‘সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি ’অনন্য কাজের শুভ সূচনা

| শুক্রবার , ১৮ আগস্ট, ২০২৩ at ৯:২৩ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুলপ্রত্যাশিত ‘সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি’র উদ্বোধন করলেন। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ১০ মিনিটে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন তিনি। উদ্বোধনের দিন থেকেই যে কেউ চাইলে এই প্রক্রিয়ায় নিবন্ধন করে যুক্ত হতে পারবেন বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। এই পেনশন ব্যবস্থার মাধ্যমে আগামী দিনে বেসরকারি চাকরি থেকে অবসরে গিয়েও পেনশন সুবিধা ভোগ করা যাবে। এ স্কিম থেকে বাদ পড়ছেন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধাপ্রাপ্ত ১ কোটি ৩৮ লাখ মানুষ। কেননা তাদের সবাই নগদ ভাতার সুবিধা পাচ্ছেন।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্বকর্মে নিয়োজিত ও স্বল্পআয়ের নাগরিক ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা এতে অংশ নিতে পারবেন। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বিভিন্ন ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি রয়েছে। এর মধ্যে সরকার থেকে নগদ আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন ১ কোটি ৩৮ লাখ মানুষ। এছাড়া খাদ্য সহায়তা পাচ্ছেন ৩ কোটি ৬৭ লাখ জন। এর বাইরে আরও বিভিন্ন ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি রয়েছে। চলতি অর্থবছরে শুধু নগদ আর্থিক সহায়তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ আছে ৪৩ হাজার কোটি এবং খাদ্য সহায়তা কর্মসূচিতে আছে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া অন্যান্য কর্মসূচিতেও বড় ধরনের বরাদ্দ আছে।

এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, সরকার আগামী দিনে পর্যায়ক্রমে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে আসবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির চাপ তুলে দিয়ে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিয়ে আসা হবে।

প্রসঙ্গত, জাতীয় সংসদের গত অধিবেশনে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩’ পাশ হয়। ৩১ জানুয়ারি আইনটিতে সম্মতি দেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। পরে ১৩ আগস্ট এর বিধিমালা জারি করা হয়।

চারটি আলাদা স্কিম নিয়ে সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থার যাত্রা শুরু হয়েছে। এগুলো হচ্ছে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা। প্রবাস স্কিমটি শুধু প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য। প্রগতি স্কিম বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের জন্য। সুরক্ষা স্কিম রিকশাচালক, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি ইত্যাদি স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য। আর সমতা স্কিম নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তাকাঠামোর আওতায় বৃদ্ধকালীন সুরক্ষা নিশ্চিত করতে জাতীয়ভাবে একটি সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তনের অঙ্গীকার করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে সরকার জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র প্রণয়ন করে। এতে দেশে একটি ব্যাপকভিত্তিক সমন্বিত অংশগ্রহণমূলক পেনশনব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রস্তাব করা হয়।

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে পেনশনব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রত্যেক চাঁদাদাতার জন্য একটি আলাদা পেনশন হিসাব থাকবে। চাঁদাদাতা ৬০ বছর বয়স থেকে পেনশন পাওয়া শুরু করবেন। ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে তাঁর নমিনি মূল পেনশনারের বয়স ৭৫ হওয়ার বাকি সময় মাসিক ভিত্তিতে পেনশন পাবেন। ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগে কেউ মারা গেলে জমা হওয়া অর্থ মুনাফাসহ ফেরত পাবেন নমিনি। পেনশনের অর্থ বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে এবং মাসিক পেনশনের অর্থ আয়করমুক্ত থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজের শুভ সূচনা করে উন্নয়নঅগ্রযাত্রার পুরোধাব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন।‘সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি’র উদ্বোধন করে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর জীবনজীবিকায় সহায়তা করলেন। দেশের নানা খাতে দুর্নীতির যে অভিযোগ আছে, সে বিষয়ে তাঁর নিজের দৃঢ়তা প্রদর্শন করতে পারলে দেশ সম্মুখে অগ্রসর হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি প্রণয়ন করেছিলেন, তাকে আবার সামনে নিয়ে আসতে হবে। ঐ ধরনের আরেকটি অভিযান যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবিলম্বে শুরু করেন তাহলে তাঁর নেতৃত্বে অর্জিত দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি, মাথাপিছু জিডিপি’র প্রসার এবং ২০২২ সাল ও ২০২৩ সালে বাস্তবায়িত মেগাপ্রজেক্টগুলোর সুফল তিনি আগামী নির্বাচনে ঘরে তুলতে সক্ষম হবেন বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এখন থেকে যদি সত্যিকারভাবে দুর্নীতি, পুঁজিলুন্ঠন এবং পুঁজিপাচারের বিরুদ্ধে বিশ্বাসযোগ্যভাবে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা হয় তাহলে আগামী কয়েক মাসে দেশ আরো এগিয়ে যাবে। সরকারও তার ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতে পারবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে