
বিজ্ঞজনের মতে অনেকক্ষেত্রে জনগণের দুর্ভোগকে অতিরঞ্জিত করে রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়ানো–দেশকে অস্থিতিশীল করার কোন অযাচিত কৌশল গ্রহণ করা হচ্ছে কিনা তার প্রায়োগিক বিশ্লেষণ একান্তই জরুরি। সবার স্মরণে থাকা উচিত; রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ বা দল–নেতা–কর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ–শিষ্টাচার সুরক্ষা–সহিষ্ণুতা–সকল প্রকার বিরোধ বিচ্ছেদ সংহার করে আলাপ–আলোচনা–সমঝোতার পরিবেশ অক্ষুণ্ন রেখে দেশ ধ্বংসের অশুভ পদক্ষেপ নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণই সুস্থ রাজনীতির পরিচায়ক।
বিপুল প্রচলিত ধারণা মতে, স্বার্থান্বেষী মহল তাদের কুৎসিত উদ্দেশ্য হাসিলে অতিশয় ব্যতিব্যস্ত এবং এদের প্রায় সকলেই অনুপ্রবেশকারীর বেশে বঙ্গবন্ধুর কথা মুখে বেশি বেশি উচ্চারণ করলেও অন্তর ন্যূনতম আদর্শিক চেতনায় পরিশুদ্ধ নয়। তাদের অনেকে বিভিন্ন স্থানে কৌশলে ঢুকে পড়ে অদম্য অগ্রগতিতে এগিয়ে যাওয়া বর্তমান সরকারের ক্ষতি করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তাছাড়া দেশ ও সরকার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দেশি–বিদেশী নানা ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। দেশকে উন্নতির কাঙ্ক্ষিত সোপানে নিয়ে যেতে সরকার অতিশয় সচেষ্ট থাকলেও প্রশাসনসহ সর্বক্ষেত্রে দলবাজি ও দলাদলির অপসংস্কৃতি প্রচণ্ড মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। পেশাজীবীদের অনেকে বুদ্ধিজীবী হওয়ার পরিবর্তে নিজেদের পেশিশক্তিতে পরিণত করেছেন। এর ফলে রাতারাতি রং ও ভোল পাল্টানো কর্মকর্তা–কর্মচারীর সংখ্যার সারিও দীর্ঘ হচ্ছে। সুবিধাবাদী কর্মকর্তাদের বেশির ভাগ ব্যক্তিস্বার্থে দ্রুত পদোন্নতিসহ প্রাইজ পোস্টিং নিতে মরিয়া। বিশেষ করে ‘পাওয়ার হাউজগুলোয়’ একধরনের অদৃশ্য নিজস্ব বলয় তৈরি করতে অনেকেই সক্ষম। ফলশ্রুতিতে প্রকৃত পেশাদার, মেধাবী এবং দল বা সরকারের নীতিগত বিষয়ের প্রতি আনুগত্যের পরীক্ষায় শিক্ষাজীবন থেকে পরীক্ষিত তাদের যথাযথ মূল্যায়ন না করে বরং অবমূল্যায়নের পথকে বিস্তৃত করা হচ্ছে। প্রশাসনসহ সমাজের সর্বক্ষেত্রে একধরনের হাইব্রিড চাটুকার ও ক্ষমতাধরদের দ্রুতই জয়জয়কার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ চক্রের খপ্পরে পড়ে একদিকে দলীয় সরকার এবং অপরদিকে দেশও নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এদের সিংহভাগ ক্ষমতার অপব্যবহারে নিজেরা মোটাতাজা হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রমতে, এরা সুকৌশলে দুর্নীতি করেছে এবং দুর্নীতির অর্থ অবৈধ উপায়ে বিদেশে পাচার করে চলছে। তবে এটাও সত্য, সবকিছু প্রধানমন্ত্রীর একার পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। এজন্য দেশের স্বার্থে দেশপ্রেমিক সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সহযোগিতা প্রশস্ত করতে হবে।
আমাদের সকলের জানা; লোভ–লালসা, স্বজন–পরিবার–অঞ্চল–বন্ধুপ্রীতি, তদবির–লবিং– ম্যানেজ অপসংস্কৃতির আড়ালে উচ্চ থেকে নিম্ন পর্যন্ত শিক্ষা–বাণিজ্য–ভূমি–হাসপাতাল–ব্যাংক–গণমাধ্যমসহ সমুদয় সামাজিক–রাজনৈতিক পরিমন্ডলে ধনসম্পদ–প্রতিপত্তিকে অতিশয় শক্তিমান করার ব্যক্তি বিশেষের সীমাহীন কুপ্রবৃত্তি সভ্য সমাজ অত্যন্ত ঘৃণার সাথে উপলব্ধি করে চলছে। সমস্ত কিছু গিলে খাওয়ার এই অসম প্রবণতা ও হীন পন্থার দৃষ্টান্ত তৈরির প্রচেষ্টাসমূহকে প্রতিহত করার লক্ষ্যে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। অন্যথায় ব্যর্থতার দায়ে আগামী প্রজন্মের