আন্দোলন করে আওয়ামী লীগ সরকারকে ‘উৎখাত’ করা এত সোজা নয় বলে মন্তব্য করেছেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বিএনপি কেন বিজয়ের মাসে বিজয়ের অনুষ্ঠান করবে? সেদিন তারা আসল আন্দোলন করে সরকার উৎখাত করবে। এতই সোজা?
দেশে বিভিন্ন সরকার উৎখাতে আওয়ামী লীগের ‘অবদানের’ কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইয়ুব খানকে আমরা উৎখাত করেছি, ইয়াহিয়া খানকে যুদ্ধে পরাজিত করে উৎখাত করেছি, জিয়াকে পাই নাই হাতে, কিন্তু জিয়া যখনই যেখানে গেছে, আন্দোলন তো তার বিরুদ্ধে হয়েছে। এরশাদকে উৎখাত করেছি, খালেদা জিয়া (১৯৯৬ সাল) ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোট চুরি, তাকে উৎখাত করা হয়েছে। আবার ২০০৬-এ ভোট চুরি করেছিল, ১ কোটি ২৩ লক্ষ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোট করতে চেয়েছিল, সেটাও বাতিল হয়েছে।
এদিকে সাত দলের নতুন জোট গণতন্ত্র মঞ্চের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে বামপন্থি দলগুলোর যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণায় তিনি অবাক হয়েছেন। তিনি বলেন, সেই জামায়াত-বিএনপি তাদের সঙ্গে আমাদের বাম, অতি বাম, স্বল্প বাম, তীব্র বাম, কঠিন বাম সব যেন এক হয়ে এক প্ল্যাটফর্মে। ওই যে বলেছিল না, কী বিচিত্র এই দেশ, সেলুকাস! সেই কথাই মনে হয়। কোথায় তাদের আদর্শ? কোথায় তাদের নীতি? আর কোথায় কী? খবর বিডিনিউজের।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসলে… হ্যাঁ চক্রান্ত করতে পারবে, ষড়যন্ত্র করতে পারবে। ‘ষড়যন্ত্রের’ বিষয়ে নেতা-কর্মীদের সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, চক্রান্ত করে ২০০১-এ আমাদের ক্ষমতায় আসতে দেয়নি। তার ভোগান্তি এদেশের মানুষের হয়েছে। মানুষকে সজাগ থাকতে হবে যে আবার সেই ভোগান্তিতে পড়তে হবে?
২০৪১ সালের ‘স্মার্ট’ বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সেই বাংলাদেশে প্রত্যেকটা মানুষ কম্পিউটার ব্যবহারে পারদর্শী হবে। আমাদের অর্থনীতি আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য। আমাদের সবকিছু আমরা ই-গর্ভনেন্স, ই-বিজনেস… সবকিছু আমরা এভাবে করব। এমনকি স্বাস্থ্যসেবা থেকে শিক্ষা সবকিছুতেই আমরা গড়ে তুলব। সেইভাবে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। খুনি-যুদ্ধাপরাধীরা ফের যেন দেশটাকে আর ধ্বংস করতে না পারে, সেই লক্ষ্য নিয়ে বিজয়ের পতাকা সমুন্নত রেখে চলতে হবে।
বামপন্থিরা কীভাবে জামায়াতের সঙ্গে যায় : যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচির দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট মিলে এবং তাদের সঙ্গে আরও কিছু পার্টি দাঁড়াল… আরেকটি জিনিস খুব অবাক লাগে, কোথায় বামপন্থি আর কোথায় ডানপন্থি। যারা বামপন্থি, তারা মনে হয় ৯০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে।
সরকারপ্রধান বলেন, কী কারণে যারা হত্যাকারী…, গ্রেনেড হামলায় আইভী রহমানসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হত্যায় যার বিচার হয়েছে, সাজাপ্রাপ্ত আসামি…, দেশের টাকা পাচারকারী। সব ধরনের অপকর্ম, এতিমের টাকা আত্মসাৎ করা, এতিমের টাকা ব্যাংকে রেখে সেই টাকার মুনাফা খাওয়া। এই সমস্ত সাজাপ্রাপ্ত আসামি তাদের নেতৃত্বে আমাদের বড় বড় তাত্ত্বিক, বড় বড় কথা বলে, তারা এক হয়ে যায় কীভাবে? সেটাই আমার প্রশ্ন।
বাম ও ডানপন্থি সাত দল মিলে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’নামে নতুন একটি জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটে চলতি বছরের ৮ আগস্ট। কয়েক দফা বৈঠকের পর গত ৭ ডিসেম্বর বিএনপির সঙ্গে লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করে ‘যুগপৎ আন্দোলনে’ নামার ঘোষণা দেন মঞ্চের নেতা ‘নাগরিক ঐক্য’র সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, যিনি একসময় ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর বিএনপির কর্মসূচির সঙ্গে গণমিছিল ডেকেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। মঞ্চের অন্য শরিকগুলো হলো বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, জেএসডি, গণঅধিকার পরিষদ।
বিএনপি স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করেছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই দলে যুক্ত হয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে হবে? আর ১০ ডিসেম্বর যেদিন আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা শুরু করল, ১৪ তারিখ পর্যন্ত সমানে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করল। কোনো জ্ঞানী-গুণী বুদ্ধিজীবী থাকবে না। দেশটা দাঁড়াতে পারবে না। সেটাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। এদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাদেরকে সমর্থন করে কীভাবে? এটা ভাবলে আমার অবাক লাগে। এরা তো ইতিহাস জানে!
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের অপরাধটা কী? আওয়ামী লীগ তো ক্ষমতায় বসে নিজে খাচ্ছে না। আওয়ামী লীগ তো দেশের মানুষকে খাওয়াচ্ছে। দেশে গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষকে ঘর দিচ্ছি। রোগে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। প্রতিটি মৌলিক চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে। সভায় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সিমিন হোসেন রিমি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বক্তব্য দেন।