সর্বোচ্চ পর্ষদে সিদ্ধান্তের পর দেড় বছরেও হয়নি তদন্ত কমিটি

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে অটোপাসের জেএসসির অনিয়ম আজ বোর্ড কমিটির সভা

রতন বড়ুয়া | বুধবার , ৯ আগস্ট, ২০২৩ at ১০:২৩ পূর্বাহ্ণ

২০২১ সালের ৪ ডিসেম্বর আজাদীতে ‘চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড : অটোপাসের জেএসসিতে গুরুতর অনিয়ম/কর্মকর্তারাই জড়িত/ফল প্রকাশের ৯ মাস পর নতুন করে রেজিস্ট্রেশন ও রোল নম্বর জেনারেট/পাসের তালিকায় ৩৪ শিক্ষার্থী’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওইদিন সর্বোচ্চ পর্ষদ হিসেবে পরিচিত বোর্ড কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয় শিক্ষাবোর্ডে। ১১ সদস্যের এ কমিটিতে রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) প্রতিনিধি, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি ছাড়াও সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে একাধিক স্কুলকলেজের প্রধানরা রয়েছেন। কমিটির মেয়াদ তিন বছর। শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান পদাধিকার বলে এ কমিটির সভাপতি। বোর্ড কমিটির সভায় প্রকাশিত ফলাফলসহ শিক্ষাবোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ সকল সিদ্ধান্তের অনুমোদন গ্রহণের নিয়ম রয়েছে। যার কারণে এই কমিটিকে বোর্ডের সর্বোচ্চ পর্ষদ হিসেবে গণ্য করা হয়।

২০২১ সালের ৪ ডিসেম্বর তৎকালীন চেয়ারম্যান প্রফেসর প্রদীপ চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে বোর্ড কমিটির ৬১তম সভা হয়। সভায় আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়টি উত্থাপন করেন বোর্ড কমিটির এক সদস্য। এর প্রেক্ষিতে প্রতিবেদনে প্রকাশিত অটো পাসের জেএসএসিতে অনিয়ম যাচাইয়ে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয় সভায়। একই সাথে রিপোর্ট প্রদানে কমিটিকে ২১ দিনের সময় বেঁধে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই সভার পর এর মধ্যে দেড় বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এ সংক্রান্ত অনিয়ম যাচাইয়ে কোনো কমিটি গঠনের তথ্য অদ্যাবধি পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে এ সংক্রান্ত কোনো কমিটির বিষয়ে অবহিত নন বলে জানিয়েছেন বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান প্রফেসর মুস্তফা কামরুল আখতার। তিনি আজাদীকে বলেন, আমি যোগদানের পর থেকে এ সংক্রান্ত কোনো কমিটি বা কমিটির কার্যক্রম বিষয়ে অবগত নই। আমাকে খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।

বোর্ড কমিটির সভার পর ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর অবসরোত্তর ছুটিতে যান তৎকালীন চেয়ারম্যান প্রফেসর প্রদীপ চক্রবর্তী। পরে চেয়ারম্যানের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পান তৎকালীন বোর্ড সচিব প্রফেসর আবদুল আলীম। তিনি ২০২২ সালের ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত সচিব পদে ছিলেন। ২৭ অক্টোবর অবসরোত্তর ছুটিতে যান। সচিব হিসেবে বিশেষ আমন্ত্রণে ৬১তম (২০২১ সালের ৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত) বোর্ড কমিটির সভায়ও ছিলেন প্রফেসর আবদুল আলীম।

সভায় অটো পাসের জেএসসিতে অনিয়ম যাচাইয়ে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হলেও তার সময়ে এ সংক্রান্ত কোনো কমিটির বিষয়ে জানেন না বলে মন্তব্য করেছেন প্রফেসর আবদুল আলীম। তার দাবি, তার সময়কালে এ ধরনের কোনো কমিটি হয়েছে বলে মনে হয় না। হলে সচিব হিসেবে তার জানার কথা। আর যেহেতু বেশ কিছুদিন চেয়ারম্যানের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করেছেন, সেহেতু এ সংক্রান্ত কোনো রিপোর্ট জমা হলেও তিনি তা জানতেন। তবে কমিটি বা রিপোর্ট সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বোর্ডের সর্বোচ্চ পর্ষদে সিদ্ধান্তের পরও অটো পাসের জেএসসিতে অনিয়ম তদন্তে কমিটি হয়নি শিক্ষাবোর্ডে। ওই সিদ্ধান্তের পর দেড় বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে। কিন্তু অনিয়ম যাচাই সংক্রান্ত কোনো কমিটি বা রিপোর্টের কোনো তথ্য বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। বোর্ডের কর্মকর্তাকর্মচারীদের একাংশের দাবি, মূলত বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই গুরুতর এ অনিয়মে জড়িত। যার কারণে অনিয়ম যাচাইয়ে সর্বোচ্চ পর্ষদে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হলেও তা হয়নি।

এরই মাঝে আজ ৯ আগস্ট পুনরায় বোর্ড কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মুস্তফা কামরুল আখতার এ সভার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে বৃষ্টিপাত কমার আভাস
পরবর্তী নিবন্ধরাজনীতিতে ৫ বছরের জন্য নিষিদ্ধ ইমরান খান