বোধগম্য কাঠগড়ায় আমাদের অবশ্যই দাঁড়াতে হবে। বর্তমানে রাজনীতির আবরণে অর্থ–ক্ষমতালিপ্সু কথিত রাজনীতিবিদদের বিবেকবর্জিত অবৈধ বাণিজ্য–ভূমি দখল–প্রভাব বিস্তারে প্রান্তিক পর্যায়ের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শহর–নগরের প্রতিটি অলি–গলিতে অতিমাত্রায় উৎসাহিত জঘন্য বাহিনীর তান্ডব–দুর্ধর্ষ কর্মকান্ডে জনজীবন নিষ্প্রভ–নিরীহ–প্রাণস্পন্দনহীন রূপ পরিগ্রহ করে চলছে। আত্মসংযম–আত্মসমালোচনা–আত্মশুদ্ধির সকল শুভ উদ্যোগকে প্রচন্ড ভ্রুক্ষেপে দেশে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিদিনই বিভিন্ন দলের নেতা–কর্মী ও সাধারণ মানুষের হতাহতের ঘটনা অনুভূত। প্রকৃতপক্ষে দলের পদ–পদবী আদায়, ভূমি–ব্যবসা–বাণিজ্যের জবরদখল, চাঁদা–টেন্ডারবাজি, ঠিকাদারি–হাটের ইজারাসহ বিভিন্ন অবৈধ–অনৈতিক কর্মকান্ড নিয়ে এলাকায় নিজেদের কর্তৃত্ব সুদৃঢ় করার উদ্দেশ্যে এহেন হত্যাকাণ্ডসহ নানামুখী ভয়ংকর অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। অপরাধ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমানে দেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশে চলছে দুর্বৃত্তায়ন। আদর্শিক রাজনীতির অভাবে প্রতিপক্ষ দল ছাড়াও নিজ দলের নেতা–কর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব–সংঘাত–বিরোধ–বিচ্ছেদ প্রতিনিয়ত দৃশ্যমান।
একান্ত স্মরণযোগ্য যে, ১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি কুমিল্লায় বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির প্রথম ব্যাচের সমাপনী অনুষ্ঠানে অফিসারদের দিক–নির্দেশানামূলক বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রণিধানযোগ্য। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘তোমরা আদর্শবান হও, সৎ পথে থেকো। মনে রেখ, মুখে হাসি বুকে বল, তেজভরা মন, মানুষ হইতে হবে, মানুষ যখন। মাঝে মাঝে আমরা অমানুষ হয়ে যাই। এত রক্ত দেওয়ার পরও যে স্বাধীনতা এনেছি, চরিত্রের পরিবর্তন অনেকের হয় নাই। এখনো ঘুসখোর, দুর্নীতিবাজ, চোরাকারবারি, মুনাফাখোরি বাংলার দুঃখী মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। দীর্ঘ তিন বছর পর্যন্ত এদের আমি অনুরোধ করেছি, আবেদন করেছি, হুমকি দিয়েছি। চোরা নাহি শোনে ধর্মের কাহিনি। কিন্তু আর না। বাংলার মানুষের জন্য জীবনের যৌবন আমি কারাগারে কাটিয়ে দিয়েছি। এ মানুষের দুঃখ দেখলে আমি পাগল হয়ে যাই। ………… পাকিস্তানিরা সর্বস্ব লুট করে নিয়ে গেছে। কাগজ ছাড়া আমার জন্য কিছু রেখে যায় নাই। বিদেশ থেকে ভিক্ষা করে আমাকে আনতে হয়, আর এই চোরের দল, আমার দুঃখী মানুষের সর্বনাশ করে, এভাবে লুটতরাজ করে খায়। এবার আমি প্রতিজ্ঞা করেছি– যদি ২৫ বছর এই পাকিস্তানি জালেমদের বিরুদ্ধে, জিন্নাহ থেকে আরম্ভ করে চৌধুরী মোহাম্মদ আলী, আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধে বুকের পাটা টান করে সংগ্রাম করে থাকতে পারি, আর আমার ত্রিশ লক্ষ লোকের জীবন দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারি, তাহলে পারব না? নিশ্চয় ইনশাআল্লাহ পারব।’
