সর্বত্র ঈদের আমেজ

কাল চাঁদ দেখা গেলে সোমবার পবিত্র ঈদুল ফিতর

মোরশেদ তালুকদার | শনিবার , ২৯ মার্চ, ২০২৫ at ৫:১৪ পূর্বাহ্ণ

এনেছে নবগীতি, এনেছে সুখস্মৃতি, এনেছে প্রেমপ্রীতিপুণ্য,/ এনেছে নবআশা, একতাভালোবাসা, নিবিড় মিলনের জন্য/ ভ্রাতৃপ্রণয়ের মহান দৃশ্য!/ মিলনকলগানে মুখর বিশ্ব!/ বিভেদ জ্ঞানে যতো আজিকে সব হত, ধন্য ঈদ তুমি ধন্য!

এসেছে খুশির ঈদ। প্রীতিপ্রেম আর শান্তির পরশ নিয়ে এসেছে ঈদ। এসেছে ধনীগরিব বিভেদ ভুলে আনন্দ ভাগাভাগি করার ঈদ। এসেছে মানুষের মধ্যে সাম্য ও সমপ্রীতির মেলবন্ধন তৈরি করার ঈদ। এসেছে সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করার ঈদ। তাই তো কবি গোলাম মোস্তফা বলেছেন, ‘এনেছে নবগীতি…. ঈদ তুমি ধন্য’।

পবিত্র রমজান মাসে সিয়ামসাধনার পর আসে ঈদুল ফিতর। শাওয়াল মাসের প্রথম তারিখকে বলা হয় ঈদুল ফিতরের দিন। মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব এই ঈদুল ফিতর। ঈদ আরবি শব্দ, এর অর্থ বার বার ফিরে আসা। মুসলিম সমাজে প্রতি বছর দিনটি ফিরে আসে বলে এটাকে বলা হয় ঈদ। আবার ঈদ অর্থ খুশি, আনন্দ। সেই প্রথম রমজান থেকেই ঘরে ঘরে শুরু হয়েছে ঈদ উদযাপনের মানসিক প্রস্তুতি। ১৫ রমজানের পর গতি পেয়েছে তাতে। তবে সবাই দল বেধে আকাশে পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ খোঁজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে সেই আনন্দ উদযাপনের প্রথম ধাপ। সারাবছরই চাঁদ ওঠে আকাশে। কিন্তু শাওয়াল মাসের এই চাঁদ দেখায় যে উৎসাহ তা অন্য সময়ে থাকে না। আগামীকাল রোববার (২৯ রমজান) সন্ধ্যায় পশ্চিম আকাশে সবাই এই চাঁদ খুঁজবেন। রোববার চাঁদ দেখা গেলে সোমবার পালিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। অন্যথায় মঙ্গলবার। তবে চাঁদ দেখা গেলেই আনন্দের হাওয়া ছড়িয়ে পড়বে সবখানে। উৎসবে শামিল হবে সবাই। ঘরে ঘরে বেজে উঠবে– ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ, তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দিবি শোন আসমানি তাগিদ।’ জানা গেছে, ইসলাম ধর্মে ঈদের সূচনা হয়েছে দ্বিতীয় হিজরীতে। হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় আসেন, তখন দেখেন সেখানকার লোকেরা বছরে দুই দিন (নাইরোজ ও মিহরজান নামে দুটি দিনে) আনন্দ করে, খেলাধুলায় মগ্ন থাকে। এমন পরিস্থিতি দেখে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহতায়ালা তোমাদের এ দুই দিনের পরিবর্তে আরও বেশি উত্তম ও কল্যাণকর দুইটি দিন দিয়েছেন। এগুলো হলঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা।

