সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের বৈঠক

আজাদী ডেস্ক | শুক্রবার , ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৭:৪৮ পূর্বাহ্ণ

সরকারের ১৪৪ ধারা প্রবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে ২১’র কর্মসূচি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার পর ৯৪ নওয়াবপুর রোডে আওয়ামী মুসলিম লীগের সদর দপ্তরে সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের বৈঠকে বসে। এতে সভাপতিত্ব করেন আবুল হাশিম।
পরদিন ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হবে কি হবে না-এই প্রশ্নে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে গিয়ে এই বৈঠকে কে কোন পক্ষে মত দিয়েছিলেন, এ বিষয়ে রাজনীতি নিয়ে আলোচনার টেবিলে আজও নানা ধরনের বিশ্লেষণ পাওয়া যায়। অবাক হওয়ার মতো ঘটনা হচ্ছে, এ সময় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণী নেতারা কেউ ঢাকায় ছিলেন না। কর্মপরিষদের বৈঠকে মওলানা ভাসানীর উপস্থিতি অত্যন্ত জরুরি ছিল। অথচ তখন তিনি মফস্বলে সফর করছিলেন।
গাজীউল হক জানিয়েছেন, অলি আহাদ, মেডিক্যাল কলেজ ছাত্র সংসদের সহসভাপতি গোলাম মওলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক আবদুল মতিন এঁরা ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে জোরালো বক্তব্য দেন। ফজলুল হক হলের সহসভাপতি শামসুল আলম এদের সমর্থক ছিলেন। মোহাম্মদ তোয়াহা যদিও ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে বক্তব্য পেশ করেছিলেন, কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টির সিদ্ধান্ত অন্যরকম ছিল বলে তিনি ভোটদানে বিরত থাকেন। কমিউনিস্ট পার্টির সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে ভাষাসৈনিক মোহাম্মদ তকীউল্লাহ বলেন, কমিউনিস্ট পার্টি ১৪৪ ধারা ভাঙার বিষয়ে সরাসরি কোনো সিদ্ধান্ত দিতে চায়নি। তাদের বক্তব্য ছিল সংগ্রাম পরিষদই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুক। মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র এম এ আজমল ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানান। ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিরা প্রায় সবাই ১৪৪ ধারা না ভাঙার পক্ষে কঠোর মনোভাব প্রকাশ করেছিলেন।
বিশিষ্ট গবেষক বশীর আলেহলাল তার ‘ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস’ গ্রন্থের ৩০৫ পৃষ্ঠায় এ প্রসঙ্গে আলোচনায় উল্লেখ করেন যে, ‘সর্বদলীয় কর্মপরিষদের সদস্য ছিলেন প্রায় ৪০ বা ৪০এর বেশি, বা, অলি আহাদের তথ্য অনুযায়ী ২৮ জন। তাদের মধ্যে ১৫-১৬ জন সেদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন? মোহাম্মদ তোয়াহা ছাড়া তো আর কারো ভোটে অংশগ্রহণ না করার কথা কেউ বলেননি। কিন্তু ১১ জন বিপক্ষে ও চার জন মাত্র ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে ভোট দেওয়ার কথা একাধিক স্মৃতিচারণকারী বলেছেন।’
অলি আহাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী আরেকটি মজার বিষয় এই যে, সেদিন শামসুল হকের লেখা যে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছিল তা রচিত হয়েছিল ইংরেজিতে। অথচ এঁরা সবাই সংগ্রাম করছিলেন মাতৃভাষা বাংলার জন্য।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএইচএসসির ফল প্রকাশ রোববার
পরবর্তী নিবন্ধঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে আবার হবে অভিযান