সরকারের পাশাপাশি পরিবারের রয়েছে দায়িত্বশীল ভূমিকা

| রবিবার , ২৯ মে, ২০২২ at ৮:০৮ পূর্বাহ্ণ

নিরাপদ মাতৃস্বাস্থ্য, মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস ও নবজাতকের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গতকাল নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতীয় নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস উদযাপিত হয়েছে। আমরা জানি, মাতৃত্বের মধ্য দিয়েই নারীর জীবন পূর্ণতা লাভ করে। স্বাভাবিকভাবেই সব নারী মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ করতে চায়। ১৯৯৭ সাল থেকে ২৮ মে বাংলাদেশ সরকার নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালন করে আসছে। নিরাপদ মাতৃত্ব হলো মায়ের চাওয়া অনুযায়ী গর্ভধারণ, গর্ভকালীন সেবা, নিরাপদ প্রসব ও প্রসব-পরবর্তী সেবা নিশ্চিত হওয়া। জাতীয় পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে দিবসটি পালন করা হয়। এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যে সচেতনতা সৃষ্টি হচ্ছে তা নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশা রাখি।
একজন গর্ভবতী মা গর্ভধারণের পর থেকে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগ পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার রাখেন। শুধু মা-ই নন, মাতৃগর্ভে বেড়ে ওঠা শিশুরও যত্ন প্রয়োজন, যাকে বলা হয় গর্ভকালীন সেবা। এই গর্ভকালীন যত্নের লক্ষ্য হলো মা ও শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা এবং গর্ভজনিত কোনো জটিলতা দেখা দিলে তা প্রতিরোধ বা চিকিৎসা করা। এককথায় মায়ের স্বাস্থ্যের কোনো অবনতি না করে পরিবার, সমাজ ও দেশকে একটি সুস্থ শিশু উপহার দেওয়া।
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, দেশে বর্তমানে প্রতি লাখ জীবিত জন্মে মাতৃমৃত্য ১৬৫ জন, যা ২০০৯ সালে ছিল ২৫৯ জন। গত ১০ বছরে মাতৃমৃত্যু হার কমেছে প্রতি লাখ জীবিত জন্মে প্রায় ৯৪ জন। যদিও গত ১০ বছরের পরিসংখ্যানে কিছুটা উন্নতি দেখা যাচ্ছে, কিন্তু সরকারের লক্ষ্য মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লাখ জীবিত জন্মে ৭০ জনের নিচে নিয়ে আসা। সেই জন্য প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সরকার মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে আরও জোরালো ভূমিকা রাখতে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।
মাতৃমৃত্যুর হার কেন দ্রুত কমিয়ে আনা যাচ্ছে না সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইতোপূর্বে বলেছিলেন, প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে দেশের আনাচে-কানাচে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে গেছে। এখন মায়েদের হোম ডেলিভারিতে নিরুৎসাহিত করতে মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্যোগী হতে হবে। যত্রতত্র ও অস্বাস্থ্যকর ক্লিনিকে মায়েদের ডেলিভারি বন্ধ করতে হবে। দেশের সরকারি হাসপাতালে সেবা নিতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। যেসব ক্লিনিক স্বাস্থ্য সম্মত নয়, সেগুলো প্রয়োজনে সিলগালা করে দিতে হবে। লোকবল আরও প্রয়োজন হলে নিয়োগ দিন। মিডওয়াইফ কর্মীদের কাজে লাগাতে হবে, তাদের নিরাপদ ডেলিভারি করতে উৎসাহিত করতে হবে। যেখানে যে উদ্যোগ প্রয়োজন সেখানে সেভাবেই কাজ করতে হবে, তবুও মাতৃমৃত্যু হার ধীরে ধীরে ৫০-এর নিচে নামিয়ে আনতে হবে।
সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি চারজন নারীর মধ্যে তিনজন গর্ভকালীন সেবা অর্থাৎ এন্টিনেটাল কেয়ারের (এএনসির) আওতায় চলে এসেছেন। তবে এক-চতুর্থাংশ নারী এখনো চিকিৎসাসেবার আওতায় নেই। এটা নিয়ে কাজ করতে হবে। গর্ভবতী নারীর সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৫ বছর বা এর সমবয়সী মায়ের সংখ্যা বাড়ছে। তাদের মাতৃত্বকালীন ঝুঁকি অনেক বেশি। এ জন্য এএনসি সুবিধার আওতায় এনে আরও ভালো পরিচর্যা করা প্রয়োজন। সচেতন ও শিক্ষিত নারীরা নিজ থেকেই মাতৃত্বকালীন সেবা গ্রহণ করছেন। এ জন্য নারীকে শিক্ষার মাধ্যমে সচেতন করতে হবে। কমিউনিটিতে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে। অধিকাংশ গর্ভকালীন সেবা বেসরকারি খাতে পরিচালিত হচ্ছে। এ জন্য বেসরকারি খাতকে সঠিক বিধির আওতায় এনে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মীর মাধ্যমে সঠিক তথ্য প্রচার করে গর্ভকালীন সেবার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা সম্ভব। ক্লিনিকগুলোতে ছোট পরিসরে ল্যাব-সুবিধা প্রদান করে প্রসব-পূর্ববতী সেবা (এএনসি) বাড়াতে হবে। সরকারের পাশাপাশি সচেতন ব্যক্তিদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। নারীর ক্ষমতায়ন ঘটিয়ে এএনসি সুবিধার মাধ্যমে নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে হবে। তবে, সরকারের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। মায়ের যেন কোনো সমস্যা না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। মাকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধসুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় : শিক্ষাবিদ ও ভাষাতাত্ত্বিক