ঈদুল ফিতরের আসল উদ্দেশ্য মুফতী মুহাম্মাদ রফীউদ্দীন তার এক নিবন্ধে বলেছেন, ‘মাসব্যাপি সিয়াম সাধনার পর ঈদুল ফিতরের এই দিনটি মূলত আল্লাহ দিয়েছেন তার প্রতি কৃতজ্ঞতা নিবেদনের জন্য। তিনি যে রমজানের সবকটি রোজা রাখার এবং তার ইবাদতে পুরো একটি মাস কাটানোর তাওফিক দিয়েছেন সেজন্য শোকর আদায়এটাই ঈদের তাৎপর্য। এই মাসে রোজা রাখতে পারা এবং আল্লাহর ইবাদতের অসীমঅবারিত সুযোগ পাওয়ার যে আনন্দ মুমিনহৃদয়কে ছুঁয়ে যায়ঈদুল ফিতর হল সেই আনন্দ প্রকাশ করার উৎসব। সে আনন্দের প্রকাশ ঘটে দলে দলে ঈদগাহে হাজির হয়ে মহান রবের কৃতজ্ঞতায় সালাত আদায়ের মধ্য দিয়ে। তার মহিমা ও বড়ত্বের ঘোষণা দিয়ে তাকবীর পাঠের মাধ্যমে এবং এই সিয়ামসাধনা যেন কবুল হয় সেজন্য একে অপরের কাছে দোয়া চাওয়ার মাধ্যমে।’

এদিকে পরিবার ও স্বজনের সঙ্গে উদযাপনের মধ্য দিয়েই পূর্ণতা পায় ঈদ আনন্দ। তাই সবাই ছুটছেন নিজ নিজ এলাকায়। গত কয়েকদিন ধরে রেল স্টেশন, বাস স্টেশন সবখানেই ভিড় ছিল ঘরমুখো মানুষের। ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে নগরী। সবাই নাড়ির টানে ছুটছেন গ্রামের দিকে।

ঈদের দিন সবাই পরিধান করে নতুন জামা। তাই নতুন জামা কিনতে সেই প্রথম রমজান থেকেই বিভিন্ন শপিং মলে ভিড় করতে দেখা গেছে। সারাবছরই মানুষকে কেনাকাটা করতে হয়। কিন্তু ঈদকে উপলক্ষ করে যে কেনাকাটা তার উপলব্ধি, তার শিহরণ, ভালোলাগা এবং অনুভূতি অন্যরকম। সারাবছর কেনাকাটা করতে হয় ঠিকই কিন্তু এসব কেনাকাটা ঈদের কেনাকাটার মতো অতটা তাৎপর্যবহ নয়। কারণ, ঈদের দিনে সদ্য কেনা নতুন কাপড় পড়ার অনুভূতিই যে এ কেনাকাটায় কাজ করে।

ঈদ জামাত :

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে ঈদের প্রথম ও প্রধান জামাত সকাল ৮টা এবং দ্বিতীয় জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ও প্রধান জামাতে ইমামতি করবেন জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদের খতিব হযরতুল আল্লামা সৈয়দ আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দীন আল কাদেরী, দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করবেন জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম। লালদীঘি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন শাহী জামে মসজিদে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮ টায়। এছাড়া নগরে চসিকের তত্ত্বাবধানে সকাল ৮টায় ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে যথাক্রমে হযরত শেখ ফরিদ (.) চশমা ঈদগাহ মসজিদ, সুগন্ধা আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, চকবাজার সিটি কর্পোরেশন জামে মসজিদ, জহুর হকার্স মার্কেট জামে মসজিদ, দক্ষিণ খুলশী (ভিআইপি) আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, আরেফীন নগর কেন্দ্রীয় কবরস্থান জামে মসজিদ, সাগরিকা গরুবাজার জামে মসজিদ ও মা আয়েশা সিদ্দিকী চসিক জামে মসজিদে। এছাড়াও হালিশহর এইচ ব্লক জামে মসজিদে ঈদের নামাজ সকাল ৭টায়, সাড়ে ৭টায় ও ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রধান উপদেষ্টা আজ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা করবেন, নেবেন সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি
পরবর্তী নিবন্ধপবিত্র জুমাতুল বিদা পালিত