বঙ্গবন্ধু আরও বলেন, ‘এই বাংলার মাটি থেকে দুর্নীতিবাজ, এই ঘুসখোর, এই মুনাফাখোর, এই চোরাকারবারিদের নির্মূল করতেই হবে। আমিও প্রতিজ্ঞা নিয়েছি, তোমরাও প্রতিজ্ঞা নাও, বাংলার জনগণও প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করো। আর না। ধৈর্যের সীমা হারিয়ে ফেলেছি। এই জন্য জীবনের যৌবন নষ্ট করি নাই। এই জন্য স্বাধীনতার জন্য রক্ত দেই নাই। যে কয়েকটা চোরাকারবারি, ঘুসখোর, মুনাফাখোর, দেশের সম্পদ বাহির করে নিয়ে আসে, জিনিসপত্র গুদামজাত করে মানুষকে না খাইয়ে মারে। উৎখাত করতে হবে বাংলার বুক থেকে তাদের। দেখি কতদূর তারা টিকতে পারে। চোরের শক্তি বেশি, না ইমানদারের শক্তি বেশি। সেইটাই এখন প্রমাণ হয়ে যাবে। অন্যায়ের কাছে কোনোদিন মাথা নত করি নাই। বারবার পাকিস্তানিরা আমাকে ফাঁসি দিতে চেয়েছে। বারবার বুক টান করে আমি দাঁড়িয়ে রয়েছি। কারণ আল্লাহ আমার সহায় ছিল। বাংলার জনগণের আমার উপর দোয়া ছিল। এখনো সেই দোয়া আছে। ইনশাআল্লাহ, তোমাদের সাহায্য তোমাদের সহানুভূতি, তোমাদের কাজ, জনগণের ভালোবাসা আর ঈমানদার মানুষের সহযোগিতায় এই দুষ্কৃতকারীদের নির্মূল করতেই হবে।’
দেশপ্রেমিক সচেতন মহলের মতে, সুবিধাভোগীদের বেপরোয়া দৌরাত্ম্য এবং কর্ণাশ্রীত অপবাদে লিপ্ত চক্রান্ত–ষড়যন্ত্রকারীদের অপকর্মে সোনার বাংলা বিনির্মাণে সোনার মানুষ বা সৎ–যোগ্য–মেধাবী মানবসম্পদ যথাযথ মর্যাদাসীন হতে ব্যর্থ হচ্ছে। এখনো প্রকৃত অর্থে জ্ঞানী–নীতি নৈতিকতায়–সততায়–দেশপ্রেমের অনন্য প্রতীক হিসেবে যারা পরীক্ষিত; তাদের মূল্যায়ন অধিকাংশ ক্ষেত্রে চরমভাবে উপেক্ষিত। ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থে বর্ণচোরা–অনুপ্রবেশকারী–অন্ধকারের শক্তির সাথে গোপন যোগসাজশ বা সখ্যতা তৈরিতে পারদর্শী কথিত রাজনীতিক–ব্যবসায়ী–পেশাজীবী ব্যক্তিদের অশুভ মনোবৃত্তিকে পরাস্ত করা সকল নিবন্ধিত দল–সরকার–দেশবাসীর পবিত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য। সকল স্তরের নির্মোহ ও ত্যাগী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে অবমূল্যায়নের মোড়কে অপাংক্তেয়–বিতর্কিত–অযাচিত–দোষী সাব্যস্ত করার সকল পাপিষ্ঠ উদ্দেশ্য সংহার করে প্রান্তিক ও ন্যায়পরায়ণতায় অবিচল ব্যক্তিবর্গকে যথাযোগ্য মূল্যায়নে যথাস্থানে প্রতিষ্ঠিত করা না হলে জাতি শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হবে না; ভবিষ্যৎকে আলোকময় করার সকল সৎ উদ্যোগও বিফলে যাবে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অমিয় ভাষণগুলোর তাৎপর্য অনুধাবনে রাজনৈতিক–অর্থনৈতিক–সামাজিক–সাংস্কৃতিক–ধর্মীয় ক্ষেত্রে সত্য–সুন্দর–কল্যাণ–আনন্দের উপাদানসমূহের যথার্থ পরিচর্যা এবং চলমান পরিস্থিতি উত্তরণে পরিপূর্ণ উপলব্ধিতে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচ্য হওয়া অবশ্যম্ভাবী। চিহ্নিত আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত–অসৎ–অযোগ্য–অদক্ষ–সর্বক্ষেত্রে কুচক্র–আশ্রয়ী নিকৃষ্ট নাগ–নাগিনীদের পদচারণা স্তব্ধ করা না হলে বিরাজিত প্রতিকূল সমস্যাসমূহ দেশকে লন্ড ভন্ড করার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে মুক্তির মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু নির্দেশিত পথপরিক্রমায় জাতিকে পরিচালনা করা সময়ের জোর দাবি হিসেবে বিবেচ্য। সার্বিক উন্নয়ন সুদৃঢ় করতে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের যৌক্তিকতা বিবেচনায় আনা প্রয়োজন। আদালতের রায়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য শিক্ষার্থীসহ সকল নাগরিককে পর্যাপ্ত সচেতনতায় উজ্জীবিত করতে হবে। সবার উর্ধ্বে দেশ–দেশের সার্বভৌমত্ব পবিত্র সংবিধান ও সামষ্টিক উন্নয়নকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। চলমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় ধৈর্যের সাথে সকল দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্যবদ্ধতায় অনাকাঙ্ক্ষিত বিরোধ–বিচ্ছেদ–অরাজকতা সংহারে অবদান রাখার বিষয়টি প্রণিধানযোগ্য।
লেখক : শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।