সর্বত্র জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে

এম সোলাইমান কাসেমী | শনিবার , ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৫:৫৯ পূর্বাহ্ণ

ছাত্রজনতার জাগরণের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমরা বিশ্বাস করি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সব সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে তাদের ভবিষ্যত লক্ষ্য অর্জনেও সফল হবেন। কারণ ছাত্ররাই অজেয়। শুধু বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছাত্র আন্দোলনের অজেয় রূপ দেখেছি। এ সফলতা যতটা না সরকার পরিবর্তন করে দেখিয়েছে তার চেয়ে বেশি পুরো রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার বৈকল্যকে তুলে ধরে সমাজ ও রাষ্ট্রকে নাড়িয়ে দেয়ার শিক্ষা অনাদিকাল পর্যন্ত নির্দিষ্ট নাগরিক সমাজকে দিয়েছেন। এ আন্দোলনের প্রভাব অনেক গভীর ও ব্যাপক। বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং শেষমেশ দুই হাজার চব্বিশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নতুন ইতিহাসের জন্ম দিয়েছে। আমাদের এই বর্তমান জেনারেশনকে জেন জি বলা হচ্ছে এবং ডিজিটাল এই যুগে দেশের তরুণ সমাজ বিভিন্ন নেশায় আসক্ত, ফোন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্ত বলেই সবার ধারণা। ঠিক যেই জেনারেশন নিয়ে সুশীল সমাজের এত উদ্বিগ্নতা ছিল, সেই জেনারেশনই বাধ্য করল দেশের বৈষম্য দূর করতে, স্বৈরাচারে পতন ঘটাতে। ঘুমন্ত জাতিকে জাগিয়ে তুলতে। কীভাবে একটি স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হয় রংপুরের শহিদ আবু সাইদের বুক পেতে গুলিবিদ্ধ হওয়া আমাদের প্রতিবাদী চেতনার এক চূড়ান্ত প্রতিফলন।

কোটাবিরোধী আন্দোলনের অপূরণীয় ক্ষতি হলো ছাত্রজনতার ব্যাপক প্রাণহানি। আমরা যখন বিজয় উদযাপন করছি তখনো আমাদের হৃদয় অনেক ভারাক্রান্ত। বুক পেতে দেয়া সাঈদ, মুগ্ধ ও তাদের সহযোদ্ধা শহীদ ছাত্রজনতাসহ ছোট ছোট নিষ্পাপ শিশুর কথা মনে পড়ছে যারা বাসায়, বারান্দায় আর বাড়ির উঠোনে শহীদ হয়েছেন, তাদের আর ফিরিয়ে আনতে পারবো না। তাই তাদের জন্য দোয়া করি সবসময়ই। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে চলা এই স্বৈরশাসনের অবসান কোনো রাজনৈতিক দল করতে পারেনি যেটা করে দেখিয়েছে আমাদের ছাত্রসমাজ। এখানে দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দেশের সাধারণ জনগণের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। শুধু আন্দোলনে যুক্ত হওয়াটাই না, কীভাবে আন্দোলনরত মানুষকে সহযোগিতা করতে হয় তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে। সব রাজনৈতিক দল অবশ্যই এই আন্দোলনের সমর্থকদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এছাড়াও দেশের সুশীলসমাজ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, বিভিন্ন পেশাজীবীর মানুষ ঐক্যবদ্ধ ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল।

এই আন্দোলনে বিজয়ের কারণে দেশে বাকস্বাধীনতা ফিরে এসেছে বলেই মনে হচ্ছে। দেশের সব অঞ্চল থেকেই সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে যেভাবে আওয়াজ উঠতে শুরু করেছে তাতে মনে হচ্ছে তারুণ্যের এই হুংকারেই পরিবর্তন সম্ভব। সবাই তাদের অধিকার নিয়ে সচেতন হচ্ছে, কথা বলা শুরু হয়েছে। সবাই দুর্নীতি, অবিচার, অনিয়ম নিয়ে কথা বলছে। এমনভাবে প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে যেন মনে হচ্ছে দেশটি অশুভ শক্তির জন্য আর নিরাপদ না। আমাদের ছাত্রসমাজ পথ দেখালো নতুন এক বাংলাদেশ বিনির্মাণের। সবকিছু মিলিয়েই নতুনভাবে দেশের সর্বোচ্চ ভালো ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিতের অপেক্ষায় এখন পুরোজাতি।

দেশের সাধারণ মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে, বিবেক ও নীতিনৈতিকতার আলোকে আমাদের সবাইকে উদ্ভাসিত হতে হবে। দেশে গণতান্ত্রিক ধারা নিশ্চিত করতে হবে। সর্বত্র জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। দেশের সব নাগরিক যাতে তাঁদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হন, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদখলবাজ, চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা হোক
পরবর্তী নিবন্ধসামাজিক সংগঠন সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