আর্থিক সংকটে থাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বেগ পেতে হয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে (চসিক)। তাই অর্থের সংস্থানে বার বার মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হতে হয় প্রতিষ্ঠানটিকে। রাস্তাঘাট সংস্কারসহ অন্যান্য উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনায় অর্থের যোগানে থোকসহ বিশেষ বরাদ্দ চেয়ে একাধিকবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর কাছে উপানুষ্ঠানিক পত্রও দিয়েছেন চসিক প্রশাসক। অথচ ৩৩ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে পৌরকর খাতে চসিকের বকেয়া আছে ১০০ কোটি ৯৭ লাখ ৮৫ হাজার ৬১৪ টাকা!
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বকেয়া আদায় করতে পারলে আর্থিক সংকট কিছুটা হলেও দূর হবে। এছাড়া উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনায় কেবল মন্ত্রণালয়ের দিকেও তাকিয়ে থাকতে হবে না। অবশ্য আন্ত:মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের মাধ্যমে বকেয়া পৌরকর আদায়ের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনকে আশ্বস্ত করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন দৈনিক আজাদীকে বলেন, গত ৮ অক্টোবর সার্কিট হাউজে যে সভা হয়েছিল সেখানে আমরা সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে পৌরকর খাতে বকেয়া পাওনার বিষয়টি উপস্থাপন করি। পরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেছেন, মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে বকেয়া পৌরকর বিষয়ে জানানোর জন্য। এরপ্রেক্ষিত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করে পৌরকর আদায় করা হবে বলে তিনি জানান। এ বিষয়ে চট্টগ্রামের মন্ত্রীদের সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে। তারাও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। দুয়েকদিনের মধ্যে চিঠি দেবো। প্রসঙ্গত, সার্কিট হাউজে ‘কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি, দখল ও দূষণ রোধে প্রণীত মাস্টারপ্ল্যানের বাস্তবায়ন, চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন সংক্রান্ত’ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। সভায় চসিকের পৌরকর পরিশোধে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেছিলেন, সিটি কর্পোরেশনকে তো বিনামূল্যে পানি, বিদ্যুৎ দেয়া হচ্ছে না। তাহলে তাদের পৌরকর পরিশোধ করা হবে না কেন?
চসিকের রাজস্ব শাখা সূত্রে জানা গেছে, নগরে এক হাজার ৫১৬টি সরকারি হোল্ডিং আছে। এসব হোল্ডিংয়ের বিপরীতে চলতি ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে পৌরকর ধার্য করা হয়েছে ৫৬ কোটি ৫৯ লাখ ৮৭ হাজার ৬৮ টাকা। ইতোমধ্যে ৩৭ কোটি ৭ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬ হাজার ৫৬৩ টাকা আদায় হয়েছে। অর্থাৎ এখনো বকেয়া আছে ১৯ কোটি ৫২ লাখ ২০ হাজার ৫০৫ টাকা। এছাড়া ২০১৯-২০২০ অর্থ বছর পর্যন্ত বিগত সময়ের বকেয়া ছিল ১০৩ কোটি ৯০ লাখ ১০ হাজার ২৮১ টাকা। এর মধ্যে চসিক আদায় করতে পেরেছে মাত্র ২২ কোটি ৪৪ লাখ ৪৫ হাজার ১৭২ টাকা। অর্থাৎ পূর্বের অর্থ বছরের ৮১ কোটি ৪৫ লাখ ৬৫ হাজার ১০৯ টাকা এখনো বকেয়া আছে। সবমিলিয়ে পৌরকর খাতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে চসিকের পাওনা ১০০ কোটি ৯৭ লাখ ৮৫ হাজার ৬১৪ টাকা!
চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্র্তা মো. মুফিদুল আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, স্থানীয় সরকার সচিবের সঙ্গে পৌরকর নিয়ে কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, আবারো মন্ত্রণালয়ে লিখতে। আশা করি, এবার একটা সমাধান হবে।
জানা গেছে, চসিকের নিজস্ব আয়ের মূল উৎস পৌরকর। সিটি কর্পোরেশন অ্যাক্ট ২০০৯ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতেই চসিক মোট ১৭ শতাংশ পৌরকর আদায় করে থাকে। এর মধ্যে ৭ শতাংশ হোল্ডিং ট্যাঙ (গৃহকর), ৩ শতাংশ বিদ্যুতায়ন রেইট এবং ৭ শতাংশ আর্বজনা অপসারণ রেইট রয়েছে। নগরবাসীর সার্বিক সেবা প্রদান নিশ্চিতকল্পে সিটি কর্পোরেশনে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি পরিশোধ, নগরীর আবর্জনা অপসারণ, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতকরণ, সড়ক আলোকায়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ইত্যাদি বহুমুখী কর্মকাণ্ডের সিংহভাগ ব্যয় পৌরকর থেকে নির্বাহ করা হয়।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, সরকারি প্রতিষ্ঠানের বকেয়া পৌরকর পরিশোধে প্রতিবছর মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয় সিটি কর্পোরেশন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে উপানুষ্ঠানিক পত্র দেন চসিকের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। এরআগে ২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি এবং ২ সেপ্টেম্বর তৎকালীন মেয়র ২৮ মন্ত্রণালয়ে উপানুষ্ঠানিক পত্র প্রেরণ করেন।