সর্বোচ্চ বরাদ্দ নগর উন্নয়নে

চসিকের ২১৬১ কোটি টাকার বাজেট কমেছে আকার, মশক নিধনে বরাদ্ধ বাড়েনি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ব্যয় ২৬.১৫ শতাংশ

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৭ জুন, ২০২২ at ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ

আটটি প্রকল্প ও থোক খাতের বিপরীতে অনুদান হিসেবে সর্বোচ্চ আয় ধরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য ২ হাজার ১৬১ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এ বাজেট বিদায়ী ২০২১-২০২২ অর্থবছরের চেয়ে ৩০২ কোটি ৬৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা কম। অবশ্য আকার কমলেও প্রস্তাবিত বাজেটে সর্বোচ্চ ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে নগর উন্নয়ন খাতে। প্রকল্প ছাড়াও রাজস্ব তহবিলের বিপরীতে ২২টি খাতে নগর উন্নয়নে সর্বোচ্চ ১ হাজার ২৫৯ কোটি ৫০ লাখ বরাদ্দ রাখা হয়, যা প্রস্তাবিত বাজেটের ৫৮ দশমিক ২৭ শতাংশ।

গতকাল রোববার দুপুরে নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউটে বাজেট ঘোষণা করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এটি ছিল চসিকের বর্তমান (ষষ্ঠ) পর্ষদের মেয়র হিসেবে তার দ্বিতীয় বাজেট ঘোষণা। এ সময় তিনি বাজেটের আকার কমানোর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, বাজেট কম আর বেশি ব্যাপার নয়। আসল ব্যাপার হচ্ছে বাস্তবতার নিরিখে বাজেট প্রণয়ন করা। সফলভাবে বাজেট যাতে বাস্তবায়ন করতে পারি সেটা চিন্তা করেই এবার বাজেট প্রণয়ন করেছি। আমি হয়তো আকাশচুম্বি বাজেট ঘোষণা করলাম। কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। তখন স্বপ্ন স্বপ্নই থেকেই যায়। স্বপ্নকে যাতে বাস্তবে রূপ দেয়া যায় সেটা বিবেচনা করে এবারের বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়।

গতকাল বাজেট অধিবেশনে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের সংশোধিত ১ হাজার ২০২ কোটি ৫৭ লাখ টাকার বাজেটও ঘোষণা করেন মেয়র। এ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ছিল ২ হাজার ৪৬৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নের হার ৪৮ দশমিক ৮০ শতাংশ।

চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলমের সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশনে বাজেট বিবরণী উপস্থাপন করেন চসিকের অর্থ ও সংস্থাপন বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মো. ইসমাইল। উপস্থিত ছিলেন চসিকের সচিব খালেদ মাহমুদ, অতিরিক্ত প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরগণ।

ব্যয় খাতসমূহ : প্রস্তাবিত বাজেটে নগর উন্নয়নে প্রকল্পের বিপরীতে ১ হাজার ১১২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। গত অর্থবছরে উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে ব্যয় হয় ৬৫৪ কোটি টাকা। এছাড়া রাস্তা ও ফুটপাতের উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, সড়ক বাতির উন্নয়নসহ ২২টি খাতে রাজস্ব তহবিলের বিপরীতে উন্নয়ন খাতে ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয় ১৪৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। গতবার রাজস্ব তহবিলের বিপরীতে ব্যয় হয় ৩৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটের ২৬ দশমিক ১৫ শতাংশ ব্যয় হবে কর্পোরেশনের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে। এজন্য বরাদ্দ রাখা হয় ৫৬৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে বেতনভাতা ও পারিশ্রমিক পরিশোধে ২৯০ কোটি ১০ লাখ টাকা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পানি খাতে ৫০ কোটি ৫০ লাখ টাকা, কল্যাণমূলক ব্যয় ৪২ কোটি ৭০ লাখ টাকা ও আতিথেয়তা ও উৎসব খাতে ৬ কোটি ৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।

প্রস্তাবিত বাজেটে চসিকের বকেয়া দেনা পরিশোধে ১৭৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। এর মধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে বকেয়া পরিশোধ করা হবে ৪৫ কোটি টাকা। বছরের বেশিরভাগ সময় মশার কামড়ে অতিষ্ঠ থাকে নগরবাসী। অথচ মশক নিধন খাতে ব্যয় বরাদ্দ বাড়ানো হয়নি প্রস্তাবিত বাজেটে। গতবারের ন্যায় এবারও ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। এর মধ্যে ওষুধ ক্রয়ে ৩ কোটি টাকা এবং ফগার ও হ্যান্ড স্প্রে মেশিন কেনায় ২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে মশক নিধন খাতে ব্যয় হয় মাত্র ৯০ লাখ টাকা।

আয় খাত : নির্বাচনী ইশতেহার ও সভা-সমাবেশ এমনকি বাজেট বক্তব্যেও সিটি কর্পোরেশনকে স্বাবলম্বী করার কথা বলেন মেয়র। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে তার প্রতিফলন ছিল না। কারণ বাজেটে সর্বোচ্চ ৫৬ দশমিক ৩০ শতাংশ আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে অনুদান ও ত্রাণ সাহায্য খাতে। এর মধ্যে ১ হাজার ২১২ কোটি টাকা উন্নয়ন অনুদান এবং ৫ কোটি টাকা ত্রাণ সাহায্য খাতে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

অথচ ২০২১-২০২২ অর্থবছরে উন্নয়ন অনুদান খাতে ১ হাজার ৫৭০ কোটি টাকার প্রস্তাব করলেও আয় হয়েছে মাত্র ৬৮৯ কোটি টাকা। এছাড়া একই অর্থবছরে ৪ কোটি ত্রাণ প্রস্তাব করলেও আয় হয়েছে ২ কোটি টাকা।

প্রস্তাবিত বাজেটে নিজস্ব উৎস থেকে ৯০৪ কোটি ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে হাল ও বকেয়া পৌরকরসহ তিন ধরনের কর থেকে ৫৮৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা আয় ধরা হয়। পৌরকরের মধ্যে হাল গৃহকর, আলোকায়ন ও পরিচ্ছন্ন রেইট খাতে ২১১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, বকেয়া গৃহকর, আলোকায়ন ও পরিচ্ছন্ন রেইট খাতে ২১৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা এবং অন্যান্য কর বাবদ ১৫৭ কোটি ৫ লাখ টাকা আয় ধরা হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে পৌরকরসহ তিন ধরনের কর খাতে আয় হয়েছে ৩১১ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

প্রস্তাবিত বাজেটে রাস্তা খননসহ বিভিন্ন ফিস থেকে ১২৫ কোটি ৮৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা, জরিমানা খাতে ৬০ লাখ টাকা, ব্যাংক স্থিতি থেকে ৫ কোটি টাকা এবং সম্পদ থেকে অর্জিত ভাড়াসহ আয় ধরা হয় ১১১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। অন্যান্য উৎস থেকেও ৩৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

এছাড়া স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর কর, স্বাস্থ্য রেজিস্ট্রেশন ও জন্ম-মৃত্যু, পেশা ও ব্যবসা-বাণিজ্য, বিজ্ঞাপন-সাইনবোর্ড, যানবাহন কর, সিনেমা ও প্রমোদ কর খাতে ১৫৭ কোটি ৫ লাখ টাকা আয় ধরা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ২১ খাল ও ১১ প্রকল্প নিয়ে যা বললেন মেয়র
পরবর্তী নিবন্ধসুলতান মনসুরের কাছে বিএনপি এখন ‘নো পার্টি’