আওয়ামী লীগের মতো জাতীয় পার্টিকেও নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যমুনায় বৈঠক শেষে দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের তাদের এ দাবির কথা বলেন। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির ব্যাপারে সুস্পষ্ট করে বলেছি, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের সহযোগী ছিল জাতীয় পার্টি। যেভাবে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তেমনিভাবে জাতীয় পার্টিকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে। শুক্রবার রাতে জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের সংঘর্ষ ঘিরে যৌথবাহিনীর লাঠিপেটায় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর গুরুতর আহত হন। এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধের দাবি ওঠায় রাজনৈতিক অঙ্গনে আবার উত্তাপ দেখা দিয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
বাংলানিউজ জানায়, আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, যে সরকার (অন্তর্বর্তী) একটি বাসস্ট্যান্ড চাঁদাবাজি থেকে রক্ষা করতে পারে না সেই সরকার কীভাবে এত বড় নির্বাচন করবে? বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত। তিনি বলেন, এই সরকার দখলদারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। আগে এক গ্রুপ বাসস্ট্যান্ড দখলে নিয়েছে। এখন আরেক গ্রুপ নিয়েছে। মনে হচ্ছে সরকার হাত–পা ছেড়ে দিয়েছে। সরকারকে এখন আরো কঠোর হতে হবে। এখনো এর থেকে উত্তরণ ঘটানো সম্ভব। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর দুঃখ প্রকাশ করে বলবে, ‘এভাবে নির্বাচন দিতে চাইনি’। এটা হবে না।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য করণীয়, বানচালের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ৩ বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন। সংস্কার, বিচার এবং সুষ্ঠু নির্বাচন।
তাহের বলেন, একটা নীলনকশার নির্বাচনের দিকে যাচ্ছি কিনা, এমন প্রশ্ন উঠেছে। লন্ডনে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা–এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হয়েছে। পরিকল্পিত নির্বাচন হলে গণতন্ত্রকামী মানুষদের পক্ষে নির্বাচনে অংশ নেওয়া সংকুচিত হয়ে যাবে। নির্বাচনের তারিখের ব্যাপারে দ্বিমত–দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই জানিয়ে তিনি বলেন, তবে নির্বাচনের কার্যকারিতার ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেছি।
ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করা ৩১টি দলের মধ্যে ২৫টি দল পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায় জানিয়ে তিনি বলেন, কেউ শুধু উচ্চকক্ষে চায়, জামায়াতসহ অনেকে উভয়কক্ষে পিআর চায়। কেন্দ্র দখল ঠেকাতে এই নতুন পদ্ধতিতে নির্বাচন জরুরি। মেজরিটিকে অবজ্ঞা করে কারো চাপে নির্বাচনে গেলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আমাদের জন্য নির্বাচনে যাওয়া সংকুচিত হয়ে যাবে।
দুয়েকটি দল জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বাধা দিচ্ছে অভিযোগ করে তাহের বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কাছে আইনি ভিত্তির দাবি জানিয়েছে জামায়াত। জুলাই সনদের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। বাস্তবায়ন না হলে জুলাই শহীদদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। জুলাই সনদ নিয়ে একটি দল বাধা দিচ্ছে উল্লেখ করেন তাহের। কিন্তু কোন দল সেটি না জানিয়ে তিনি বলেন, জুলাই সনদ, পিআর নিয়ে জনগণের কাছে যাওয়া উচিত। তারা গণভোটে সিদ্ধান্ত নেবে। সরকারের উচিত স্টেকদের সাথে আলাপ–আলোচনা করে নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া। রাজনৈতিক দলগুলোকেও নিজেদের মধ্যে আলোচনা করা উচিত। বৈঠকে নির্বাচনের আগে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও পিআর পদ্ধতিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে জামায়াত।
নির্বাচন ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে তিনটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। প্রথমে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বিকাল সাড়ে ৪টায় তিনি বৈঠকে বসেন বলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানিয়েছে। বৈঠকে জামায়াতের নায়েবে আমির তাহেরের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। অন্যরা হলেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আযাদ।