মিয়ানমারের চলমান সংঘাতে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সীমান্তের ৫০২ জন পরীক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিবে স্থানান্তরিত নতুন পরীক্ষা কেন্দ্র উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্কুলে। গতকাল সোমবার বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে বিষয়টি জানিয়েছেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম। এ সময় অন্যদের মধ্যে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরেআলম মিনা, ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজসহ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকতারা উপস্থিত ছিলেন।
পরিদর্শনকালে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি বর্তমানে মোটামুটি শান্ত। আজকে পর্যন্ত সীমান্ত পরিদর্শন করে যতটুকু দেখেছি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে উঠেনি। তাই শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিরাপত্তা বিবেচনায় ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রটি সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি সীমান্তবর্তী পরীক্ষার্থীরা স্থানান্তরিত দুটি বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নিবে। জেলা প্রশাসক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের প্রস্তাবিত প্রস্তাবনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন হয়েছে সিদ্ধান্তটি।
তিনি আরও বলেন, সীমান্তের সুরক্ষায় বিজিবি সতর্কবস্থায় রয়েছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীদের সে দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আলাপ আলোচনা চলছে। দুই একদিনের মধ্যে একটা ফলাফল পাওয়া যাবে আশা করছি।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরেআলম মিনা বলেন, সীমান্তের বিষয়টি বিজিবি দেখছে। দেশের অভ্যন্তরে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা এবং গুজবে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। কোনো ধরণের রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীর অনুপ্রবেশের তথ্য নেই পুলিশের কাছে। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সীমান্ত এলাকাগুলোতে কিছু গুজব ছড়ানো হচ্ছে, এগুলোর বিষয়ে স্থানীয়দের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন সীমান্তে আজও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সীমান্তের ওপারে গোলা বিস্ফোরণের শব্দ না থাকলেও ভয়ে ঠিকমতো কাজে বেরুচ্ছে না সীমান্ত অঞ্চলের বাসিন্দারা। মিয়ানমারে চলমান সংঘাতে নিরাপত্তা বিবোচনায় গত ২৯ জানুয়ারি বন্ধ ঘোষণা করা ৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এখনো খুলেনি। বিদ্যালয়গুলো হচ্ছে, বাইশপারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজাবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু পশ্চিমকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রেজু গর্জন বুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ত্রিরতন চাকমা।
ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, বান্দরবানের ঘুমধুম ইউনিয়নের সীমান্ত পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। কয়েকদিন ধরে গোলাগুলি বিস্ফোরণের কোনো শব্দ শোনতে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে আতঙ্কে সীমান্তবাসীরা এখনো ঠিকঠাক কাজ কর্মে যাচ্ছে না। সীমান্তবর্তী তুমব্রু বাজারে দোকানপাট খুললেও লোকজনের আনাগোনা কম। সীমান্তের ব্যবসা বাণিজ্যও জমে উঠেনি আজও।